বড় জালিয়াতি, আমদানিকারককে ফাঁসাতে গিয়ে ফাঁসল সিএন্ডএফ পলি লজিস্টিক

নথি জালিয়াতি করে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে বিপদে ফেলতে গিয়ে নিজেই বিপদে পড়লো চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের সিএন্ডএফ এজেন্ট পলি লজিস্টিক লিমিটেড। বড় জালিয়াতি করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে ধরা পড়ার পর এখন ফৌজদারী মামলার মুখোমুখি হতে হবে প্রতিষ্ঠানটিকে।

ঢাকা সাভারের একটি প্রতিষ্ঠান ইতালী থেকে আমদানিকৃত পণ্য চালানে ৩০টি আইটেম থাকলেও ঘোষণায় দেখায় মাত্র ৯টি পণ্য। এ চালানে মিথ্যা ঘোষণার অপরাধ ছাড়াও ‘ইনডেন্ট ইনভয়েস এবং প্যাকিং লিস্ট’ জাল করে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করেন ওই সিএন্ডএফ এজেন্ট। কাগজপত্র জালিয়াতি করে পণ্য চালান খালাস নেওয়ার চেষ্টার অপরাধে ফৌজদারী মামলা হচ্ছে পলি লজিস্টিক লিমিটেডের বিরুদ্ধে।

কাস্টমস সূত্র জানায়, ঢাকা সাভার হেমায়েতপুরের চামড়া শিল্প নগরীর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ‘বি এস লেদার কমপ্লেক্স’ ইতালি থেকে সিন্থেটিক অর্গানিক ট্যানিং সাবস্টেন্স, প্রিপারেশন ট্রিটমেন্ট অব লেদার এন্ড ফিনিশিং এজেন্ট ঘোষণায় একটি পণ্য চালান আমদানি করেন। চলতি বছরের ২ আগস্ট আমদানিকারকের মনোনিত সিএন্ডএফ এজেন্ট পলি লজিস্টিক লিমিটেড চট্টগ্রাম কাস্টমসের হাউসে বিল অব এন্ট্রি (সি নং ১২৪৯৯৮৯) দাখিল করেন।

উক্ত পণ্য চালানে সন্দেহ থাকায় চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের অডিট, ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ শাখা চালানটি কাস্টমসের বিশেষায়িত সফটওয়্যারে লক করেন। ফলে সিএন্ডএফ প্রতিনিধির উপস্থিতিতে শুল্ক কর্মকর্তা ও এআইআর শাখার কায়িক পরীক্ষায় ৯টি পণ্য ঘোষণার মধ্যে আরও ৪টি অতিরিক্ত পণ্য পাওয়া যায়।

এতে উক্ত আমদানিকারককে জরিমানা করেন কাস্টমস হাউস। কিন্তু ক্রিটিক্যাল লোডিং এর কারণে ওজন নিশ্চিত করতে পারেননি কাস্টমস হাউসের কর্মকর্তারা। তখন সিদ্ধান্ত হয় ডেলিভারি পর্যায়ের ওজন নিশ্চিত করার। প্রথম পর্যায়ে জরিমানাসহ ১৯ লক্ষ টাকা পরিশোধ করেন আমদানিকারক।

এদিকে পণ্য চালানটি খালাসকালে দ্বিতীয়বার কায়িক পরীক্ষা করেন কাস্টমসের এআইআর শাখা। এ সময় উক্ত চালানে ঘোষণা বহির্ভুত আরও ২১টি পণ্য পাওয়া যায়। যা কাস্টমসের রসায়নিক পরীক্ষা করা হয়। এতে দেখা যায়, পণ্য চালানের অতিরিক্ত পাওয়া ২১টি আইটেমই শুল্কায়নযোগ্য। এতে শুল্কায়নযোগ্য টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ২০ লক্ষ ১ হাজার টাকা। উক্ত টাকা ফাঁকি দিয়ে চালান খালাস নিতে চেয়েছিল ওই সিএন্ডএফ এজেন্ট।

এতে টনক নড়ে কাস্টমস হাউসের কর্মকর্তাদের। ফলে সিএন্ডএফ কর্তৃক বিল অব এন্ট্রিতে দাখিলকৃত কাগজপত্র পুনরায় যাচাই বাছাই করেন কর্মকর্তারা। কাগজপত্র যাচাইয়ে দেখা যায়, আমদানিকারকের মনোনিত সিএন্ডএফ এজেন্ট পলি লজিস্টিক লিমিটেড ইনডেন্ট ইনভয়েস এবং প্যাকিং লিস্ট জাল করেছেন।

মূল প্যাকিং লিস্টে ৩০টি পণ্যই ছিল। সিএন্ডএফ এজেন্ট সেটি বাদ দিয়ে ৯টি পণ্যের একটি জাল তালিকা সংযোজন করেছেন। এ জাল জালিয়াতির বিষয়টি চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কর্মকর্তাদের হাতে ধরা পড়লে সিএন্ডএফ এজেন্ট দায় স্বীকার করেন। এ ঘটনায় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান দায়ী নয় বলে কাস্টমস কর্মকর্তাদের জানান সিএন্ডএফ এজেন্ট।

জালিয়াতির অপরাধে সিএন্ডএফ এজেন্ট পলি লজিস্টিক লিমিটেডের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা করার প্রস্তুতি নিয়েছে কাস্টমস হাউস। কাস্টমস হাউসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মাহমুদ আল হোসাইন খান বাদী হয়ে মামলা করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ১৮ নভেম্বর কাস্টমস হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম মামলা করার আদেশ দেন।

এ বিষয়ে কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার আল আমিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সিএন্ডএফ এজেন্ট পলি লজিস্টিক লিমিটেড বড় ধরণের জালিয়াতি করেছে। মূল কাগজপত্র গোপন করে ভিন্ন কাগজপত্র দাখিল করেন, আবার পণ্য চালানে ৩০টি আইটেম থাকলেও মাত্র ৯টির ঘোষণা দেন। আরও ২১টি পণ্য গোপন করেন যা শুল্কায়নযোগ্য। এ সিএন্ডএফ ফৌজদারী অপরাধ করেছেন। তাই বাংলাদেশ প্যানাল কোড ১৮৬০ সহ অন্যান্য অপরাধের সংশ্লিষ্ট ধারায় ফৌজদারী মামলা হচ্ছে সিএন্ডএফের বিরুদ্ধে।’

তিনি আরও জানান, ‘উক্ত অপরাধে আমদানিকারক জড়িত ছিল না । তাই আমদানিকারককে ঘোষণা বহির্ভুত পণ্যের জন্য জরিমানা করা হয়েছে। পণ্য চালানটিও জরিমানা দিয়ে খালাস দেওয়া হচ্ছে।’

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের শেখ মুজিব রোডের সিএন্ডএফ এজেন্ট পলি লজিস্টিক লিমিটেডের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন চৌধুরীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কল রিসিভ করেননি তিনি। ফলে এ বিষয়ে সিএন্ডএফ এজেন্টের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

কেএস/এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!