চিকিৎসকের ভুল ওষুধে মৃত্যুর দুয়ারে লড়ছে শিশু ইয়ামিন

চিকিৎসকের অজ্ঞতা ও অবহেলা

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা যখন প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার (পিইসিই) প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন চট্টগ্রাম নগরীতে ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী আইসিইউতে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। ভুল চিকিৎসা প্রদানে অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. সৈয়দ মোহাম্মদ জাফর হোসাইন রুমি চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার। তার চিকিৎসাপত্র ভুল প্রমাণিত হয়েছে সিনিয়র চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণ ও আলোচনায়।

সাড়ে ১২ বছরের ইয়ামিন চোখের যন্ত্রণা নিয়ে ৩১ অক্টোবর হালিশহরের ছোটপুল এলাকার খাজা ড্রাগ ফার্মেসিতে ডা. রুমির চেম্বারে যায়। রুমির হাতে চিকিৎসা নেওয়ার পর ইয়ামিনের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হয়।

ডা. রুমির দেওয়া চিকিৎসাপত্রের বিষয়ে ২ যুগেরও অধিক সময় চিকিৎসা সেবা দেওয়া অভিজ্ঞ এক চিকিৎসককে দেখালে তিনি ভ্রু কুঁচকে বলেন, ‘প্রেসক্রিপশনে তো কোন সমস্যা নিয়ে শিশু ইয়ামিন তার কাছে গিয়েছেন সেই বিষয়টি উল্লেখ করেননি। তিনি কোন রোগ নিরুপণ করেছেন সেটিরও উল্লেখ নেই তার চিকিৎসাপত্রে। তদুপরি নাপা ট্যাবলেট, নাপা সাপেজিটোরির পাশাপাশি দিয়েছে সিলভো-৫০০ মিলিগ্রামের ট্যাবলেট। সিলভো-৫০০ মিলিগ্রাম এই বয়সী শিশুর উপর প্রয়োগ করার কোন নিয়মই নেই। সিলভো প্রয়োগেই ইয়ামিনের কিডনিসহ বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে প্রভাব পড়েছে।’
সংবাদে নাম প্রকাশ করার অনুমতি চাইলে তিনি বলেন, ‘স্বনামে বললে এখানে টেকা দায় হবে।’

শিশু মোহাম্মদ ইয়ামিন চন্দনাইশের ইয়াকুব আলীর পুত্র। সে এবার একটি প্রাইভেট স্কুল থেকে পিইসিই দেওয়ার কথাছিল। পরীক্ষার পরিবর্তে ইয়ামিন জীবন বাঁচানোর যুদ্ধে লড়ছে রাজধানীর এপোলো হাসপাতালে।

ইয়ামিনের জেঠার স্ত্রী চন্দনাইশ উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম জজ কোর্টের সহকারী কৌঁসুলি (এপিপি) অ্যাডভোকেট কামেল খান রুপা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘৩১ অক্টোবর সন্ধ্যায় ইয়ামিন প্রাইভেট পড়ার সময় চোখে যন্ত্রণা শুরু হয়। প্রাইভেট না পড়ে বাসায় ফিরে আসে। আমার দেবর ইয়াকুব আলী তাকে ছোটপুল এলাকায় ডা. রুমির চেম্বারে নিয়ে যান। চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধ সেবনের পরপরই ইয়ামিনের অবস্থা খারাপ হতে থাকে। পরদিনই তাকে আগ্রাবাদ মা ও শিশু জেনারেল হাসাপাতালে ভর্তি করাই। মা ও শিশু হাসপাতালে তিনদিনে তার অবস্থার পরিবর্তন না হলে আমরা ঢাকা এপোলোতে নিয়ে যাই।

চিকিৎসকদের বরাতে সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী দাবি করেন, ইয়ামিনের কিডনি ডায়ালাইসিস চলছে। পাশাপাশি লিভার, চোখ, স্কিনের চিকিৎসাও চলছে। তবে ইয়ামিনের অবস্থা শঙ্কামুক্ত নয় বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

তিনি আরো জানান, এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে হালিশহর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

অভিযোগের ব্যাপারে হালিশহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবায়দুল হক বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. নুরুল হক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন,‘শিশু ইয়ামিন ডা. রুমির চেম্বারে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। পরে আমাদের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। আমরা আইসিইউতে রেখে তার সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। ৪ নভেম্বর পরিবার তাকে ঢাকা নিয়ে যায়।’

উল্লেখ্য,ভুল চিকিৎসা প্রদানে অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. সৈয়দ মোহাম্মদ জাফল হোসাইন রুমি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। এরপর তার চিকিৎসাপত্রে চার লাইন পিজিটি (পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনিং)— লিখেছেন নবজাতক, শিশু, শিশু স্নায়ুরোগ ও মেডিসিন। যা বাংলাদেশ সরকারের গেজেট অনুযায়ী দণ্ডনীয়।

এ ব্যাপারে কথা বলতে ডা. রুমির মুঠোফোনে ফোন করলে তিনি রিসিভ করে বলেন, ‘দেখুন, এ বিষয়ে কোন কমেন্ট করতে পারবো না, সরি ভাই সরি।’

এর আগে চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় সাংবাদিক কন্যা রাইফা খানের মৃত্যু হয়।

এফএম/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!