ব্রাজিলের নবম নাকি পেরুর দ্বিতীয় শিরোপা

কোপা আমেরিকার ফাইনাল রাত দুইটায়

ব্রাজিলের নবম না পেরুর দ্বিতীয়, কার ঘরে যাচ্ছে কোপা আমেরিকার ট্রফি? ঘণ্টাকয়েকের মধ্যেই জানা যাবে উত্তর। তবে উত্তর জানার আগে নিচের দুইটি বিষয় জেনে রাখুন-
এক. আয়োজক হয়ে ব্রাজিল কখনো কোপার শিরোপা হাতছাড়া করেনি।
দুই. পেরু কখনো কোপার ফাইনালে উঠে হারেনি।
তাহলে এবারের কোপার ফাইনালে হারবে কারা? বাংলাদেশ সময় আজ (রোববার) দিবাগত রাত ২টায় ব্রাজিলের মারাকানায় কোপার ফাইনালে মুখোমুখি হতে যাওয়ার দুই দলের যে কারোরই আকেটি রেকর্ড ভেঙ্গে যাবে। হয় ব্রাজিল প্রথমবারের মতো ঘরের মাঠে কোপা জিততে পারবে না। না হয় পেরু এই প্রথম ফাইনালে হারবে।

দক্ষিণ আমেরিকার এই ফুটবল টুর্নামেন্টে ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন ৮ বার, পেরু ২ বার। আঞ্চলিক এই প্রতিযোগিতা যখন কোপা আমেরিকা নাম দিয়ে শুরুর প্রথম আসরই (১৯৭৫) বাজিমাত করেছিল পেরু। সেটি ছিল তাদের দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হওয়া। তারপর পেরু আর কখনো ফাইনালেই উঠতে পারেনি। ৪৪ বছর পর ফের ফাইনালে উঠে তারা প্রতিপক্ষ পেয়েছে স্বাগতিক ব্রাজিলকে। তৃতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হওয়া তাই পেরুর জন্য কঠিন এক চ্যালেঞ্জ।

শক্তি আর ঐতিহ্য- ফাইনালে এগিয়ে রাখবে ব্রাজিলকেই। ফুটবল পন্ডিতদের মতামতও ঝুঁকছে সেলেসাওদের দিকে; কিন্তু ফুটবল এমন এক খেলা, যেখানে সব কিছুই ঘটতে পারে। তাইতো প্রতিপক্ষ পেরু হওয়ার পর তাদের হালকাভাবে নিচ্ছেন না ব্রাজিলের খেলোয়াড়রা। অঘটনের ভয়ও কাজ করছে তিতের শিষ্যদের মধ্যে।

এটা ঠিক, পেরুর কিছু হারানোর নেই ফাইনালে। চাপে থাকবে বরং ব্রাজিলই। চাপমুক্ত পেরুই বিপদে ফেলতে পারে স্বাগতিকদের। যদিও এই পেরু গ্রুপপর্বে ব্রাজিলের কাছে বিধ্বস্ত হয়েছিল ৫-০ গোলে; কিন্তু সে ম্যাচটাকে ভুলে যেতে চাইছে দুই দলই। কারণ, গ্রুপ পর্ব আর ফাইনাল এক নয়। নতুন ম্যাচ, অন্য ভেন্যু। ফলটাও যে ভিন্ন হবে না তার নিশ্চয়তা কি?

ইনজুরির কারণে নেইমারের ছিটকে যাওয়ায় ব্রাজিল শিবিরে একটা হতাশা ছিল; কিন্তু হেসুস, ফিরমিনো আর ক্যাসেমিরোরা ছন্দে থাকায় অনেকটায় স্বস্তিতে দলের কোচ তিতে। আর পোস্টের নিচে অ্যালিসন তো এই কোপার সেরা গোলরক্ষক। যিনি এক মৌসুমে তিনটি গোল্ডেন গ্লাভস জিতে করতে যাচ্ছেন অনন্য রেকর্ড। তাই অনিশ্চয়তা শব্দটি বাদ দিলে কোপার ফাইনালে ব্রাজিলই ফেবারিট।

ব্রাজিলের নবম নাকি পেরুর দ্বিতীয় শিরোপা 1
ব্রাজিলের নবম কিংবা পেরুর দ্বিতীয় শিরোপার জন্য এদের জ্বলে উঠা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তবে, রোববার টিটের ব্রাজিল ঘরের মাঠে কোপা আমেরিকার ট্রফি হাতে তুললে তা হবে দলীয় খেলার জয়। কারণ এই ব্রাজিল দলে সেই অর্থে মেগাস্টার নেই। নেইমার টুর্নামেন্টের আগেই চোটের কারণে ছিটকে যাওয়ায় ব্রাজিলের শাপে বর হয়েছে। তারা ফাইনালে উঠে এসেছে কোনো ম্যাচ না হেরে এবং একটাও গোল (প্যারাগুয়ের সঙ্গে টাইব্রেকারে খাওয়া গোল বাদে) না খেয়ে।

