ভিড়ে ঠাসা কক্সবাজার সৈকত, করোনা ছড়ানোর আতঙ্কে স্থানীয়রা

হোটেল-মোটেল জোনও মানছে না স্বাস্থ্যবিধি

গত বছরের মার্চ মাস থেকে প্রায় দুই বছর পর্যটনপ্রেমীরা সেভাবে আসতে পারেননি পৃথিবীর বৃহত্তর সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে। সেই বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে সরকার। গত ১৯ আগস্ট থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত খুলে দেওয়ার কারণে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসছেন পর্যটকরা। কিন্তু দেখা গেছে, স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না পর্যটকদের বেশিরভাগই। এমনকি হোটেল-মোটেল জোনেও মানা হচ্ছে না ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি। পর্যটকদের এমন ভিড় দেখে স্থানীয়রা আতঙ্কে আছেন যে কোনো মুহূর্তে করোনার হটস্পটে পরিণত হতে পারে তাদের আবাসস্থল।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সৈকতে নামা সকলকে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। মাস্ক না পরলে গুণতে হবে জরিমানা। কিন্তু তারপরও পর্যটন নগরী কক্সবাজারে মাস্ক ব্যবহারে সচেতন নন স্থানীয় লোকজনসহ পর্যটকরা।

শুক্রবার সমুদ্র সৈকতে গিয়ে দেখা গেছে পর্যটকের ভীড়। মাস্ক ছাড়াই ঘোরাফেরা করছেন অসংখ্য পর্যটক। তাদের স্বাস্থবিধি মেনে চলার কোনো কিছুই নজরে আসেনি। সমুদ্রে নামার সময় টুরিস্ট পুলিশের একটি দল মাস্ক পরিধানে বাধ্য করলেও বালিয়াড়িতে গিয়ে তা খুলে ফেলে দিচ্ছে। এদিকে পর্যটন এলাকা কলাতলী ও সমুদ্র সৈকতে জেলা প্রশাসনের কোনো তদারকি চোখে পড়েনি প্রতিবেদকের।

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দীর্ঘ সময় ধরে স্থবির অবস্থায় ছিল কক্সবাজার পর্যটন এলাকা। পর্যটননগরী কক্সবাজার ১২০ কিলোমিটার সমুদ্র , পাহাড়, সবুজ অরণ্য— সবকিছু মিলিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কক্সবাজারে প্রতিদিন বেড়াতে আসে লাখো পর্যটক। করোনা মহামারির মধ্যেও সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ বিনোদন কেন্দ্রে উপচেপড়া ভিড় লেগেই আছে। প্রতিদিন সকাল থেকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয়দের পদচারণায় মুখর সৈকত। এছাড়াও মেরিন ড্রাইভ সড়ক, হিমছড়ি, দরিয়ানগর, ইনানীর পাথুরে সৈকত, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, রামুর বৌদ্ধ বিহারসহ জেলা পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে অসংখ্য পর্যটকদের ভিড়।

অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান টেকনাফের প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে প্রতিদিন যাচ্ছেন অন্তত ৩ হাজার পর্যটক। এসব পর্যটন কেন্দ্রে করোনা সংক্রমণ রোধে ট্যুরিস্টসহ প্রশাসন নানা ব্যবস্থা ও উদ্যোগের কথা জানালেও কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। সপ্তাহে শুক্রবার-শনিবার সরকারি ছুটি থাকার কারণে কক্সবাজারে পর্যটক বেড়ে দাঁড়ায় কয়েক লাখে। কিন্তু এই করোনাকালে অধিকাংশ লোকের মুখেই মাস্ক নেই। বেশিরভাগই মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি।

গত শুক্রবার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কলাতলী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট ও লাবণী পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে প্রচুর পর্যটকের সমাগম হয়েছে। কিন্তুু সমুদ্রে আসা অধিকাংশ পর্যটক মাস্ক ব্যবহার করছেনা। জেলা প্রশাসন যে শর্তে পর্যটন খাত খুলে দিয়েছিল, তা মানা হচ্ছে না। এতে করোনার দ্বিতীয় ধাপে করোনা রোগী বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যখাত সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে জেলা প্রশাসন শর্তসাপেক্ষে হোটেল-মোটেল চালু করার অনুমতি দিলেও হোটেল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। অধিকাংশ হোটেলে তাপমাত্রাই মাপা হয় না যন্ত্র থাকার পরেও।

তবে হোটেল রিগ্যাল প্যালেসের মালিক ফোরকান মাহমুদ বলছেন, প্রশাসনের সমস্ত নিয়ম মেনে আমরা হোটেল পরিচালনা করছি। আমরা নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে পর্যটকদের হোটেলে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছি।

সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে আসা কক্সবাজার শহরের স্থানীয় বাসিন্দা এসএম বেলাল জানান, অধিকাংশ পর্যটকদের মুখে মাস্ক নেই। মানছে না প্রশাসনের নির্দেশনা। করোনার দ্বিতীয় ধাপের বিষয়ে কড়াকড়ি থাকলেও সাগরপাড়ে তার কোনো বালাই নেই।

ঢাকার বাসিন্দা আরেফিন বলেছিলেন, ঢ়াকা থেকে আসার সময় বাস কর্তৃপক্ষ কোন্ ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানছে তা বুঝতেই পারলাম না। লোক তুলেছে আগের মতো। কোনো স্বাস্থ্যবিধি নাই। কক্সবাজারে এসে দেখি প্রচুর মানুষের ভিড়। এতো মানুষের ভিড় চিন্তাও করিনি। অনেকদিন বাড়িতে লকডাউনে থাকার কারণে আমি মাইন্ড রিফ্রেশ করতে এসেছি। পরিবারের অন্যরাও এসেছে। কিন্তু এসে ভয়ে দিন কাটাচ্ছি।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মামুনুর রশিদ জানান, করোনার সেকেন্ডওয়েভ মোকাবেলায় তাদের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। আবাসিক হোটেল মালিকদের সাথে বৈঠক করে তাদের করণীয় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপরও যারা নির্দেশনা অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রয়োজনে জেলা, জরিমানা করবে জেলা প্রশাসন। সেই সাথে মাস্ক না পরে সমুদ্র পাড়ে বেড়াতে আসা পর্যটকদের জরিমানা করেছে জেলা প্রশাসন। জরিমানার পাশাপাশি মাস্ক বিতরণও করা হচ্ছে। করোনা সতর্কতা সৃষ্টির জন্য কাজ করছে টুরিস্ট পুলিশও। অন্যদিকে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি দুই দফা বৈঠক করে করণীয় চূড়ান্ত করেছে।

জেলা প্রশাসক জানান, করোনা সতর্কতা সৃষ্টিতে জেলাব্যাপী মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সমন্বয়ে গঠিত টিম প্রতিদিন মাঠে যাচ্ছে। একইভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসাররাও কাজ করছেন। তবে প্রশাসনের কড়াকড়ির পরেও জনসমাগম কোনমতেই কমছে না। বেশিরভাগ মানুষ মাস্কবিহীন চলাফেরা করছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!