ভর্তি ও পুনঃভর্তির নামে পকেট কাটছে চট্টগ্রামের স্কুলগুলো

ঘর থেকে পা বাড়ালেই চোখে পড়বে কোনো না কোনো বাংলা, নয়তো ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। এসব স্কুল সারাবছরই নানান অজুহাতে ফি নিলেও নতুন বছর এলে অভিভাবকদের পকেট কাটার ধুম লেগে যায় ভর্তি উৎসবের নামে। টাকার পরিমাণও যেনতেন নয়। এক শ্রেণি থেকে আরেক শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েও নতুন করে পুনরায় ভর্তি হতে হয়। এমন অবস্থায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় কঠোর নির্দেশনা জারি করলেও হাতেগোণা কিছু প্রতিষ্ঠানই কেবল ওই নির্দেশনা মানছে। বেশিরভারগই এর তোয়াক্কাই করছে না।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়, বেসরকারি স্কুল ভর্তি সংক্রান্ত নীতিমালা অনুযায়ী ভর্তির ক্ষেত্রে চট্টগ্রামসহ অন্যান্য মহানগরগুলোতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তিন হাজার টাকার বেশি নিতে পারবে না বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়া এক শ্রেণি থেকে আরেক শ্রেণিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও পুনঃভর্তি ফি নেওয়া যাবে না। অন্যান্য মহানগরের পাশাপাশি চট্টগ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো উন্নয়ন ফি খাতেও কোনো অর্থ নিতে পারবে না শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে।

তবে এ চিত্র কেবল কাগজে-কলমেই। নগরীর বেশিরভাগ বেসরকারি স্কুল মানছে না এই নীতিমালা। একরকম নীতিমালা উপেক্ষা করে আদায় করছে কয়েক গুণ অতিরিক্ত অর্থ। আবার গুটিকয়েক স্কুল অবলম্বন করছে ভিন্ন কৌশল। নতুন ভর্তির ক্ষেত্রে বিবিধ খাত উল্লেখ করে তিন হাজারের কয়েক গুণ বেশি টাকা নিচ্ছে। আবার নতুন শ্রেণিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও পুনঃভর্তির জায়গা ফাঁকা রেখে নিচ্ছে সেশন ফি, আবার এর সাথে বিবিধ অন্যান্য ফি। যা নতুন ভর্তির টাকার চেয়ে কম নয়। ভর্তি আর পুনঃভর্তির এই ডাকাতির খেলায় জিম্মি শিক্ষার্থী আর অসহায় অভিভাবকরা।

এদিকে নগরীতে বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৪৩ এবং যার মধ্যে ১০৭টি এমপিওভুক্ত। অনুমোদনহীন কিন্ডারগার্টেন স্কুলের সংখ্যা ৯৭২টি। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নিয়ন্ত্রিত স্কুল ৪৭টি। অপরদিকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের সংখ্যা জানা নেই কারোরই। যার ফলে নীতিমালা প্রণয়ন হলে তদারকি নেই এবং একই সাথে মানছে না কেউই।

এছাড়া, কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জানুয়ারিতে ভর্তি ফি ৩ হাজার নিলেও কয়েক মাস পর পে স্লিপ দিয়ে পুনরায় ভর্তি ফি নিবে। এছাড়া সেশন ফি, উন্নয়ন ফি,অন্যান্য বিবিধ ফি দেখিয়ে আদায় করছে অতিরিক্ত অর্থ। অনেক স্কুলে আবার শিক্ষার্থীর বই-খাতা ও স্কুলড্রেস স্কুল থেকে নেয়ার জন্য বাধ্য করা হয়। এদিকে, মন্ত্রণালয়ের কোনোরুপ তদারকি না থাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ইচ্ছে মত টাকা আদায় করছে— এমন অভিযোগ অভিভাবকদের।

অন্যদিকে, মন্ত্রণালয় থেকে ভর্তি আর পুনঃ ভর্তিতে বাড়তি টাকা আদায়ে নিষেধাজ্ঞা জারির পর নতুন নাম ‘সেশন ফি’ বাবদ শিক্ষার্থীদের থেকে আদায় করছে বাড়তি টাকা। এসব স্কুলে শ্রেণিভেদে টাকার পরিমাণ নীতিমালার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।

