ভরা মৌসুমেই অধরা ইলিশ, বিমর্ষ বাজার

সমুদ্রের মৎস্যভাণ্ডার আরো সমৃদ্ধ করতে প্রতিবছর ৬৫ দিন সমুদ্রে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকে। এ বছর সেই নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে ২৩ জুলাই। নিষেধাজ্ঞা শেষে প্রতিবছরই ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছে ভরপুর থাকে মাছের বাজার। সব শ্রেণী ও পেশার মানুষের হাতের নাগালে থাকে দরদাম। কিন্তু এ বছর তার বিপরীত চিত্র। চাহিদার তুলনায় মাছ অপ্রতুল, দামও চড়া।

সরেজমিনে চৌমুহনী কর্ণফুলী মার্কেট, বহদ্দারহাট বাজার, চকবাজার, রিয়াজুদ্দিন বাজার, কাজির দেউড়ি বাজার ঘুরে দেখা যায়, তিন আকারের মাছের চাহিদা রয়েছে। ওজন বেধে দামও কম বেশি। ৫০০ গ্রাম থেকে ৬০০ গ্রামের ইলিশ সাড়ে ৪০০ টাকা থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা। ৭০০ গ্রাম থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম সাড়ে ৭০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এক কেজি থেকে তদূর্ধ্ব ওজনের ইলিশ কোনো বাজারে এক হাজার, কোনো বাজারে এক হাজার ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

চৌমুহনী কর্ণফুলী মার্কেটের ক্রেতা রবিউল আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাজারে ইলিশ মাছের যা দাম তাতে মাছ কী খাবো, দেখেই শান্তি! দুই মাস সাগরে মাছ ধরা নিষেধ ছিল। তখন বেশি দামে কিনেছি সেটার একটা কারণ ছিল। এখনও দাম কমছে না। আমরা আশায় আছি, দাম কমবে। ঘরে ঘরে ইলিশ উৎসব হবে।’

বহদ্দারহাটের ক্রেতা রাজ চন্দ্র দাস বলেন, ‘মাছের দামটা এখনো বাড়তি। ইলিশ তো অবশ্যই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এককেজি ওজনের ইলিশ কিনেছিলাম ৬০০ থেকে সাড়ে ৬০০ টাকায়। এবার ওই দামে আধাকেজি ওজনের ইলিশ পাচ্ছি! এক কেজি ওজনের ইলিশ তো হাজারের ওপরে দাম।’

ইলিশ মৌসুমেও পর্যাপ্ত ইলিশ নেই কী কারণে—জানতে চাইলে সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক ড. মো. আবুল হাসনাত চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‌‘২৩ জুলাই ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও সাগর উত্তাল থাকায় মৎস্য শিকার ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্ক সংকেত জারির করায় গত এক মাসে একাধিকবার সমুদ্রে মাছ ধরার অনুমতি বাতিল করতে হয়েছে। চলতি সপ্তাহে মাছ ধরার সব বোটই সমুদ্রে যাচ্ছে। আশা করছি তারা পর্যাপ্ত মাছ নিয়ে নিরাপদে ফিরবেন। তখন সবাই ইলিশ উৎসবে মেতে উঠবে৤’

গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ ইঞ্জিনচালিত বোট মালিক সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও চট্টগ্রাম নগর কমিটির সভাপতি আমিনুল হক বাবুল সরকার বলেন, ‘৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে যেসব বোট সমুদ্রে মাছ শিকারে গিয়েছিল, তার মধ্যে পাঁচ থেকে সাত শতাংশ বোট আশানুরূপ মাছ নিয়ে ফিরেছে। এ পর্যন্ত দুটি বোটে কম-বেশি ১০০ মণ মাছ শিকার করেছে। ২০ শতাংশ বোট কম-বেশি ৫০ মন মাছ নিয়ে ফিরেছে। বাকিরা ১০-১৫ কিংবা ২০-২২ মণের মতো মাছ নিয়ে ফিরেছে। আবার কেউ কেউ পাঁচ মণ মাছ নিয়েও ফিরেছে। অনেকেই বলছেন, প্রচুর মাছ। কোনো বোট যদি পাঁচ মণ মাছ একসাথে স্তুপ করে, তাতে অনেক মাছই দেখা যাবে। কিন্তু আমাদের সেই পাঁচ মণ মাছ শিকারে কত খরচ তা কেউ দেখেন না, খবরও নেন না।’

বাবুল সরকার আরও বলেন, ‘একটা বোট গভীর সমুদ্রে গেলে তার পিছনে প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ আছে। এখন গত একমাসে আমাদের সেই খরচ অনুসারে অনেক কম সংখ্যক বোট মাছ শিকার করতে পেরেছে। ঈদের সময় আবহাওয়া খারাপ থাকায় সবাই বসা ছিলাম। এখন অধিকাংশ বোট সমুদ্রে আছে। আশা করছি আগামী এক সপ্তাহে আমাদের গত একমাসের ক্ষতিটা পুষিয়ে উঠতে পারবো। তখন মাছের দাম আরো কমবে।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!