ব্লগার হত্যা মিশন ও আমাদের বিচারহীনতার সংস্কৃতি

Dr.-Anis

ড. সরদার এম. আনিছুর রহমান

কথার জবাব কথায় নয়, লেখার জবাব লেখায় নয়। আজকাল প্রতিপক্ষকে দমনে ব্যবহার করা হচ্ছে ধারালো অস্ত্র, একের পর এক নৃশংসভাবে খুন করা হচ্ছে লেখক-বুদ্ধিজীবীদের। আর এসব খুনের ঘটনা আড়াল করতে খুনীরা কথিত উগ্র জঙ্গী সংগঠনের নাম ব্যবহার করে থাকছে ধরা-ছুঁয়ার বাইরে।আর খুনীদের এই ফাঁদে পড়েছি আমরা ও আমাদের রাষ্ট্রপ্রশাসন।

অবশ্য এই সংস্কৃতি আমাদের সমাজে বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই শুরু হয়েছে। সম্প্রতি পরপর বেশ কয়েকটি একই ধরনের খুনের ঘটনা আমাদের সমাজকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। আজ মুক্ত চিন্তার লেখক-বুদ্ধির ধারাবাহিক হত্যা আমাদের রাষ্ট্রের চরিত্র নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে। এটা আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য এক বিরাট অশনিসংকেত। এসব হত্যাকাণ্ডই প্রমাণ করে যে আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো আজ কতটা দুর্বল ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে। আমরা ক্রমেই কতটা অসভ্য হয়ে উঠছি!

রাজনীতিতে ক্ষমতায় যাওয়া আর টিকে থাকার দ্বন্দ্ব, দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে মূল্যবোধের অবক্ষয়, অগণতান্ত্রিক চর্চা, সমাজে আইনের সঠিকভাবে প্রয়োগ না হওয়া, ইন্টারনেটের অপব্যবহার, ভিন্ন কায়দায় প্রতিপক্ষ তথা ভিন্নমতের লোকদের অবদমিত করার প্রয়াস যখন আমরা প্রায়ই দেখছি, ঠিক তখনই একের পর এক খুনের মহোৎসব চলছে খুনীদের।

সর্বশেষ গত সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়িতে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে ব্লগার ওয়াসিকুর রহমান বাবুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আর সমাজের আমরা সবাই যখন ভীতসন্তস্ত তখন ঘটনাস্থল থেকে দুই খুনীকে হাতেনাতে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে হিজরা সম্প্রদায়ের লোকজন। পুলিশ তাদের ৮দিনের রিমাণ্ডেও নিয়েছে। ওই দুই খুনি কথিত ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের স্লিপার টিমে সদস্য বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। তারা সংগঠনের অন্য সদস্যদের চেনে না। তাদের ভাষায় ‘ব্লগ কী বুঝি না, আর তার লেখাও আমরা দেখিনি। হুজুরের পরামর্শ, সে ইসলামবিরোধী। এজন্য তাকে হত্যা করা ছিল ইমানি দায়িত্ব। আর তা পালন করতে বাবুকে হত্যা করেছি।’

আজের এই হত্যাকাণ্ড দেশব্যাপী নিরাপত্তাহীনতার প্রশ্নটিকে আরও বেশি করে আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? এটা কী কোনোভাবেই থামবে না? আমরা কী সবাই নীরবেই সহ্য করে যাবো এসব হত্যাকাণ্ড? না, এই একবিংশ শতাব্দীতে সভ্য সমাজে এভাবে তা চলতে পারে না, যে কোনো মূল্যে তা আমাদেরকে থামাতেই হবে- অন্যথায় নিরাপত্তাহীনতার জালে আচ্ছাদিত হবে দেশের মানুষ, আইন-শৃঙ্খলার প্রতি মানুষের শ্রদ্ধার জায়গাটি ক্রমেই শিথিল হয়ে পড়বে, সমাজে এই নৈরাজ্যের থাবা আরও বিস্তার লাভ করবে। আর এতে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রকাঠামো ভেঙ্গে পড়তে পারে।