ভর্তি ও পুনঃভর্তিতে কোন্ স্কুল কতো নিচ্ছে?
চট্টগ্রাম নগরীর কাজেম আলী হাই স্কুলের নতুন ভর্তি ৩ হাজার ৭০০ এবং পুনঃভর্তি ৪ হাজার টাকা, অংকুর সোসাইটি স্কুলে নতুন ভর্তি ৬ হাজার ৩০০ এবং পুনঃভর্তি ৩ হাজার ৯৬০, বাংলাদেশ মহিলা সমিতি উচ্চ বিদ্যালয় ৩ হাজার ৪৫০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। এ জি চার্চ স্কুলে ভর্তি ফি ৩ হাজার ৪০০ টাকা, অরবিট ক্যাডেট স্কুল এন্ড কলেজে ৪ হাজার ৯০০ টাকা, শাহ ওয়ালীউল্লাহ ইনস্টিটিউটে ৩ হাজার ৩২৫ টাকা, খাজা আজমেরী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩ হাজার ৮৭০ টাকা, সিডিএ পাবলিক স্কুলে ৪ হাজার, অর্কিড স্কুলে নতুন ভর্তি ৬ হাজার ৫০০ এবং পুনঃ ভর্তি ৭ হাজার ৫০০, বাকলিয়া আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পুনঃ ভর্তি ৩ হাজার ২০০ টাকা, মোস্তফা হাকিম স্কুলে পুনঃ ভর্তি ৩ হাজার ৯৯০ টাকা, চিটাগং রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে পুনঃভর্তি ৫ হাজার, চট্টগ্রাম ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজে পুনঃ ভর্তি ৫ হাজার ৫০০ টাকা, মির্জা আহমেদ ইস্পাহানি হাই স্কুলে ৭ হাজার ৫০০ টাকা।

এছাড়া, ভর্তি আর পুনঃভর্তির আরও ভয়াবহ চিত্র ইংরেজিমাধ্যম স্কুলগুলোতে। নীতিমালায় এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে পুনঃভর্তির ফি নেওয়া হয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। নতুন ভর্তি তারও বেশি।

সাউথপয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজে নতুন ভর্তি ৫০ হাজার, পুনঃ ভর্তি বইসহ ১৭ হাজার। পরবর্তীতে প্রতি মাসে পে স্লিপের মাধ্যমে ১০ হাজার করে ফি নেওয়া হয়। ক্যান্টনম্যান্ট পাবলিক স্কুলে পুনঃ ভর্তি ১১ হাজার, মির্জা আহমেদ ইস্পাহানি হাই স্কুলে (ইংলিশ ভার্সন) ১৬ হাজার, বেপজা স্কুলে ১০ হাজার টাকা, ভিক্টোরি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পুনঃভর্তি ৫ হাজার টাকা।

আবার মিশনারি স্কুলেও দেখা যায় একই চিত্র। পুনঃ ভর্তি/ সেশন ফি ৩ হাজার টাকা হলেও বিল্ডিং উন্নয়ন ফি বাবদ আরও ৩ হাজার টাকার পাশাপাশি বিবিধ খাত হিসেবে আরও কয়েক হাজার টাকাসহ নেওয়া হয় ১২ হাজার টাকা। এরকম ভাবে সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে সেশন ফি ৪ হাজার ৪৫০, সেন্ট প্ল্যাসিডস স্কুলে ৩ হাজার, সেন্ট স্কলাসস্টিকা স্কুলে ৪ হাজার ৫০০ টাকা। আবার এসব স্কুলে টাকা আদায়ের রশিদও দেয়া হয় না বলে অভিযোগ করছেন অভিভাবকরা।

আবার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নিয়ন্ত্রিত স্কুলগুলোতেও একইরকম ভাবে পুনঃভর্তি খাত না দেখালেও সেশন ফি বাবদ ৩ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। একইসাথে অন্যান্য বিবিধ খাতের ফি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে করপোরেশনের নির্দেশনা আছে বলে জানিয়ে লামাবাজার এ এ এস সিটি কর্পোরেশন বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহাদাত হোসেন মাহমুদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সেশন ফি বা ভর্তি ফি যেটাই বলেন সেটা হলো তিন হাজার টাকা। সেশন চার্জ তিন হাজার টাকা এটা আমাদের কর্পোরেশনের নির্দেশনা আছে।’

