ভারতের মোহনবাগানকে হারিয়ে লাওসের ইয়াং এলিফ্যান্টসের চমক

শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ

খেলার শেষ বাঁশি বাজার ৩ মিনিট আগে ভারতের মোহনবাগানের একটি সংঘবদ্ধ আক্রমণ। ওয়ান টু ওয়ান পাশ খেলে ঢুকে পড়ে ইয়াং এলিফ্যান্টসের ডি বক্সের ভেতর। গোলমুখে শট নেয়ার পূর্ব মুহুর্তে অবৈধভাবে বাঁধা দিয়ে মোহনবাগানের জুলেনকে ফেলে দেন ইয়াং এলিফ্যান্টসের অধিনায়ক ভান্না। রেফারি পেনাল্টির নির্দেশ দেয়ার পাশাপাশি সরাসরি লাল কার্ড দেখান ভান্নাকে। পেনাল্টি থেকে গোল করতে পারলে অনেকটা জয় নিশ্চিত, এই অবস্থায় পেনাল্টি কিক নিতে আসেন জোসেবা কর্তা। কিন্তু তার শটটি ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক জায়সাভাথ। তার ঠেকিয়ে দেয়া বল নিয়েই কাউন্টারে অ্যাটাকে মোহনবাগোনের বিপদসীমায় চলে আসে ইয়াং এলিফ্যান্টসের হয়ে দুর্দান্ত খেলা সমজে কিউহানাম। সতীর্থ থিনোলাথের মাটি কামড়ানো ক্রসে দারুণ এক প্লেসিংয়ে মোহনবাগান গোলরক্ষককে দ্বিতীয়বারের মতো বোকা বানিয়ে জোড়া গোলের সঙ্গে দলেরও জয় আদায় করে নেন এই ফরোয়ার্ড।

পেনাল্টি স্পট থেকে গোললাইন বিশ্বের সব চেয়ে রহস্যময় সরণী। সেখানেই থেমে গেলেন স্পেনীয় তারকা বেইতিয়া। তাঁর নির্বিষ শট সহজেই থামিয়ে দেন ইয়ং এলিফ্যান্টসের গোলকিপার। বেইতিয়া পেনাল্টি নষ্ট করার ঠিক পরের মুহূর্তেই সমজে ২-১ করেন। সেই গোল আর শোধ করতে পারেননি কিবু ভিকুনার ছেলেরা। গোল করার মতো পরিস্থিতিও তৈরি করতে পারেনি মোহনবাগান। আর তাতে করে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপের তৃতীয় আসরের যাত্রা শুরু হলো হার দিয়ে।

এর আগে খেলার ১৮ মিনিটে বেইতিয়ার কর্নার থেকে মাথা ছুঁইয়ে জুলেন প্রথমে এগিয়ে দিয়েছিলেন মোহনবাগানকে। প্রথমার্ধের প্রায় শেষের দিকে ৪৪ মিনিটের সময় ইয়াং এলিফ্যান্টসকে সমতায় ফেরান সমজে কিউহানাম। প্রায় মাঝ মাঠ থেকে বল নিয়ে আক্রমণে উঠে যান ছানতাছোনে থিনোলাথ। বল বাড়িয়ে দেন ফরোয়ার্ড সমজে কিউহানামের দিকে। তরুণ এ ফরোয়ার্ড দেখিয়েছেন দারুণ এক খেল। মোহনবাগানের দুই খেলোয়াড়কে বোকা বানিয়ে গোলরক্ষক পাশ দিয়ে বল জড়িয়ে দেন জালে। খেলায় ফিরে সমতা।

দ্বিতীয়ার্ধে দুদলই আক্রমণাত্নক ফুটবল খেলে। একের পর এক আক্রমণ করে ব্যতিব্যস্ত করে রাখে ডিফেন্ডারদেরকে। বেশ কয়েকবার গোলরক্ষককেও ভালো পরীক্ষায় ফেলেন। ম্যাচ তখন পেন্ডুলামের মতো দুলছে দু’ দিকে। খেলার ফল ১-১। টুর্নামেন্টের অন্যতম শিরোপার দাবীদ্বার শতবছরের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মোহনবাগানের খেলার চেয়ে প্রায় নবীন এক দল ইয়াং এলিফ্যান্টসের খেলা অনেক বেশি গোছানো ছিল। অতিরিক্ত সময়সহ শেষ মিনিট দশেক তারা খেলেছেও দশজন নিয়ে। তবুও পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় শক্তিশালী মোহনবাগানকে।

শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী এক ক্লাব বনাম মাত্র চার বছর আগে গড়া এক দলের লড়াই। সময়কাল আর অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ মোহনবাগানের কাছে উড়ে যাওয়ারই কথা কচি-কাঁচাদের নিয়ে সাজানো ইয়ং এলিফেন্টসের! কিন্তু ছোট মরিচে কী যে ঝাল সেটাই যেন টের পেল পশ্চিমবঙ্গের জায়ান্টরা। তরুণদের নিয়ে সাজানো লাওসের ক্লাবের কাছে হেরে গেল তারা। পাঁচ স্প্যানিশসহ মোট ছয় বিদেশি নিয়ে সাজানো মোহনবাগান শেখ কামাল আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের তৃতীয় আসরে অন্যতম ফেভারিট। অন্যদিক কোনো বিদেশি ছাড়াই একদম তরুণদের নিয়ে প্রথমবারের মতো কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলতে এসেছে এলিফেন্টস।

এরচেয়ে বড় আশ্চর্যের বিষয় স্টেডিয়ামে উপস্থিত হাজারখানিক দর্শক গলা ফাটিয়ে সাপোর্ট দিয়ে গেছে লাওসের ইয়াং এলিফ্যান্টস দলকে। অথচ হওয়ার কথা ছিল প্রতিবেশি পশ্চিবঙ্গের মোহনবাগানকে সাপোর্ট করা।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!