আর এটা সহজেই বলা যায় যে- এই খুনের মহোৎসব মূলত: বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই আমাদের সমাজে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছে। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জনগণের নিরাপত্তা দিতে উদাসীন। গত কয়েক বছরে ওয়াসিকুরসহ ৮ ব্লগার নৃশংস হত্যার শিকার হয়েছেন। ইতোপূর্বে ৭ ব্লগার হত্যার কোনো ক্লু বের করতে পারেনি পুলিশ। কাউকে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। এরপরও কী পুলিশের এই ব্যর্থতার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্র কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে? ফলে শুধু ৮ ব্লগারই নয়, হত্যাকারীরা প্রশ্রয় পেয়ে আরো বেশি শক্তি অর্জন করছে। ২০০৪ সাল থেকে প্রকাশ্যে সাংস্কৃতিক, উদারমনা ও মুক্তচিন্তার ব্যক্তি এমন কি ইসলামী ব্যক্তিত্বদের হত্যার অভিযানে নামে খুনীরা। ওই সালে মুক্তমনা লেখক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. হুমায়ুন আজাদ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুসকেকে নৃসংশভাবে হত্যার মাধ্যমে খুনের অভিযান শুরু হয়।

সর্বশেষ খুনের শিকার হন সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ব্লগার ওয়াসিকুর রহমান। এ নিয়ে গেল ১১ বছরে ৮ ব্লগারসহ আলোচিত ২২ জন খুন হয়েছেন। চিকিৎসক, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি অনুসারে, একই কায়দায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে অথবা গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে এদের। এছাড়া হামলার শিকার হয়ে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গেছেন আরো ৬ ব্লগার।

ব্লগারসহ আলোচিত খুন হওয়া বাকি ২২ জনের মধ্যে বিজ্ঞান বিষয়ক লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়, যাকে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি টিএসসির সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ সময় তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও হামলার শিকার হন। গেল বছরের ১৫ নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও মুক্তচিন্তার শফিউল ইসলাম লিলনকে বাড়ির সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ২০১৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনে আমবাগান গ্রামের ফ্ল্যাটে কুপিয়ে এবং গলা কেটে হত্যা করা হয় ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও মুক্তচিন্তার সমর্থক আশরাফুল ইসলামকে।২০১৪ সালের ২৭ আগস্ট রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের ১৭৪ নম্বরে নিজ বাড়িতে গলা কেটে হত্যা করা হয় ইসলামী অনুষ্ঠানের উপস্থাপক মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীকে। ২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর আর কে মিশন রোডের বাড়িতে কথিত ‘আধ্যাত্মিক পীর’ ইমাম মাহদীর সেনাপতি দাবিদার লুৎফর রহমান ফারুক ও তার বড় ছেলে সরোয়ার ইসলাম ফারুক, খাদেম মঞ্জুর আলম মঞ্জু, মুরিদ শাহিন, রাসেল ও মুজিবুল সরকারসহ ৬ জনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। ২০১৩ সালের ৮ আগস্ট খুলনার খালিশপুরে মুসলিম উম্মাহ সংগঠনের প্রধান ও ধর্মীয় নেতা তৈয়েবুর রহমান ও তার কিশোর ছেলে নাজমুম মনিরকে গলা কেটে হত্যা করা হয়।

২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কবি নজরুল ইসলাম হলে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ব্লগার আরিফ রায়হান দ্বীপকে। ২০১৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে এবং পিটিয়ে অগ্রণী ব্যাংকের কর্মী ও ব্লগার জাফর মুন্সিকে হত্যা করা হয়।২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ব্লগার মামুন হোসেন, ২ মার্চ ব্লগার জগৎ জ্যোতি তালুকদার ও ব্লগার জিয়াউদ্দিন জাকারিয়া বাবুকে হত্যা করা হয়।২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পল্লবীর কালশীর পলাশনগরে গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোক্তা ব্লগার রাজীব হায়দার শোভন খুন হন। ২০১০ সালে ঢাকার উত্তরায় মসজিদের ইমাম, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও জেএমবির দলছুট সদস্য রাশিদুল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আর ২০০৬ সালে খুন হন বিশ্ববিদালয়ের ভূতত্ত্ব খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের, ২০০৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পাশে বিনোদপুরে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক অধ্যাপক ইউনুসকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরমাণু শক্তি কমিশনের সামনে হামলার শিকার হন সাংস্কৃতিক, উদারমনা ও মুক্তচিন্তাধারী ড. হুমায়ুন আজাদ। চাপাতি ও কুড়ালের কোপে মারাত্মক আহত ড. হুমায়ুন আজাদ চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১২ আগস্ট জার্মানির মিউনিখে মারা যান।