পুনঃ ভর্তি প্রসঙ্গে এ প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘পুনঃ ভর্তি হয়, যে নতুন ভর্তি হলে অন্য স্কুল থেকে আসে তো তখন তার তিন হাজার টাকা পরে এক মাসের বেতন সহ ভর্তি ফি দিতে হয়। আর পুনঃভর্তি আরেকটা হলো তিন মাস বেতন পরপর না দিলে সেটা এক মাসের বেতনের সমপরিমাণ টাকা হলে এটাকে বলা হয় পুনঃভর্তি। দুইটা অপশন আছে। প্রত্যেক ক্লাসে উঠলে একটা ওই একটা সেশন ফি। এটা সরকার নির্ধারিত। তিন হাজার টাকা মহানগরীর।’

একই প্রসঙ্গে চসিকের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘না পুনঃ ভর্তি না। আমাদের সেশন চার্জ একটা নেওয়া হয়— ওটা ৩ হাজার টাকা। নতুন ভর্তিও ৩ হাজার টাকা।’

তবে অভিভাবকরা অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ করলেও অস্বীকার করছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

অনুমোদনহীন স্কুলগুলোতেও একই চিত্র ভর্তি আর পুনঃ ভর্তিতে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ স্কুল এন্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান এম ইকবাল বাহার চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সরকার যদি এসব স্কুলকেও নীতিমালার আওতায় আনতো তাহলে এমন হতো না। এখন এসব স্কুল নীতিমালার আওতায় আসছে না বলেই মন্ত্রণালয়ের কোনো নির্দেশনা মানছে না। কেননা স্কুলগুলো পৃথক নীতিমালার জন্য আবেদন করেছিল। কিন্তু সরকার অনুমোদন না দেওয়ায় এমন হচ্ছে।’

ভর্তি ও পুনঃ ভর্তিতে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের প্রসঙ্গে কাজেম আলী হাই স্কুলের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সরকারি সিদ্ধান্ত ঠিক আছে। আমরা নিজেরা তো নিচ্ছি না। আমাদের যারা নিউ এডমিশন তাদের থেকে নেওয়া হচ্ছে। পুরাতনদের থেকে নেওয়া হচ্ছে না। সেশন ফি ছাড়া একটাকাও বেশি নিচ্ছি না।’

চট্টগ্রামে প্রথম ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সানশাইন গ্রামার স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ সাফিয়া গাজী রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরে মন্তব্য করবেন বলে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

সালাউদ্দিন আহমেদ ফিরোজ নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘উনারা এখন ব্যবসায়ী। নানান ছুতায় টাকা নেয়। ভাইরে আমার জনমেও শুনলাম না বিল্ডিং উন্নয়ন বাবদ শিক্ষার্থীদের থেকে টাকা নেয়! এটা কেমন কথা? শেষমেশ স্কুলের বিল্ডিংয়ের জন্য বছর বছর টাকা নেবে। বাচ্চা তো পাসই করছে। তারপরও প্রতিবছর নতুন করে ভর্তি করাতে হয় কেন সেটা বুঝলাম না।’

আরেক অভিভাবক বলেন, ‘বাচ্চাদের ভালো পরিবেশে পড়াতে চাই বলে টাকার মায়া করি না। কিন্তু তাই বলে বছর বছর এমন ডাকাতি মেনে নেয়া যায় না। মন্ত্রণালয় কেবল নীতিমালাই করে। মনিটরিং আর করে না। যার ফলাফল বছর বছর এমন করে নানান খাত দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।’

এদিকে, মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (স্কুল-কলেজ) শিক্ষার্থী ভর্তিতে বাড়তি অর্থ আদায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে ২১ জানুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত এক আদেশে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে।

আদেশে বলা হয়, দেশব্যাপী সরকারি ও বেসরকারি স্কুল এবং কলেজের বিভিন্ন স্তরে শিক্ষার্থী ভর্তি, সেশন ফি, ফরম পূরণে সরকার নির্ধারিত ফি’র অতিরিক্ত আদায় করা হচ্ছে। স্কুল ও কলেজ বিভিন্ন খাতে এ অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া সমন্বিত পরিকল্পনার আওতায় বার্ষিক পরিদর্শন ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সঠিকভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে কিনা সে বিষয়েও তদারকির নির্দেশ দেওয়া হয় ওই আদেশে।

এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আবু হাসান সিদ্দিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয় যে পরিপত্র দিয়েছে তার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নাই। নির্দেশনা মানতে হবে। আর যারা মানবে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে যেভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তার বাইরে এক টাকা নেওয়ার সুযোগ নাই। তাছাড়া পুনঃ ভর্তি বলে কোনো ফি নেই। আমাদের কাছে ইতিমধ্যেই কিছু অভিযোগ এসেছে। আমরা খতিয়ে দেখছি।’

