ভাঙনের মুখে বাঁকখালী নদী, আতংকে হাজারো মানুষ

ভাঙন দেখা দিয়েছে কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে। বর্ষা মৌসুম পুরোদমে শুরু হলে এর মাত্রা বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এতে করে আতংকে দিন কাটাচ্ছে ওইসব এলাকার হাজারো মানুষ। বিশেষকরে সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের চাঁন্দেরপাড়া গ্রাম পয়েন্টে বাঁকখালী নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। নদীর ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে ওই এলাকার অর্ধশত বসতবাড়ি।

এদিকে ইতোমধ্যে ৩০টির মতো বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে বাঁকখালী নদীর গর্ভে। বর্ষা মৌসুম শুরু হতে না হতেই বাঁকখালী নদীর ভাঙন যেহারে রূপ নিচ্ছে বর্ষা মৌসুম পুরোদমে শুরু হলে তা মারাত্মক রুপ নিতে পারে বলে আশংকা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ফলে আতংকে দিনাতিপাত করছে বাঁকখালী নদীর তীরবর্তী হাজার হাজার মানুষ।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুুমে বাঁকখালী নদীর ভাঙনের কারণে যেমনি এলাকার আয়তন কমে আসছে তেমনি ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে নদী তীরবর্তী বসবাসকারী বাসিন্দারা।
এদিকে গত শুক্রবার এলাকাবাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে নদী ভাঙন এলাকা পরিদর্শনে যান সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম মাহফুজুর রহমান।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শুধু চাঁন্দের পাড়া নয়, ঝিলংজা ইউনিয়নের বাঁকখালী নদীর ঝিলংজা ইউনিয়নের পশ্চিম মোক্তারকুল, পূর্ব মোক্তার কুল, দক্ষিণ খরুলিয়া, দরগাহ পাড়াসহ বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। কথা হয় এলাকার কয়েকজন ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সঙ্গে।
নদীর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত বৃদ্ধা আলতাজ মিয়া বলেন, ‘গতবছর থেকে বাঁকখালী নদী ভাঙনে আমার বসতঘরটি চার ভাগের তিনভাগ স্থাপনা নদীতে চলে গেছে। ৩০ শতক জায়গাজুড়ে বাড়ি ছিল। এখন সেটি শূন্য শতকে এসে দাঁড়িয়েছে। একই সুরে কথা বলেন আরেক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি আব্দুস ছালাম। তিনি বলেন, তার পুরো ভিটেই বাঁকখালী নদীর গর্ভে চলে গেছে। বর্তমানে স্ত্রী, ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কষ্ট করে ভাড়া বাসায় দিন কাটাচ্ছেন।

চাঁন্দেরপাড়ার বাসিন্দা অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী বলেন, নদীর ভাঙনে গত কয়েক বছরে আমাদের ৩০টির বেশি বসতবাড়ি নদী গর্ভে হারিয়েছি। বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা আসে-যাই কিন্তু কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। তিনি আরও বলেন, এই বর্ষা মৌসুমে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাগণ জরুরিভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে যে কটি বসতবাড়ি আছে, তাও নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা করা সম্ভব।

ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান বাঁকখালী নদীর ভাঙনে বসতবাড়ি বিলীন হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, প্রতি বছর শুধু চাঁন্দেরপাড়া নয় তার ইউনিয়নের একাধিক এলাকার বাঁকখালী নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে। নদী ভাঙনের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ইউনিয়নের পরিষদের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়ে চেয়ারম্যান টিপু সুলতান বলেন, বাঁকখালী নদী ভাঙনের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার অবহিত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস ছাড়া আর কোনো কিছুই করছেন না।
তিনি বলেন, যদি শীঘ্রই ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয় তাহলে তীব্র আকার ধারণ করতে পারে বাঁকখালীর এই ভাঙন।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম মাহফুজুর রহমান বলেন, নদী ভাঙনের বিষয়টি আমাকে এলাকার লোকজন অবহিত করার পর গত (২১ জুন) সরেজমিনে আমি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। বর্ষা মৌসুমে যাতে বাঁকখালী নদীর ভাঙন রোধ করা যায় সেজন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!