বেদের বেশে চট্টগ্রামের চোরাপথে ইয়াবার চালান যায় ঢাকায়

এমন অভিনব কৌশল আর দেখেনি শৃঙ্খলা বাহিনী

বেদের বেশে দীর্ঘদিন ধরেই কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন চোরাপথ ব্যবহার করে ঢাকায় ইয়াবা বিক্রি করে আসছিল পাঁচ তরুণ। তাদের পূর্বপুরুষরা বেদে হলেও পরে বাপ-দাদারা বেদে জীবন থেকে চলে যান অন্য পেশায়। তাদেরই উত্তরসূরী এই পাঁচ তরুণ টাকার লোভে পড়ে ফের ভাসমান বেদের পরিচয় কাজে লাগিয়ে ইয়াবা বহন করার কাজ শুরু করে। এই চক্রটি কড়ি ও তাবিজ বিক্রির ছলে কক্সবাজারের সীমান্ত থেকে ইয়াবা নিয়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন চোরাপথ বেয়ে ঢাকায় যায়। সেখানে নির্দিষ্ট জায়গায় ইয়াবার চালান পৌঁছে দেয়।

মঙ্গলবার (৪ মে) রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিশেষ অভিযান চালানো হয় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলা ব্রিজ এলাকায়। এ সময় বেদের ছদ্মবেশে মাদক পাচারকালে ৭৭ হাজার পিস ইয়াবাসহ পাঁচ তরুণকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-২-এর একটি দল। গ্রেপ্তার এই তরুণরা হলেন তারিকুল ইসলাম (২৩), মো. সিনবাদ (২৩), মিম মিয়া (২২), মো. ইমন (১৯) ও মো. মনির (২৮)।

র‌্যাব-২ অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার বলেন, ‘বেদের ছদ্মবেশে চক্রটি কক্সবাজার থেকে ইয়াবা নিয়ে গ্রামগঞ্জ হয়ে ঢাকায় আসে। তারা কখনও মহাসড়কে আসে না। ভেতরের সড়কগুলো ব্যবহার করে তারা ঢাকায় পৌঁছায়। এই চক্রটি এর আগেও এভাবে রাজধানীতে ইয়াবা নিয়ে এসেছে। কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে একজন ইয়াবা কারবারি তাদের এসব ইয়াবা দিয়েছে।’

বেদের বেশে চট্টগ্রামের চোরাপথে ইয়াবার চালান যায় ঢাকায় 1

র‌্যাব কমান্ডার আরও জানান, ‘তাদের কাছ থেকে ছদ্মবেশ ধারণের সরঞ্জাম, রান্নার হাঁড়ি-পাতিল, বালতি, বহনযোগ্য ডিসপ্লে র‌্যাক এবং নানা ধরনের ইমিটেশন অলংকার, কড়ি, তাবিজসহ বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধার করা হয়।’

জানা যায়, বেদের ছদ্মবেশ ধারণ করা ওই চক্রটি নিয়মিত কক্সবাজারের সীমান্ত এলাকা ও সমুদ্রপথে বাংলাদেশে আসা ইয়াবা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করে আসছিল। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে অভিনব কায়দা হিসেবে বেদের ছদ্মবেশ ধারণ করে মাদক বহন করে নিয়ে আসতো। মাদক পরিবহনের জন্য টিনের তৈরি সহজে বহনযোগ্য রান্না করার চুলার মধ্যে বিশেষ কায়দায় ইয়াবা লুকিয়ে তা আবার ঝালাই করে জোড়া লাগিয়ে দিতো। তারা মাদকের চালান কক্সবাজার এলাকা থেকে রাজধানী ঢাকায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে কখনোই মহাসড়ক ব্যবহার করতো না।

কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত আসার ক্ষেত্রে তারা মহাসড়ক ব্যবহার না করে বিকল্প হিসেবে গ্রামের ভেতরের রাস্তা দিয়ে বিভিন্ন ইজি বাইক, সিএনজি, টেম্পো ব্যবহার করে পথ পাড়ি দিতো। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসার ক্ষেত্রে তারা চট্টগ্রাম সিটি গেইটসহ বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট এড়ানোরও চেষ্টা করতো। এই চক্রে রয়েছে একজন গাইড বা লাইনম্যান। মূলত নিরাপত্তার বিষয়টি তিনি দেখভাল করেন।

জিজ্ঞাসাবাদের ওই পাঁচ তরুণ জানান, প্রথম ধাপে তারা চট্টগ্রামের আনোয়ারা থেকে হাটহাজারী-মানিকছড়ি-গুইমারা-রামগড় হয়ে ফেনী আসতেন। সেখান থেকে তারা নোয়াখালীর চৌমুহনী, সোনাইমুড়ি এবং চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ হয়ে মতলব লঞ্চঘাট পর্যন্ত আসতেন। দ্বিতীয় ধাপে তারা সেখান থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় চড়ে মুন্সীগঞ্জ হয়ে বুড়িগঙ্গা নদী দিয়ে ঢাকার প্রবেশ করতেন। এতে তাদের ৪/৫ দিন অথবা কোনও কোনও সময় এক সপ্তাহ পর্যন্ত লেগে যেতো বলে জানান তারা।

দীর্ঘ এই সময়ে তারা বেদেদের মতোই জীবনযাপন করতেন। সাধারণ মানুষের সন্দেহ দূর করতে পথের মাঝে বিভিন্ন মনোহারি পণ্য— চুড়ি, কড়ি, চুল বাঁধার ফিতা, শিশুদের কোমরে বাঁধার ঘণ্টা, চেইন, সেফটিপিন, বাতের ব্যথার রাবার রিং ইত্যাদি বিক্রি করতো। মাদক পরিবহনের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ ধরনের কৌশলের মুখোমুখি এর আগে কখনও হয়নি। তারা যে রুটটি ব্যবহার করছে তাও একেবারে নতুন বলা চলে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!