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিব প্রফেসর আবদুল আলীম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এগুলো আসলে নিয়ম শৃঙ্খলার ভেতরে নেই। কিছু স্কুল আছে জেলা প্রশাসনের আওতাভুক্ত, আবার কিছু স্কুল আছে সংস্থা বা বিশেষায়িত। নানান ঝামেলা থাকে। তবে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসে নাই। অভিযোগ আসলে বিধির বাইরে কিছু করলে আমরা খতিয়ে দেখে আমাদের যা করণীয় তাই করবো।’

যদিও বছর বছর নির্দেশনা জারি করা হলেও তদারকি হয় না সঠিকভাবে। আর এই সুযোগে ভর্তিতে স্বেচ্ছাচারিতায় মেতে উঠেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। ভর্তি বাণিজ্য থেকে কবে নাগাদ রেহাই পাবে তা নিয়েও প্রশ্ন অভিভাবকদের মনে।

ভর্তি, পুনঃভর্তি প্রসঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা যেহেতু সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বলেছি যেহেতু, তার মানে সেক্ষেত্রে সবাই তো (নির্দেশনা পালন) করবে। এখন আপনারা কাইন্ডলি যারা বলছেন এগুলো তো হচ্ছে, আমাদের এখানে এর মধ্যে কিছু অভিযোগ আসতেও শুরু করেছে। আমাদের কাছে যদি লিখিত অভিযোগ দেন তাহলে আমরা সেভাবে অ্যাকশনে যাবো। অ্যাকশন বলতে তদন্ত করবো আমরা। তদন্ত করে যদি দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের চিঠিতে যা লেখা আছে তা তো আপনিও দেখছেন নিশ্চয়ই, যেহেতু আমার সিগনেচারে (স্বাক্ষরিত) গেছে। ওখানে দেখেন না, আছে কি না তাহলে সে মোতাবেক লিখিত আকারে তথ্য পাঠান এরপরে আমাদের আইনি প্রক্রিয়া যা হবে তা আমরা করবো।’

একই প্রসঙ্গে সাহিত্যিক শিক্ষাবিদ সাবেক অধ্যক্ষ ড.আনোয়ারা আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ মন্ত্রণালয়ের সুনির্দিষ্ট আর্থিক নিয়মনীতি না থাকায় স্কুলগুলো যে যার মতো বাণিজ্য ক্ষেত্র বানিয়ে রেখেছে। তাছাড়া আমাদের মতন বহুজাতিক শিক্ষা পদ্ধতি পৃথিবীর আর কোথাও নাই। শিক্ষাব্যবস্থা চলছে হযবরলভাবে। বিশেষ করে আর্থিক নিয়মগুলো কী রকম হওয়া উচিত, কোন বিধিমালায় পড়া উচিত সেগুলোর সুনির্দিষ্ট নীতিমালা শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত হয় না। আর প্রণীত হলেও সেগুলো তদারকি বা মনিটরিং হয় না যে কারণে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের জিম্মি করছে।’

হচ্ছে নীতিমালা, এক বিদ্যালয়ে একবারই ভর্তি ফি
দেরিতে হলেও বেসরকারি বিদ্যালয়ে উন্নীত ক্লাসে পুনঃভর্তি ফি আদায় বন্ধ করার সুর্নিদিষ্ট উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে নীতিমালা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে একই বিদ্যালয়ে পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত কাউকে আর ভর্তির নামে বাড়তি ফি দিতে হবে না। এ নীতিমালার ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টিউশন ফির নামে গলাকাটা অর্থ আদায়ও বন্ধ হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

একেক প্রতিষ্ঠানে একেক ধরনের ফি আদায় করে যা পরিশোধে অভিভাবকদের নাভিশ্বাস ওঠে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো বিধান না থাকায় সরকারিভাবে বারবার সতর্ক করার পরও তা বন্ধ হচ্ছে না। সেজন্য এ ধরনের ফি নিয়ন্ত্রণে ওই নীতিমালা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে। নীতিমালা প্রণয়নে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক) মোমিনুর রশিদ আমিনকে প্রধান করে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্ম-সচিব (অডিট ও আইন) আহমদ শামীম আল রাজী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ গোলাম ফারুক, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের পরিচালক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আনোয়ারুল হক।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!