বড় মাদকব্যবসায়ী ‘স্ত্রী’ খুনের ছক আঁকেন চট্টগ্রামে, গণধর্ষণের পর খুন গাজীপুরে

দুই বছর পর রহস্য বের হল পিবিআইয়ের হাতে

দুই সহযোগীকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেওয়া নিয়ে সন্দেহ ছিল তার ওপর। এরপর দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে থাকার পর মেয়েটি যখন স্ত্রীর মর্যাদা চাইলেন, তখন চট্টগ্রামের এক বড় মাদকব্যবসায়ী মেয়েটিকে দুনিয়া থেকেই সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা আঁটেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী মাদকসেবনের এক আসরে প্রথমে গণধর্ষণ করা হয় মেয়েটিকে। এরপর নিজের গলার ওড়না প্যাঁচিয়ে তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে গর্তে ফেলে দেওয়া হয় লাশটি।

দুই বছর আগে চট্টগ্রামের ওই মাদকব্যবসায়ীর পরিকল্পনায় গাজীপুরে কালিয়াকৈরে ২০১৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারির এই ঘটনার কোনো কূলকিনারাও পাচ্ছিল না পুলিশ। শেষ পর্যন্ত চাঞ্চল্যকর এ হত্যার রহস্য উন্মোচন করল গাজীপুরের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

পিবিআই সূত্রে জানা যায়, মূলত সঙ্গদোষে মাদকসেবী ও মাদকব্যবসায়ী হয়ে যান গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার দক্ষিণ ভান্নারা এলাকার কেয়াম উদ্দিনের মেয়ে স্বপ্না (১৯)। স্বপ্নার চলাফেরা স্বাভাবিক না থাকায় পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে তিনি ছিলেন বিচ্ছিন্ন।

চট্টগ্রামের এক মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে তার কাছ থেকে মাদক নিয়ে বিক্রি করতো স্বপ্না। চট্টগ্রামের ওই ব্যবসায়ী চট্টগ্রাম থেকে ইয়াবার চালান এনে কালিয়াকৈরের মৌচাক এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করতো। এর একপর্যায়ে চট্টগ্রামের ওই ইয়াবার ব্যবসায়ীর সাথে স্বপ্নার অবৈধ সম্পর্ক হয় এবং তাদের মধ্যে বিয়ে হয়েছে বলে এলাকায় প্রচার চালাতেন স্বপ্না। পরে স্বপ্না স্ত্রীর স্বীকৃতি চাইতে গেলে এ নিয়ে তার সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয় চট্টগ্রামের ওই মাদক ব্যবসায়ীর। এরপর গাজীপুরের সুজন, নাহিদ ও মোহাম্মদ আলীর সাথে মিলে ওই মাদক ব্যবসায়ী স্বপ্নাকে খুন করার পরিকল্পনা আঁটেন।

এর প্রায় দুই মাস আগে সুজন ও মজিবর নামে দুই মাদক ব্যবসায়ীকে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করিয়েছে— এমন সন্দেহে স্বপ্নার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে চক্রটি প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ খুঁজছিল।

চট্টগ্রামের ওই মাদক ব্যবসায়ীর পরিকল্পনা অনুযায়ীই ২০১৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় সুজন, নাহিদ ও মোহাম্মদ আলী স্বপ্নাকে ডেকে নিয়ে কালিয়াকৈরের ভান্নারা এলাকার হানিফ স্পিনিং মিলের সীমানা প্রাচীরের পাশের আকাশী কাঠ বাগানের ভেতর বসে একসাথে ইয়াবা সেবন করে। একপর্যায়ে স্বপ্নাকে ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের পর স্বপ্নার গলার ওড়না দিয়ে তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার পর তারা বাগানের একটি গর্তের মধ্যে লাশটি ফেলে রেখে যায়। পরদিন এলাকাবাসী লাশটি দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়।

সেই লাশ উদ্ধারের পর স্বপ্নার চাচা আবুল হোসেন বাদি হয়ে কালিয়াকৈর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। কিন্তু থানা পুলিশ তিন মাস কেটে গেলেও ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে না পারায় মামলাটি আদালতের মাধ্যমে পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পিবিআইর তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মনির হোসেন মামলাটি প্রায় ৮ মাস তদন্ত করেন। তিনিও ব্যর্থ হন রহস্য উদ্ধারে। পরে এই মামলার তদন্তভার পুলিশ পরিদর্শক হাফিজুর রহমানের কাছে যাওয়ার পর মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) স্বপ্না হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার তিনজন হলেন— গাজীপুরের উপজেলার বরাব মসজিদ মার্কেট এলাকার মোহাম্মদ আলী (২৮), একই উপজেলার ভান্নারা গ্রামের নাহিদ হোসেন (২৮) ও মো. সুজন (৪৬)।

বুধবার (১২ জানুয়ারি) মোহাম্মদ আলী ও নাহিদ হোসেন গাজীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির হয়ে স্বপ্না হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আদালতের বিচারক অপর আসামি সুজনের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

তবে ঘটনার মূল হোতা চট্টগ্রামের ওই বড় মাদক ব্যবসায়ী এখনও রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। তদন্তের স্বার্থে ওই মাদককারবারির নাম-ঠিকানা এখনই প্রকাশ করছে না পিবিআই।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!