এছাড়া হামলায় গুরুতর জখম হয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন ৬ ব্লগার। চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি টিএসসির সামনে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয় বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে। ২০১৩ সালে ১৩ জানুয়ারি রাজধানীর উত্তরায় ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিনকে কোপানো হয়। ওই বছরের ৭ মার্চ রাতে মিরপুরের পূরবী সিনেমা হলের কাছে কুপিয়ে জখম করা হয় ব্লগার সানিউর রহমানকে। ২০১৩ সালের জুনে এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় কোপানো হয় গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও ব্লগার রাকিব আল মামুনকে। ২০১৩ সালের ১১ আগস্ট বুয়েটের আরেক ছাত্র তন্ময় আহমেদকে কুপিয়ে জখম করা হয়।

গত ১১ বছরে ২২জন বুদ্ধিজীবী লেখক ভিন্ন সময়ে ভিন্ন স্থানে খুনের শিকার হলেও সব ঘটনার মোটিভ একই দাবি করে এসব ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ প্রতিটি ঘটনাতেই ধর্মান্ধ উগ্রপন্থি গোষ্ঠীর জড়িত থাকার গন্ধ খোজেঁ পেয়েছে। কিন্তু কোনো একটি ঘটনার আসল খুনীদের চিহ্নিত কিংবা বিচারের আওতায় আনতে পারেনি পুলিশ । ফলে মুক্তচিন্তার ব্যক্তিদের হত্যার ধারাবাহিক মিশনের অংশ হিসেবে শিক্ষক, লেখক ও ব্লগারদের একে একে হত্যা করা হচ্ছে।

আসলে নিহত ব্লগার ওয়াসিকুর রহমান কী লিখতেন? যতদূর জানা যায় তাতে- বিভিন্ন নামে একাধিক ব্লগ সাইটে এবং তার ফেসবুক প্রোফাইলে সমকালীন নানা বিষয়ে তার মতামত লিখতেন। ফেসবুক ও অন্যান্য কিছু বাংলা ব্লগ সাইটে দেখা গেছে, ওয়াসিকুর রহমানের লেখালিখির অন্যতম একটি বিষয় ছিল ইসলামসহ নানা ধর্মের সমালোচনামূলক প্রসঙ্গ, এবং তার বিভিন্ন মন্তব্য নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অন্য আরো অনেকের মধ্যে তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি হতো।

 

ফেসবুকে ওয়াসিকুর রহমানের প্রোফাইলে নাম ছিল ‘ওয়াসিকুর বাবু’ । এ ছাড়া কয়েকটি ব্লগ সাইটে তিনি ‘কুচ্ছিত হাঁসের ছানা’, ‘গন্ডমুর্খ’, ‘বোকা মানব’ ইত্যাদি একাধিক নামে লিখতেন। মুক্তচিন্তা, সাম্প্রদায়িকতা, বিজ্ঞান, ধর্মীয় কুসংস্কার বা গোঁড়ামি- ইত্যাদি নানা বিষয়ে প্রায়ই লেখালিখি এবং তীক্ষ্ন মন্তব্য করতেন ওয়াসিকুর রহমান। এর আগে যে দু’জন ব্লগার ধর্মীয় বিষয় নিয়ে লেখালিখির কারণে ধারালো অস্ত্রধারীদের আক্রমণে নিহত হন-সেই রাজীব হায়দার বা ‘থাবা বাবা’ এবং গতমাসে নিহত ব্লগার-লেখক অভিজিৎ রায়-এই দু’জনের মৃত্যুর পর তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেসবুকে একাধিকবার মন্তব্য করেন ওয়াসিকুর। তার সেই মন্তব্যগুলোর জবাবে আবার ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়াও আসে ফেসবুকে অন্য কিছু ব্যবহারকারীর দিক থেকে। ফেসবুকে ওয়াসিকুরের সর্বশেষ প্রোফাইল ছবিটিই ছিল ‘আই এ্যাম অভিজিৎ’ লেখা একটি পোস্টার। তাতে ইংরেজিতে আরো লেখা আছে ‘শব্দের মৃত্যু নেই’। তিনি ‘এথিস্ট (নাস্তিক) বাংলাদেশ’ এবং ‘বাংলার শার্লি’ (ফরাসী ম্যাগাজিন শার্লি এবদু) সহ বেশ কয়েকটি ফেসবুক গ্রুপের সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া ‘লজিক্যাল ফোরাম’ নামের একটি অনলাইন ডিসকাশন ফোরামেরও সদস্য ছিলেন ওয়াশিকুর। (তথ্য সূত্র- বিবিসি বাংলা, ৩০ মার্চ,২০১৫)

