বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৬ বনে সড়ক ও বিদ্যুৎ লাইনে পরিবেশের সর্বনাশ

ক্ষতিপূরণ চাইবে বনবিভাগ

অনুমতি ছাড়াই চট্টগ্রামের ৬ সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও এলাকার মধ্য দিয়ে সড়ক ও বৈদ্যুতিক লাইনসহ অবকাঠামো নির্মাণের সঙ্গে জড়িত মন্ত্রণালয়গুলোর কাছে ক্ষতিপূরণ চাইবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। আইন অনুযায়ী সংরক্ষিত বনের ভেতর রাস্তাঘাট, রেললাইন ও বিদ্যুতের লাইন নির্মাণের কোনও সুযোগ নেই। বনবিভাগ এসব অবকাঠামোর কারণে বন-পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের কাছে ক্ষতিপূরণ চাইবে। সংরক্ষিত বনাঞ্চলের এমন বেআইনি কাজের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এ সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় চট্টগ্রামের যেসব সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও এলাকায় অনুমতি ছাড়াই বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চালিয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের হাজারীখিল সংরক্ষিত বন, কক্সবাজারের লিঙ্ক রোড থেকে টেকনাফ সড়ক, কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুর মৌজার ইয়াংছা থেকে জিদ্দাবাজার, মাতামুহুরী সংরক্ষিত বনভূমি, বান্দরবানের সাঙ্গু সংরক্ষিত বন, চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চল।

জানা গেছে, গত মাসের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্য দিয়ে কী পরিমাণ সরকারি অবকাঠামো নির্মাণ হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে সড়ক ও জনপদ বিভাগ এবং বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় কী পরিমাণ রাস্তাঘাট ও বৈদ্যুতিক লাইন নির্মাণ করেছে তার আংশিক তথ্য তুলে ধরা হয়। ওই বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনা শেষে এসব অবকাঠামো নির্মাণে গাছ-গাছালিসহ পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের কী পরিমাণ ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে মন্ত্রণালয়কে তা নিরূপণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। একইসঙ্গে সিদ্ধান্ত হয় সরকারের কোন কোন সংস্থা কী পরিমাণ ক্ষতি করেছে তা যাচাই করে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের। এছাড়া সংরক্ষিত বনের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের প্রকল্প আর গ্রহণ করা না হয় সে সুপারিশও আসে বৈঠক থেকে। এমনকি বিদ্যমান প্রকল্পগুলো বাইপাস করে বনের পাশ দিয়ে নেওয়া যায় কিনা সে বিষয়েও আলোচনা হয় বৈঠকে।

সংসদীয় কমিটিতে মন্ত্রণালয়ের দেওয়া প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে চট্টগ্রামের হাজারীখিল সংরক্ষিত বনের ভেতরে বর্তমানে ৯ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ হচ্ছে। কক্সবাজারের লিঙ্ক রোড থেকে টেকনাফ সড়কের দুই পাশে সড়ক ও জনপথ বিভাগ রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ করেছে। কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের আওতাধীন চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুর মৌজার ইয়াংছা থেকে জিদ্দাবাজার পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক পাকা (সওজ) করা হচ্ছে বর্তমানে। মাতামুহুরী সংরক্ষিত বনভূমির মধ্য দিয়ে অনুমোদন ছাড়াই আলীকদম-পোয়ামুহুরী পর্যন্ত ৩৭.৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৯.৮ মিটার প্রস্থের দুই লেন রাস্তার নির্মাণকাজ চলছে। বান্দরবানের সাঙ্গু সংরক্ষিত বনের মধ্য দিয়ে থানচি-রেমাক্রি-মদন-লিকরী ৪০-৪৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্য দিয়ে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) মেঘনা-মদুনাঘাট পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজ চালাচ্ছে।

এছাড়া ওই প্রতিবেদন থেকে আরও জানা গেছে, গাজীপুর সদর, জয়দেবপুর ও শ্রীপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে ৫৬ কিলোমিটার পাকা সড়ক নির্মাণ হয়েছে। গাজীপুর সদর, জয়দেবপুর ও শ্রীপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে ১৭২ কিলোমিটার বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইন নির্মাণ হয়েছে। এছাড়া দেশের ৮ জেলার ২৪ উপজেলার বনাঞ্চলের মধ্যদিয়ে ৪৫৭ কিলোমিটার বৈদুতিক লাইন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আলোচনায় এসেছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের মধ্য দিয়ে রেললাইন নির্মাণের বিষয়টিও।

জানা গেছে, সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বন মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রটোকল তৈরি করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয় যাতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় নতুন কোনও প্রকল্প তৈরির সময় সংরক্ষিত বনের বিষয়টি বিবেচনায় নেয়। কর্মকর্তারা জানান, অনেক সময় প্রকল্প গ্রহণের সময় প্রকল্প এলাকা সংরক্ষিত বনের ওপর দিয়ে গেলেও তা একনেক বৈঠকের নজরে আসে না। এজন্য প্রকল্প প্রস্তাবনায় একটি অনুচ্ছেদ জুড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে ওই প্রকল্প রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ হলেও যেন জানা থাকে যে এটা সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!