ভারতে সাজা খেটে ফিরলো চট্টগ্রামের দুজনসহ ৩০ কিশোর-কিশোরী

ভারতের কারাগারে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ করার পর বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে ৩০ বাংলাদেশিকে। এর মধ্যে দুজন চট্টগ্রামের। দুজনই ১৩ ও ১৪ বছরের কিশোর-কিশোরী। অন্যদের মতো তাদেরও ভালো কাজের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন সীমান্ত পথে অবৈধভাবে ভারতে পাচার হয়েছিল। খুব ছোটবেলায় পাচারকারী চক্রের মাধ্যমে পাচার হয়ে ভারতে যায় এরা। এখন এরা বয়সে অনেক বড় হয়ে গেছেন। তাই তাদেরকে বাবা-মা, ভাই-বোন চিনতে পারবেন কি-না আশঙ্কা করছে বিভিন্ন এনজিওর প্রতিনিধিরা।

শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) নিজ নিজ পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ বাংলাদেশের বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে তাদের হস্তান্তর করে।

এরা বিভিন্ন সময়ে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে ভারতে পাচার হয়ে যায়। পরে সেখানে পুলিশের হাতে আটক হলে তাদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। সাজা শেষে দুই দেশের সরকারের দেওয়া বিশেষ ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যমে তারা দেশে ফিরে এলো।

ভারতে সাজা খেটে ফিরলো চট্টগ্রামের দুজনসহ ৩০ কিশোর-কিশোরী 1

ফেরত আসা এই সব শিশু-কিশোরকে মহিলা আইনজীবী সমিতি, মানবাধিকার সংস্থা যশোর রাইটসসহ কয়েকটি এনজিও গ্রহণ করেছে। এনজিওগুলো শুরুতে তাদের নিজস্ব শেল্টার হোমে রাখবে এসব শিশু-কিশোরীকে। পরে তাদের অভিভাবক নিশ্চিত করে নিজ নিজ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

ফেরত আসা বাংলাদেশিদের মধ্যে চট্টগ্রামের দুজন হল— চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকার উম্মে কুলসুম (১৩), চট্টগ্রামের খানদোলার বাজার এলাকার ইব্রাহীম শেখ (১৪)।

ফেরত আসা অন্য বাংলাদেশিরা হলেন— নওগাঁর কাথাপুকুর গ্রামের জহির আলীর ছেলে শহিদ (১৪), চাঁপাইনবাবগঞ্জের গাইপাড়া গ্রামের নাইমুল হকের ছেলে মিলন (১৪), পিরোজপুরের লক্ষনা নতুনপাড়ার শাহিন তালুকদারের ছেলে সাব্বির তালুকদার (১২), ঠাকুরগাঁওয়ের বস্তপুর গ্রামের শুনিল রায়ের ছেলে বিপ্লব রায় (১৪), পাবনার বনগা বাড়ী গ্রামের তাহের আলীর মেয়ে মাহফুজা খাতুন (১৫), সাতক্ষীরার চম্পাপুর গ্রামের বাবুল সরদারের মেয়ে চুমকি খাতুন (১৪), রাজশাহীর গোপীনাথপুর গ্রামের আবুল কালামের মেয়ে লাবনী আক্তার (১৬), গোপালগঞ্জের খোলাথিয়া গ্রামের মুজিবর সিকদারের মেয়ে শাপলা সিকদার (১৬), খুলনার উত্তর মোকামপুর গ্রামের অহিদুলের মেয়ে নীলা খাতুন (১২), খুলনার তেরখাদা গ্রামের আব্দুর রশিদের মেয়ে জুমিনি আক্তার (১৬) ও পারহাজি গ্রামের মুক্তার শেখের মেয়ে সায়রা খাতুন (১৯), জয়পুরহাটের ভিমপুর গ্রামের কালু শেখের মেয়ে কাকলী (১৬), মাগুরার খাসিয়ারা গ্রামের ইলিয়াছের মেয়ে আরুফা খাতুন (৩৫) ও একই এলাকার কালামিয়া মুন্সীর মেয়ে দিলারা (২২), আব্দুস সালামের মেয়ে জান্নাত আরা (৭), রিয়া আক্তার (১৪), সেলিম মিয়ার মেয়ে সাদিয়া আক্তার (১৬), মিনারা আক্তার (১৮), সালামের মেয়ে রুখসানা আক্তার (৫), ছেলে মো. সামি (৩), ঢাকার নাখালপাড়া এলাকার মমিন হোসেনের মেয়ে মুক্তা আক্তার (১৭), বাগেরহাটের পাথামারা গ্রামের আসলাম খানের মেয়ে তামান্না আক্তার খুশবু (১৭), বাগেরহাটের মাদারপাড়া গ্রামের হুমায়ুন কবিরের মেয়ে হুমাইরা খাতুন (১২), দিনাজপুরের মধ্য বাসুদেবপুর গ্রামের শফি আহমেদের ছেলে আমেদ আলী (১৪), নারায়ণগঞ্জের খাগানদা গ্রামের আলম মিয়ার ছেলে নুর ইসলাম (১৩), খুলনার তিপনা গ্রামের রবিন অধিকারীর ছেলে আকাশ অধিকারী (১৩) ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মল্লিকপুর গ্রামের প্রতাপ ঘোষের ছেলে প্রকাশ ঘোষ (১৬)।

বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির এরিয়া কো-অর্ডিনেটর রেখা রানী বলেন, ‘এরা বিভিন্ন সময়ে পাচারকারীদের অপকৌশলের শিকার হয়ে ভারতে পাচার হয়। পরে সেখানে পুলিশের কাছে আটক হয়ে বিভিন্ন মেয়াদে জেল খাটে। সেখান থেকে সেদেশের বেসরকারি এনজিও সংস্থা তাদেরকে ছাড়িয়ে নিয়ে শেল্টার হোমে রাখে। অবশেষে দুদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি চালাচালির একপর্যায়ে বিশেষ ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যমে তারা দেশে ফেরত আসে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!