মারাকানা স্টেডিয়ামে পেরুর বিরুদ্ধে ফাইনালেও গোল খেতে নারাজ ব্রাজিল। দলের নির্ভরযোগ্য মিডফিল্ডার কাসেমিরো বলেছেন, ‘আমাদের লক্ষ্য কোনো গোল না খেয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়া। ফাইনালে যদি আমরা গোল না খাই, তাহলে আমি নিশ্চিত আমাদের স্ট্রাইকাররা জয়ের গোল এনে দেবেই।’

পেরুর বিরুদ্ধে গ্রুপ লিগের খেলায় কৌতিনহো, ফিরমিনো, জেসুসরা ৫-০ গোলে জিতেছিলেন। ফাইনালে অবশ্য সেই ম্যাচ মাথায় রাখতে নারাজ অ্যালিসনরা। ব্রাজিল গোলকিপার একটাও গোলহজম না করে এখন দলের অন্যতম নায়ক। তিনি বলেছেন, ‘গত দু-বারের চ্যাম্পিয়ন চিলিকে যে দল তিন গোলে উড়িয়ে ফাইনালে ওঠে, তাদের হাল্কাভাবে নেয়ার কোনো সুযোগই নেই। তারা এখন ভয়ঙ্কর।’

পেরুর ফরোয়ার্ড পাওলো গুয়েরেরোকে নিয়ে চিন্তায় রয়েছে পুরো ব্রাজিল ডিফেন্স। ৩৫ বছর বয়সী পেরুর এই ফরোয়ার্ড ব্রাজিলের ফুটবল মহলে অত্যন্ত পরিচিত মুখ। কারণ তিনি ব্রাজিলের ক্লাব দলেই নিয়মিত খেলেন এবং প্রচুর গোল করেন।

চিলি বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে তিনিই ম্যাচের নায়ক। ব্রাজিল দলেরর ডিফেন্ডার মারকুইনহোস বলেছেন, ‘পাওলো কতটা সুযোগসন্ধানী স্ট্রাইকার তা আমরা জানি। আমি তার সঙ্গে করিন্থিয়ান্সে খেলেছি। তার বিরুদ্ধেও খেলেছি। তাই তাকে আলাদা করে নজরে রাখতেই হবে।’

পেরুরর স্ট্রাইকার রাউল রুইদিয়াজ বলেছেন, ‘আমরা ঠাণ্ডা মাথায় ধীরে ধীরে প্রতি ম্যাচে উন্নতি করছি। তাই উরুগুয়ে, চিলির মতো দুই সেরা দলকে হারিয়ে ফাইনালে। এবার ব্রাজিলকে হারানোর জন্য আমরা আত্মবিশ্বাসী। বহু বছর পর দেশকে কোপা দেয়ার স্বপ্নে আমরা মরিয়াও।’

মরিয়া মেজাজ দেখাচ্ছেন ব্রাজিল কোচও। রাশিয়া বিশ্বকাপের ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলে টিটের হাত ধরে ব্রাজিল দল ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও কোপায় নিজেদের ঘরের মাঠে প্রথম দুই ম্যাচে দর্শকদের বিদ্রুপের শিকার হতে হয়েছিল। টিটে বলেছেন, ‘কোপা জেতাটা জরুরি দেশের মানুষের মনে আমাদের সম্পর্কে সমীহ ফেরানোর জন্য।’

তবে সেমিতে আর্জেন্টিনা হারালেও ব্রাজিলের কোপা জয়ের ‘কাঁটা’ হয়ে উঠতে পারেন এক আর্জেন্টাইন। যার নাম রিকার্দো গারেকা। ৬১ বছরের গারেকাই পেরুর কোচ। ২০১৫ সাল থেকে এই দেশের দায়িত্বে থাকলেও সেই অর্থে তার কোনো বড় সাফল্য নেই। আর্জেন্টিনার জাতীয় দলে ফরোয়ার্ডে খেলা তারকা গারেকার লক্ষ্য, কোচিং জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য পেতে এই ট্রফি জেতা।

ব্রাজিলের ফুটবল সম্পর্কে তার পরিস্কার ধারণা আছে। কারণ পেরুর কোচ হওয়ার আগে গারেকা ব্রাজিলের ক্লাব পালমেইরাসে কোচিং করিয়েছিলেন। তার মন্তব্য, ‘ব্রাজিলকে এগিয়ে রেখেও বলছি, আমাদের ছেলেদের ফাইনালে জেতার ক্ষমতা আছে। সেটা তারা চিলি ম্যাচে বুঝিয়ে দিয়েছে।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!