ব্যবসার নামে সাবেক মেরিন কর্তার সঙ্গে প্রতারণায় আওয়ামী লীগ নেতা, বৈঠক বসলেই দেখান অস্ত্রের ভয়

দেশে যে দল যখন সরকার, মনছুর আলম পাপ্পী তার—চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে লোকমুখে এমন কথার প্রচলন রয়েছে। থানা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি তিনি। তবে তার প্রতারণার শিকার হয়ে সব হারিয়ে দিশেহারা সাবেক এক মেরিন কর্মকর্তা।

জানা গেছে, গত বছরের ১২ আগস্ট আমরিন অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী মনছুর আলম পাপ্পীর সঙ্গে দু’বছরের জন্য বালি উত্তোলনের সরঞ্জাম ভাড়ার চুক্তি করেন পিএসপি মেরিন সার্ভিসেসের স্বত্বাধিকারী ক্যাপ্টেন কে এম হাফিজুর রহমান। কিন্তু চুক্তির কোনো শর্ত না মেনে প্রতারণার জাল পেতে অবসরপ্রাপ্ত এ ব্যবসায়ীর তিলে তিলে গড়া ড্রেজার, বাল্কহেডসহ আনুষাঙ্গিক সরঞ্জাম আত্মসাতের চেষ্টা করছেন পা্প্পী।

চুক্তিপত্রের শর্ত অনুযায়ী, কর্ণফুলী নদী থেকে লোডিং করে পূর্ব কালুরঘাট, পশ্চিম কালুরঘাট, সিঅ্যান্ডবি, নতুন ব্রিজ, ১২ নম্বর, ভেল্লাপাড়া, পটিয়া সংলগ্ন জায়গায় বালি আনলোডিং করা হবে। এতে প্রাথমিকভাবে নতুন ব্রিজের জন্য দৈনিক ২৫ হাজার ঘনফুট বালি সরবরাহ করা হবে মর্মে প্রতি ঘনফুট বালির জন্য দুই টাকা ৩০ পয়সা ভাড়া মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে অন্যান্য সাইডে চলমান দর ও দূরত্ব অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করা হবে। তাছাড়া শর্ত ভঙ্গের কারণে চুক্তি বাতিল করার জন্য এক মাস আগে জানিয়ে যে কোনো পক্ষ তা বাতিল করতে পারবে।

চুক্তি অনুযায়ী, আট লাখ টাকা যন্ত্রাংশ মেরামত বাবদ পরবর্তী সময়ে খরচে সমন্বয় করা হবে। এরপর একই বছরের ৭ অক্টোবর এম ভি মরিয়ম নামে আরেকটি আনলোডিং ড্রেজার পাইপসহ ১ টাকা মূল্যে ভাড়া চুক্তি হয়। সর্বমোট ১২ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের ৪০ ফুটের ৯৮টি পাইপ তাকে দেওয়া হয়।

অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন কে এম হাফিজুর রহমান বলেন, ‘করোনার সময়ে বালুর চাহিদা কমে যাওয়ায় ব্যবসায় মন্দা প্রভাব পড়ে। তাছাড়া অফিস ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল। এ সময় ব্যবসা রান করার জন্য এমবি আফিয়া ইবনাত ও এমবি বন্নি (১২ ইঞ্চি আনলোডিং এবং লোডিং ড্রেজার) এম.বি ওয়াস্তাবির-২ ও এমবি নিলয় ফায়াজ নামে দুটি বাল্কহেড ড্রেজারসহ আনুসাঙ্গিক ইক্যুইপমেন্ট ভাড়ার চুক্তি করি পাপ্পীর সঙ্গে।’

কে এম হাফিজুর রহমান বলেন, ‘চুক্তিপত্র অনুযায়ী পাপ্পী কোনো শর্তই মানেননি। এক মাস পর থেকে কাজ শুরু করার কথা থাকলেও তিনি চার মাস পর কাজ শুরু করেন। দুটি ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করে দৈনিক টাকা তুলে নিয়ে যেতেন। আমাদের সঙ্গে চুক্তি থাকলেও তিনি কোনো ধরনের পেমেন্ট আমাকে করেনি। তাছাড়া একটি বাল্কহেড ফেলে রেখে নষ্ট করে ফেলেন। গত ৯ মে পাঁচটি ইকুইপমেন্টের মধ্যে তিনটি ফেরত চেয়ে নোটিশ পাঠাই। কিন্তু এতে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ ছিল না।’

এসব বিষয় নিয়ে ব্যাবসায়িক বৈঠকে বসলে বিভিন্ন সময় পাপ্পী তার সহচরদের বলেন, ‘ঢাকা যাওয়ার জন্য অস্ত্র, গোলাবারুদ গাড়িতে লোড কর।’ এসব বলে তিনি ভয় দেখানোর চেষ্টা করতেন।’

তিনি আরও বলেন, তার এমন কর্মকাণ্ডে গত ৯ জুন বাকলিয়া থানায় তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুল হক বরাবরে সাধারণ ডায়েরির (জিডি) আবেদন করি। কিন্তু বোয়ালখালীর স্থানীয় মন্ত্রীর অনুরোধে জিডি আবেদন গ্রহণ করা হয়নি। পরে এ বিষয়ে তৎকালীন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার সালেহ মো. তানভীরের বরাবর অভিযোগ করি। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি চুক্তিনামা বাদ দিয়ে মালিকানাপত্র করে নিতে বলেন।

এরপর ১৭ জুলাই বাকলিয়া থানায় আবারও জিডি করি। গত ৪ আগস্ট চট্টগ্রাম চতুর্থ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরিফুল ইসলামের আদালতে এ বিষয়ে মামলা দায়ের করি। পরবর্তীতে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বাকলিয়া থানাকে আদেশ দেন আদালত। এ বিষয়ে রোববার (২৮ আগস্ট) আদালত বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। সোমবার (২৯ আগস্ট) এ বিষয়ে আদালত শুনানি করবেন বলে জানান তিনি।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!