‘বড় ভাই’দের ছায়ায় চকবাজারের অলিগলিতে কিশোর গ্যাং, কোন্ এলাকায় কারা

চট্টগ্রাম নগরীর জনবহুল এলাকা চকবাজারে কথায় কথায় অস্ত্র দেখানো কিংবা গুলিবর্ষণ যেন তুচ্ছ বিষয়। টার্গেট ব্যক্তিকে ধরে এনে গোপন টর্চার সেলে নির্যাতনের ঘটনাও অহরহ। আবার অনেকের কাছ থেকে আদায় করা হয় নগদ টাকা। হোটেল রেস্টুরেন্টে খাবারের বিল চাইলেই চলে ভাঙচুর। এভাবে গত কয়েক মাসে চকবাজার, পাঁচলাইশ, বাকলিয়া এলাকায় কিশোর গ্যাংগুলো রীতিমতো ত্রাস ছড়াচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ অলিগলি ও মোড়গুলোতে গ্রুপ-উপগ্রুপে বিভক্ত হয়ে ফের আড্ডা জমাচ্ছে কিশোর অপরাধীরা।

কোন্ এলাকায় কারা দিচ্ছে কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্ব
চকবাজার ও আশপাশের এলাকায় টিনুর অনুসারী অন্যান্য কিশোর গ্যাংগুলোর নেতৃত্ব যারা দিচ্ছে, অনুসন্ধানে মিলেছে তাদের অনেকের নাম। এর মধ্যে রয়েছে গোয়াছি বাগানের রবিউল ইসলাম রাজু, জয়নগর-গুলজার মোড়কেন্দ্রিক নাইমুল হাসান ওরফে ভাঙারি তুষার, নাজমুল হাসান তোফা, কাপাসগোলায় সৌরভ উদ্দিন ওরফে গুলি বাপ্পা, ইমন রশীদ ওরফে কালা সাঈদ, সাদ্দাম, এহসানুল হক ইমন ও হৃদয়, কাতালগঞ্জ-অলি খাঁ মোড়ে হামকা জুলকাস, পার্সিভ্যাল হিল দেবপাহাড়ে মোস্তফা শাকিল, সালমান ফারাজি, ধনিরপুল ডিসি রোড়ে ইয়াসিন আরাফাত ওরফে হামকা জুয়েল, ভাগিনা সাকিব। কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে থাকা এসব অপরাধীদের বেশিরভাগই পুলিশের তালিকাভুক্ত ও একাধিক মামলার আসামি। কিন্তু এদের সবাই প্রকাশ্যে এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে প্রতিদিন।

চকবাজারের যতো ‘বড় ভাই’
এদিকে কিশোরদের বিপথগামী গড়ে তোলার নেপথ্যে থাকা কথিত বড় ভাইদের কয়েকজনের নামও জানা গেছে। এরা হলেন অভিক দাশ গুপ্ত, এসএম সামাদ, অনিন্দ্য বৈদ্য সানি, ঝুট নবী, শিবির নামধারী দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ল্যাডা নাছির ও চন্দনপুরার ওমর। এছাড়াও চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের বিতর্কিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিক সবুজ টিনুর অনুসারী কিশোর অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ করছেন— এমন তথ্য জানা গেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে।

কিশোর গ্যাংয়ের ‘বড় ভাই’দের মধ্যে অভিক দাশের বিরুদ্ধে চকবাজার থানায় একটি মামলা (নং-৭(৫)১৭), পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা (নং- ৭৭৬/১৯) ও চকবাজার থানায় একটি জিডি (নং-১৬০১(৯)১৯) আছে।

অনিন্দ্য বৈদ্য সানির বিরুদ্ধে পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা (নং-৭৭৬/১৯), একই থানার মামলা (নং-৪(৮)১৬), চকবাজার থানায় মামলা (নং ৭(৫)১৭ এবং ৫(৮)১৬), চান্দগাঁও থানায় একটি মামলা (নং-২৫(৯)১২) এবং কক্সবাজার সদর থানায় একটি মামলা রয়েছে।

আরেক ‘বড় ভাই’ এসএম সামাদ দ্রুত বিচার আইনে পুলিশের দায়ের করা মামলায় গত ২৬ আগস্ট গ্রেফতার হন। পরে জামিনে এসে ফের ত্রাস ছড়াচ্ছেন এলাকায়। তিনি পুলিশ সদর দপ্তরের এক ‘সিনিয়র কর্মকর্তার ভাই’ পরিচয়ে এসব অপকর্মে করে গেলেও ভয়ে পুলিশও তাকে গ্রেপ্তার করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। সামাদ চকবাজারের সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড ও ব্যাটারিচালিত রিক্সা থেকে চাঁদাবাজিতেও জড়িত রয়েছেন।

চকবাজারে সন্ত্রাসীদের রাজত্ব ও কিশোর গ্যাংগুলোর উৎপাত নিয়ে র‍্যাব-৭ এর অধিনায়ক মশিউর রহমান জুয়েলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘এলাকায় সক্রিয়তার কোনো প্রমাণ হাতেনাতে ফেলে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। না হলে তারা আইনের ফাঁক দিয়ে তারা ঠিক বের হয়ে যায়। সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য প্রমাণ থাকলে আমরা অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

আগের পর্বে
আতঙ্কের চকবাজারে ভয়ঙ্কর কিশোর গ্যাং, ‘রিমোট কন্ট্রোল’ টিনুর ডান হাত ইভানের হাতে

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!