বেহাল সড়কে হাঁটা-চলাই দায়

দুর্ভোগে গর্জনিয়া-নাইক্ষ্যংছড়ির ৫ লক্ষাধিক মানুষ

কক্সবাজারের রামুর গর্জনিয়া থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কটির অবস্থা এমনই বেহাল, হেঁটে চলাচলও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় ওই সড়কটিতে বড় বড় গর্ত ও সেই গর্তে পানি জমে থাকে। প্রতিদিনই গাড়ি খাঁদে পড়ে যায়। যোগাযোগ নিয়ে চরম দুর্ভোগে আছেন রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ৫ ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ।

জানা যায়, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা থেকে রামু উপজেলার গর্জনিয়া বাজারে যেতে হলে যেখানে মাত্র দুই কিলোমিটার রাস্তা।সড়কটির শুরুতেই নাইক্ষ্যংছড়ি খালের উপর ব্রিজ। ওই ব্রিজটির অবস্থান নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি ব্যটেলিয়ান ও নাইক্ষ্যংছড়ি থানার মাঝে। ৫ বছর আগে কাঠ বোঝাই একটি ট্রাক খাঁদে পড়ার পর ব্রিজের মারাত্মক ক্ষতি হয়।

তখন সেই ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ দিয়ে বিজিবির পক্ষ থেকে ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। রামু উপজেলার ৩ ইউনিয়ন গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া, ঈদগড় ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দুই ইউনিয়ন দৌছরি ও বাইশারী ইউনিয়নের ২ লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াতের মাধ্যম এ রাস্তা বন্ধ হওয়ার পর থেকে বিকল্প রাস্তা হিসেবে নাইক্ষ্যংছড়ির রূপনগর হয়ে তুলাতলী পর্যন্ত এই রাস্তাটি ব্যবহার হচ্ছে। এর ফলে দুই কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ পাড়ি দিতে হয়।

তুলাতলীর বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা ভোলা শর্মা জানান, এই রাস্তাটি ২০০২ সালের দিকে এলজিইডির মাধ্যমে সাধারণ জনসাধারণের যাতায়াতের রাস্তা হিসেবে ব্যবহার হতো আর এই পথ দিয়ে শতাধিক পরিবারের শত শত শিক্ষার্থীরা পায়ে হেঁটে স্কুল কলেজ ও মাদরাসায় যেত। বর্তমানে এ সড়ক দিয়ে দৈনিক শত শত মালবোঝাই ভারি যানবাহন চলাচল করায় এতে করে রাস্তাটি খাঁদে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে শিক্ষার্থীরা পায়ে হেঁটে বিদ্যালয়ে যাওয়া ও মুশকিল হয়ে পড়েছে। এমন কোন দিন নেই দুয়েকটি গাড়ি খাঁদে পড়ছে না।

গর্জনিয়া বাজার চাউল ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিম জানান, আমরা প্রতিবছর ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা তুলে চেয়ারম্যানের মাধ্যমে এই রাস্তাটি গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করে থাকি। কিন্তু জোড়াতালি মেরামতে পাঁচ দশদিনের মাথায় খাঁদে পরিণত হয়ে আমাদের মালবোঝাই গাড়িগুলো নিয়ে গর্জনিয়া বাজারে পৌঁছাতে খারাপ দশা হয়।

গর্জনিয়া বাজার ব্যবসায়ী মো. শফি, ডা. শফিক আহমদ, সাবেক মেম্বার আবু আয়ুব আনসারী ও মো. ইদ্রিসসহ অনেক ব্যবসায়ীরা জানান, এই বাজার থেকে সরকার প্রতি বছর প্রায় কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করছে। বর্তমানে যোগাযোগ ভোগান্তির কারণে এই বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে ক্রেতা ও বিক্রেতারা।

দোছরী ইউনিয়নের বাকখালী মৌজার ইউপি মেম্বার নুরুল ইসলাম, বাইশারী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মনিরুল হক মনু জানান, এই বিকল্প সড়কটিও প্রায় বন্ধের পথে। এটি বন্ধ হলে বন্ধ হবে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বৃহত্তর এই গর্জনিয়া বাজারটি। অপরদিকে পাঁচটি ইউনিয়নের দুই লক্ষাধিক মানুষের ইউনিয়ন থেকে উপজেলা ও জেলা সদরে যোগাযোগে ভোগান্তির আশংকা করছে তারা।

মাঝিরকাটার সিরাজুল ইসলাম জানান, মাঝিরকাটা, বড়বিল, তিতার পাড়া, ফাক্রিকাটা, ঝাউস পাড়াসহ এই এলাকাগুলো শাক-সবজি ও ফলমূলের এলাকা হিসেবে পরিচিত। এখান থেকে প্রতি মৌসুমে হাজার হাজার মেট্রিকটন আলো, শসা, বাদাম, মুলা, বেগুন, টমেটোসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফল ও শাকসবজি এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার চাহিদা পূরণ করে আসছে।

অনেক কৃষক এ প্রতিবেদককে জানান, রাস্তাটি সহসা সংস্কার না হলে এলাকার কৃষকসহ ব্যবসায়ীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে তেমনি পাশ্ববর্তী জেলাগুলোতে ফলমূল পাঠানো সম্ভব হবে না।

এ বিষয়ে কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু মো. ইসমাঈল (নোমান) জানান, ‘এই রাস্তাটির জন্য প্রপোজল দেওয়া হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে রামু-কক্সবাজারের সংসদের প্রচেষ্টায় কার্পেটিং করা হবে।’

এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!