‘ভারটেক্স গ্রুপের দাপট’ জমি দখলে মরিয়া, রাতের আঁধারে কেটে নিল গাছ

২৫ বছর ধরে আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনার উঠা-নামা কাজে নিয়োজিত ভারটেক্স অফ-ডক লজিস্টিক সার্ভিসেস লিমিটেড। বর্তমানে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কাজের চাপ বাড়ায় জায়গার প্রয়োজন হয়ে পড়ে তাদের। ফলে বাড়তি জায়গার প্রয়োজন মেটাতে ডিপোর আশপাশের স্থানীয়দের জিম্মি করে বাড়িঘর ও কৃষি জমি দখলের মহোৎসবে মেতেছে এই কোম্পানি। তাদের ডিপোর বাইরে আদালতে বিচারাধীন থাকা জমিতে প্রায় ২৫ ফুট উচ্চতায় নির্মাণ করছে সীমানা প্রাচীর।

সম্প্রতি ভারটেক্স অফ-ডক লজিস্টিক সার্ভিসেস লি. কর্তৃপক্ষ জমি দখল নিতে মধ্য রাতে আব্দুল ওয়াদুদ নামের এক স্থানীয় ব্যক্তির প্রায় বিশটির অধিক গাছ কেটে সাবাড় করে দিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। ঘটনার পরপরই ওই ভূক্তভোগী এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক জাতীয় নাগরিক সেবার হটলাইন ৯৯৯-এ কল করলে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসেই তার সত্যতা পেয়েছে।

এছাড়াও গত ১ মার্চ রাত আনুমানিক ২টার দিকে গাছ কাটার বিষয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেন চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানার উত্তর পতেঙ্গা পূর্ব কাটগড় মো. আব্দুল ওয়াদুদের পুত্র মো. মাসুদ চৌধুরী তসলিম।

চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি মো. আব্দুল ওয়াদুদের মালিকানাধীন জায়গায় স্থিতি বজায় রাখতে ১৪৫ ধারা জারি করেছে চট্টগ্রাম মহানগরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। এ মামলায় বিবাদি করা হয়েছে ভারটেক্স অফ-ডক লজিস্টিক সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমরান নুর ফাহিমকে।

একাধিক স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ২৫ বছর আগে তথ্য গোপন করে কৃষি জমি কেনা শুরু করে এ ডিপোর কার্যক্রম। কেনার পর ডিপোর চারপাশে সীমানা প্রাচীর করা হয়। সম্প্রতি স্থানীয়দের জমি দখল করে চালানো হচ্ছে জবরদখল। কৃষি জমিতে ইন্ডাস্ট্রি করা যায় কিনা সরকারের কাছে এই প্রশ্ন স্থানীয়দের।

তারা আরও বলেন, ডিপোর কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করার সময়ে রাতের বেলায় শব্দ দুষণে ঘুমাতে পারে না স্থানীয়রা। শুধু তাই নয়, পানি চলাচলের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষা মৌসুমে ডিপোর পানিতে আশপাশের বাড়িঘর প্লাবিত হয়ে যায়। প্রতিবছর বর্ষায় প্রায় দুইশতাধিক লোকজন পানিবন্দি হয়ে পড়ে। সামনে আসছে বর্ষার মৌসুম। দ্রুত কোনো পদক্ষেপ না নিলে আবারও পানি বন্দি হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ভারটেক্স অফ-ডক লজিস্টিক সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইমরান নুর ফাহিম বলেন, গাছ কারা কেটেছে তার চেয়ে বড় কথা আমরা কারও জায়গায় মাটি ফেলছি না। আমার নিজস্ব পুকুরে মাটি ফেলা হচ্ছে। সেখানে আমার সীমানা প্রাচীরের কাজ চলছে।

এ বিষয়ে পতেঙ্গা থানার ওসি জোবাইর সৈয়দ বলেন, মধ্যরাতে গাছ কাটা বিষয়ে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে ভূক্তভোগীর পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ পেয়েছি। এর আগেও ভারটেক্স ডিপোর লোকজন অন্যায়ভাবে ফারুক হাজী বাড়ির দেওয়াল ভেঙ্গে ফেলেছিল। তাৎক্ষণিক বিষয়টি আমলে নিয়ে পরে ওই দেওয়ালটি তাদের মাধ্যমে পুনরায় সংস্কার করে দেওয়া হয়। কাছ কাটার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সম্প্রতি ডিপোর পাশে একটি বসত ঘরের দেওয়াল ভেঙ্গে দেওয়ার অভিযোগের পর পুলিশের হস্তক্ষেপে ওই দেওয়াল পরে সংস্কার করে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কোনও মন্তব্য করেননি ইমরান নুর ফাহিম। এছাড়া ডিপোর কন্টেইনার হ্যান্ডলিং রাতে শব্দ দুষণের ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে অন্য তিনি প্রসঙ্গে টেনে বক্তব্যে শেষ করেন।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রামে প্রথম এই শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৯৮ সালে এই শিল্প স্থাপনে নিয়মকানুন জারি করা হয়। শুরুর দিকে খালি কন্টেইনার সংরক্ষণাগার হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও পর্যায়ক্রমে বেসরকারি ডিপোর কাজের পরিধি বাড়তে থাকে। বর্তমানে চট্টগ্রামের মোট ১৭টি কন্টেইনার ডিপোর কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!