বেতন কমালো ৫ ব্যাংক, কমাতে রাজি নয় ৯ ব্যাংক

বেতন কমানোর প্রথম উদ্যোগটি নিয়েছিল বেসরকারি এক্সিম ব্যাংক। এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবার ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবির সভাপতিও। এক্সিম ব্যাংকের পথ ধরে কর্মীদের বেতনভাতা কমানোর ঘোষণা দেয় সিটি ব্যাংক। এরপর বেতন কমানোর উদ্যোগ নেয় এবি ব্যাংক। চলতি মাসে এই ধারায় যুক্ত হল ওয়ান ব্যাংকও। বেতন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকও। এছাড়া আরও কয়েকটি ব্যাংক অনেকটা নিরবে কর্মীদের বেতন কমিয়ে দিয়েছে। লোকলজ্জা ও চাকরি বাঁচাতে কর্মীরাও সেসব নিয়ে উচ্চবাচ্য করছেন না। ব্যাংকগুলোর কর্তৃপক্ষ বলছে, মহামারি করোনার আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এই ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।

এদিকে আবার উল্টো ঘোষণা দিয়ে বেশ কয়েকটি ব্যাংক তাদের কর্মীদের বেতনভাতা না কমানোর সিদ্ধান্তের কথাও জানিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক—ইউসিবি এবং সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। ইস্টার্ন ব্যাংক ও এনসিসি ব্যাংকও কর্মীদের বেতন না কমানোর পক্ষে।

বেতন না কমানোর পক্ষে যুক্তি দিয়ে ওই ব্যাংকগুলোর কর্তৃপক্ষ বলছেন, করোনাভাইরাসের মধ্যে ব্যাংক কর্মকর্তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জনগণের সেবা দিয়ে আসছে। করোনার প্রভাবে নেতিবাচক অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে ব্যাংকারদের ফ্রন্টলাইনার যোদ্ধা হিসেবে মনোবল ধরে রাখা প্রয়োজন।

এদিকে জানা গেছে, এবি ব্যাংক মে মাস থেকেই এন্ট্রি লেভেল থেকে এমডি পর্যন্ত ৩ ও ৫ শতাংশ হারে বেতনভাতা কমিয়েছে। করোনার এই দুর্যোগের মধ্যেই রোববার (১২ জুলাই) এবি ব্যাংকের ১২১ জন কর্মকর্তাকে ছাঁটাই করা হল চাকরি থেকে।

দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেড ইতিমধ্যে তার কর্মীদের ১৬ শতাংশ বেতনভাতা কমিয়েছে। এই ১৬ শতাংশের মধ্যে ১০ শতাংশ বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা ৬ শতাংশ। গত ১ জুন থেকেই কার্যকর হওয়া এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এছাড়া ব্যাংকটি ২০২১ সালে পারফরম্যান্স বোনাস ও ইনক্রিমেন্টও দেবে না।

অন্যদিকে ওয়ান ব্যাংক কমিয়েছে ৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বেতন, যা গত ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে বলে গত ৯ জুলাইয়ের এক অফিস আদেশে জানানো হয়। ওই আদেশে জানানো হয়, পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক অফিসার থেকে সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার পর্যায়ের কর্মকর্তা, যাদের বেতন ৫০ হাজার টাকার বেশি তাদের বেতন ৫ শতাংশ কমানো হয়েছে। অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট (এভিপি) থেকে শুরু করে উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বেতন কমানো হয়েছে ১০ শতাংশ। বেতনের পাশাপাশি অন্যান্য সুযোগ সুবিধা ৫ ও ১০ শতাংশ হারে কমানো হবে। তবে ৫০ হাজার টাকা বা তার নিচে যারা বেতন পান তাদের বেতন কমানো হবে না। আর ৫০ হাজার টাকার ওপরে যারা বেতন পান তাদের বেতন কমানোর পর যদি ৫০ হাজার টাকার নিচে নেমে আসে তাহলে তার বেতন ৫০ হাজার টাকা নির্ধারিত হবে।

এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকও বেতন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কর্মকর্তাদের মোট (গ্রোস) বেতনের ওপর ১০ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেতন কমাচ্ছে এ ব্যাংক। কয়েকটি ভাগে ভাগ করে বেতন কমাচ্ছে ব্যাংকটি। প্রথম ভাগে ৪০ হাজার টাকার ওপরে কিন্তু এক লাখ টাকার নিচে তাদের বেতন ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমবে। এক লাখ থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত কমবে ১৫ শতাংশ। যারা দুই লাখ বেতন পান তাদের কমবে ২০ শতাংশ। ব্যাংকের ডিএমডিদের কমবে ২৫ শতাংশ এবং এমডির (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) বেতন কমবে ৪০ শতাংশ। জুলাই মাস থেকে আগামী বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ নিয়ম কার্যকর থাকবে। এসময় ইনসেনটিভ বোনাস ও ইনক্রিমেন্টও দেওয়া হবে না।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!