ব্যতিক্রম শুধু রেজাউল, নির্বাচন পেছাতে চান বাকি সবাই

চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ৬ মেয়র প্রার্থীর ৫ জনই চান করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হোক। পিছিয়ে দেওয়া না হলে নির্বাচন থেকেই সরে দাঁড়ানোর হুমকিও দিয়েছেন কোনো কোনো প্রার্থী। এর মধ্যে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন সরাসরিই বলে দিয়েছেন, জনগণের নিরাপত্তার জন্য নির্বাচন থেকে যদি সরে যেতে হলে তিনি রাজি। ব্যতিক্রম শুধু আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী। ‘নির্বাচনের সুন্দর পরিবেশ বজায় রয়েছে’ বলে জানিয়ে তিনি বলছেন, ‘নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না।’

করোনাভাইরাসজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। শুরুতে এ নিয়ে প্রায় সব প্রার্থীই সিদ্ধান্তহীনতায় থাকলেও করোনাভাইরাসে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলে অনেক প্রার্থীই জনস্বার্থের কথা চিন্তা করে নির্বাচন পেছানোর দাবিতে সরব হয়ে ওঠে।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্টের এম এ মতিন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আবুল মনজুর, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের ওয়াহেদ মুরাদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জান্নাতুল ইসলাম, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এম রেজাউল করিম চৌধুরী এবং বিএনপির ডা.শাহাদাত হোসেন।

করোনাভাইরাসজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচন স্থগিত চেয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার মো. হাসানুজ্জামানের হাতে স্মারকলিপি দিয়েছে বিএনপি। শুক্রবার (২০ মার্চ) দুপুরে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল নোমানের নেতৃত্বে বিএনপি স্মারকলিপি দেয়। এ সময় বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমরা মানুষের জন্য, জনগণের জন্য রাজনীতি করি। জনগণকে বাদ দিয়ে আমরা রাজনীতি করতে পারি না। জনস্বার্থে আমরা নির্বাচন স্থগিত করতে বলছি। বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে গিয়ে এ ধরনের একটি কাজ করছে তারা। জনগণের নিরাপত্তার জন্য নির্বাচন থেকে যদি সরে যেতে হয় আমি রাজি আছি।’

তবে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী শুরু থেকেই নির্বাচন না পেছানোর পক্ষে মতপ্রকাশ করে আসছেন। তিনি বলেন, ‘করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এ নিয়ে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না।’

রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন যে তারিখ নির্ধারণ করেছে সে তারিখেই নির্বাচন হয়ে গেলে ভালো হয়। নির্বাচনের সুন্দর পরিবেশ বজায় রয়েছে। করোনা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কোন প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।’

এদিকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন স্থগিত করার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট মনোনীত মেয়রপ্রার্থী মাওলানা এমএ মতিন। তিনি বলেছেন, সরকার একদিকে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে সভা-সমাবেশ-জমায়েত বন্ধ করার আহবান জানাচ্ছে বিপরীতে নির্বাচন কমিশন চসিকসহ বিভিন্ন জায়গায় নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্তে অনড় অবস্থান প্রকাশ করছে। তিনি সিইসির এ স্ববিরোধী ও দ্বিমুখী আচরণের নিন্দা জানিয়ে বলেন-যেখানে করোনো সতর্কতায় পৃথিবীর উন্নত রাষ্ট্রগুলো লকডাউনে যাচ্ছে সে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্ত না দিয়ে জনগণকে চরম ঝুঁকির মুখে ফেলে দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।

শুক্রবার (২০ মার্চ) নির্বাচন স্থগিতের দাবি জানিয়ে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ে রিটার্নিং অফিসারের বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন মনোনীত প্রার্থী মো. জান্নাতুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, ‘দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে চসিক নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্ত না নিলে আমরা উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হবো। ইতিমধ্যে আমরা সকল ধরনের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা বন্ধ করে দিয়েছি।’

একইদিন ইসলামিক ফ্রন্ট মনোনীত মেয়র প্রার্থী এম ওয়াহেদ মুরাদের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি প্রাণঘাতি ভাইরাসের কারণে চসিক নির্বাচন সাময়িকভাবে পেছানোর দাবিতে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশন বরাবরে লিখিতভাবে আবেদন জানায়।

যেকোনোভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের অতি উৎসাহ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এটা হতে পারে দায়সারা গোছের একটা নির্বাচনের আয়োজন। অথবা নির্বাচনী ব্যয় বাজেট নিঃশেষ করার উদ্দেশ্য থাকতে পারে। স্থগিতাদেশের ঘোষণা আসতে যত দেরি, তত বেশি খরচ করতে পারে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু এই টাকা তো জনগণের।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!