 

আমাদের সবচেয়ে বেশী উদ্বেগের কারণ যে, অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডটি ছিল ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে বইমেলার অদূরে টিএসসির কাছেই ফুটপাতে চা স্টলে জনারণ্যের মুখে। কয়েক গজ দূরের ছিল নিরাপত্তাদানে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা। স্বামীর রক্তভেজা গায়ে দাঁড়িয়ে সাহায্যের জন্য আকুতি জানিয়েছিল বন্যা। কিন্তু তার ডাকে খুনীদের রুখতে না মানুষ না পুলিশ কেউ এগিয়ে যায়নি। এইবার বেগুনবাড়িতে ব্লগার বাবুকে কুপিয়ে হত্যা করার সময় শুধু এক মহিলা চিৎকার করে উঠেছিলেন। হত্যাকারীরা তখন পালাচ্ছিল। সেখানকার দোকানপাট ও রাস্তার শত শত কোনো প্রতিবাদ করেনি, এগিয়ে যায়নি বাবুকে বাঁচাতে, বরং ভয়ে তারা নিজেদের রক্ষায় সেখান থেকে দৌড়ে পালাচ্ছিল। কিন্তু পথচারী তিন হিজড়া দুই ঘাতককে জাপটে ধরে। পরে জনতা তাদের পুলিশে সোপর্দ করে।এই আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা!

 

অন্যদেক নিরীহ মানুষকে হয়রানি, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের অমানবিক নির্যাতনে পুলিশ সর্বদা দক্ষতার পরিচয় দিলেও জনগণের জানমালের নিরাপত্তার বিষয়ে আজ তাদের ভূমিকা খুবই প্রশ্নবিদ্ধ।

 

তাই খুনীদের খুনি আর জঙ্গিদের জঙ্গী হিসেবেই চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এই অশুভ শক্তির কর্মকাণ্ডকে সমাজের মূল স্রোতধারার সাথে মিশিয়ে তালগোল পাকানো যাবে না। কেননা, ইসলামে কখনো উগ্ন ও জঙ্গীবাদের স্থান নেই। আমাদের ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতি এক। তাই জঙ্গীদের খুন ও অন্যান্য অপকর্মকে ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের উপর চাপিয়ে সাম্প্রদায়িক ও অসাম্প্রদায়িক শক্তি বলে সমাজে বিভেদ সৃষ্টি না করে বরং জাতিকে এসব অশুভ কর্মকান্ড ও শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। সেই সাথে আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতাকে ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকার’ অপচেষ্টাকেও নতুন করে ভাবতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় জাতীয় নেতৃবৃন্দকে হানাহানি বন্ধ করে ঐক্যের মোহনায় দাঁড়িয়ে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সংবিধান ও আইনের বিধি বিধান বলে রাষ্ট্র পরিচালনার পথে হাঁটতে হবে। ব্লগার রাজিব-অভিজিতের পথ ধরে ওয়াসিকুর চলে গেছেন। আমরা তাদের নিরাপত্তা দিতে পারেনি। ততাই সমাজের প্রতিটি সদস্যকেই রুখে দাঁড়াতে হবে সন্ত্রাস, অগণতান্ত্রিক চর্চা ও দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে।প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তবেই আশা করা যায় একদিন আমাদের সমাজ এই হত্যার সংস্কৃতি থেকে বের আসবে। সবশেষে, রাজিব-অভিজিত ও ওয়াসিকুরের মতো আর যাতে কাউকে এভাবে খুনীদের হাতে অকালে জীবন দিতে না হয় সেজন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি এবং নিহত ওয়াসিকু্রের শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি।

লেখক: শিক্ষা ও সমাজ বিষয়ক গবেষক।ই-মেইল: [email protected]

 

মতামত বিভাগে প্রকাশিত সকল মতামত লেখকের একান্ত নিজস্ব ।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!