ভারতীয় চ্যানেল ও বাংলাদেশী বিজ্ঞাপন

ভারতীয় চ্যানেল ও বাংলাদেশী বিজ্ঞাপন 1চৌধুরী মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম : ভারতীয় চ্যানেল ও সিরিয়াল গুলোর প্রতি আমাদের দেশের দর্শকেরা বিশেষত: নারীরা এতই আসক্ত হয়ে পড়েছে যে সিরিয়ালগুলোর নামে ঈদ উৎসবে পোষাকেরও নামকরণ করা হয় । আর সেই পোষাকগুলো কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়তে হয় ক্রেতাদের। পাখি ড্রেস কিনতে না পারার ঘটনায় আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে অনেক। এই সিরিয়ালগুলো দেখার সময় মহিলারা এতই মগ্ন হয়ে পড়ে যে ঘরে আগুন ধরে পুঁড়ে ছাই হয়ে গেলে কিংবা ছোট্ট বাচ্চা পানিতে পড়ে মরে গেলেও হুশ ফিরেনা। কতইনা গভীর মগ্নতা। বছরের পর বছর চলা এই রেলছুট সিরিয়ালগুলোর কোন নির্দিষ্ট বিষয় না থাকলেও আমাদের দেশে যতটা জনপ্রিয় তাদের নিজ দেশে তার ছিটেফোঁটাও জনপ্রিয়তা নেই। এসব সিরিয়ালগুলোতে দেখানো হয় কিভাবে বউ শ্বাশুড়ীকে,শ্বাশুড়ী বউকে, জা-জাকে, ননদ ভাবীকে, ভাবী ননদকে, দেবর ভাবীকে, ভাবীকে দেবর বিপদে ফেলা যায় কিংবা মেরে ফেলা যায়। অথবা তরকারীতে লবন বেশী দিয়ে অন্যকে কিভাবে বকা খাওয়ানো যায়। এসব কূটচালগুলো এমন সক্ষ ও জীবন্তের মত করে দেখানো হয় যা আমাদের দেশের দর্শকদের পুরো মগজ ধোলাই হয়ে যায় । এবং সে সব কূটবুদ্বি বাস্তব জীবনে অনুসরণের ফলে সমাজে, পরিবারে, নেমে আসে অশান্তি। যা আমরা ইতিমধ্যে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। এসব সিরিয়াল গুলোর বাজে প্রভাব সমাজে পড়ার কারণে দেখা দিয়েছে নানা রকম অশান্তি। সমাজের সচেতন রুচিশীল মানুষের মনে সেসব রেলছুট সিরিয়াল গুলোর উপর ক্ষোভ জমে উঠে। এসব রেলছুট সস্তা বিষয়ের সিরিয়ালগুলো বন্ধের জন্য দেশে প্রতিবাদ উঠলেও সরকার তাতে কান দেয়নি। যে সব ঘঁন, সংস্কৃতি আমাদের সাথে যায়না তা দেখে কেন আমাদের সমাজে অশান্তি ডেকে আনব। আর এসব ভারতীয় চ্যানেল, সিরিয়ালের আগ্রাসনের কারণে দেশের টিভি চ্যানেল, নাটক,বিজ্ঞাপন মালিক,নির্মাতারা পড়েন অস্তিত্ত্ব সংকটে। দেশী চ্যানেল গুলোর মালিকরা নিজেদের সন্তানতুল্য চ্যানেলকে বাঁচিয়ে রাখতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বাংলাদেশে সম্প্রচারিত বিদেশী চ্যানেলের বাংলাদেশ ফিডে দেশী বিজ্ঞাপন প্রচারের ফলে বাংলাদেশী চ্যানেলগুলোর বাজার সংকুচিত হয়ে আসছে। সংকুচিত বাজারে বিজ্ঞাপন নির্মাণ প্রতিষ্টানগুলো পড়েছে চরম সংকটে । ফলে ও বাংলাদেশে সম্প্রচারিত বিদেশী চ্যানেলের বাংলাদেশ ফিডে দেশী বিজ্ঞাপন প্রচার ও ডাবকৃত অনুষ্টান সম্প্রচার বন্ধে বেসরকারি টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন ( অ্যাটকো) ও মিডিয়া সংশ্লিষ্ট সংগঠন মিডিয়া ইউনিট আন্দোলনেও নামে। সমাবেশের মাধ্যমে তাদেঁর দাবীগুলো তথ্যমন্ত্রনালয় সহ সংশিষ্ট মন্ত্রনালয়ের দৃষ্টি আকর্ষন করেন। অবশেষে কোটি টাকার মামলা ও প্রত্যাহার ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের ফলে বাংলাদেশে সম্প্রচারিত বিদেশী চ্যানেলের বাংলাদেশ ফিডে দেশী বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। যা বাংলাদেশের বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল ও সংশ্লিষ্ট সবার জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। আমাদের দেশের নাটক, বিজ্ঞাপন, সিনেমা অত্যন্ত সরস ও সমৃদ্ব । এসব নাটক ,সিনেমাতে উঠে আসে আমাদের চারপাশের ঘটে যাওয়া সুখ ,দুঃখের ঘটনাগুলো। যা দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতেও সুনাম বয়ে আনছে। তবে, ইদানিং কিছু সল্প বাজেটের সস্তা চিত্রনাট্য ও সংলাপের নাটক কারণে আমাদের দেশের নাটকের মান কমিয়ে দিচ্ছে। আমাদের দেশে যেভাবে ভারতীয় চ্যানেলের আগ্রাসন চলছে তাতে নাটক নির্মাতারা নাটক নির্মাণে সাহস পাচ্ছেনা। যে টাকা বিনিয়োগ করবে তা তুলে আনা কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে। ভারতীয় চ্যানেল ও রেলছুট সিরিয়াল গুলো বাংলাদেশে সম্প্রচার হলেও বাংলাদেশী কোন চ্যানেল ভারতে সম্প্রচার হয়না। বাংলাদেশী চ্যানেল গুলো ভারতীয় চ্যানেল গুলার সাথে অসম প্রতিযোগীতায় পড়ে। বাংলাদেশর শিল্প,সংস্কৃতি,অর্থনীতি, সমাজ বাঁচাতে অচিরেই আমাদের দেশে এই চ্যানেল গুলো প্রচার বন্ধ অত্যন্ত জরুরী।
লেখক : সাংবাদিক
সধযনঁন১২৫৩৪@মসধরষ.পড়স

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!