বৃষ্টি ছাড়াই দুই ফুট পানির নিচে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ!

শুধু যে বর্ষা মৌসুমে চোখের জল ফেলতে হয় চাক্তাই খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের তা কিন্তু নয়। বৃষ্টিপাত ছাড়াই জোয়ারের পানিতে ভাসতে হয় ব্যবসায়ীদের। এ যেন জলে কুমির ডাঙায় বাঘ! কিছুতেই দুর্ভোগ কমছে না চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের। ভরদুপুরে ভারি বৃষ্টিপাত ছাড়াই জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে চাক্তাই খাতুনগঞ্জের নিম্নাঞ্চল। এ সময় নিচু এলাকার বেশ কিছু দোকান ও গুদামেও পানি প্রবেশ করেছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকার পরেও জোয়ারের পানির ধাক্কায় ব্যবসায়ীরা দিশেহারা হয়ে পড়েন।

জোয়ার এলেই ধস নামে ব্যবসায়িক কাজে। এ নিয়েও অনেক ব্যবসায়ী আবার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, শুধুমাত্র জোয়ারের পানি এবং জলাবদ্ধতার কারণে অনেক ব্যবসায়ী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থানান্তর করেছেন। কিন্তু জনপ্রতিনিধিরা প্রতিবছরই জোয়ারের পানি রোধে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও মূলত পরিস্থিতি যেন ‘যে লাউ সেই কদু’। যদিও ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) চাক্তাই খালের কর্ণফুলী মোহনায় জোয়ারের প্রতিরোধক স্লুইচ গেট নির্মাণ করছে। স্লুইচ নির্মাণ কাজ উদ্বোধনের প্রায় দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ।

এদিকে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা জানান, সকাল থেকে রৌদ্রোজ্জল আবহাওয়া ছিল। তারপরেও জোয়ারের পানিতে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসা বাণিজ্য একপ্রকার থমকে গেছে। জোয়ারের পানি থেকে বাঁচতে ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীরা দোকান গুদামের তলা উঁচু ও প্রবেশপথে দুই ফুট পর্যন্ত দেয়াল তৈরি করেছেন। কিন্তু জোয়ারের পানির উচ্চতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই ব্যবসায়ীদেরও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তাই ব্যবসায়ীদের দাবি যত দ্রুত সম্ভব চাক্তাই খালের কর্ণফুলী মোহনায় জোয়ার প্রতিরোধক স্লুইচ গেট নির্মাণ করার।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জোয়ারের পানিতে মধ্যম চাক্তাই, নতুন চাক্তাই, চর চাক্তাই, পুরনো চাক্তাই, মকবুল সওদাগর রোড ও আসাদগঞ্জের নিম্নাঞ্চল হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়া খাতুনগঞ্জের চান্দমিয়া গলি, ইলিয়াছ মার্কেট, বাদশা মার্কেট, সোনা মিয়া মার্কেট, আমির মার্কেট, নবী মার্কেট, চাক্তাই মসজিদ গলি, ড্রামপট্টি, চালপট্টি ও এজাজ মার্কেটের সড়কের সামনেও পানি জমে যায়। জোয়ারের পানিতে এসব এলাকার কয়েকটি দোকান ও গুদামে পানি প্রবেশ করে পণ্য ভিজে যায়। ক্ষয়ক্ষতি থেকে পণ্য বাঁচাতে এসময় দোকান-গুদাম থেকে পণ্য সরাতে শ্রমিকদের ব্যস্ত সময় কাটাতে দেখা গেছে।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি সোলায়মান বাদশা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেশের মোট ভোগ্যপণ্যের ৪০-৫০ শতাংশ খাতুনগঞ্জে বিকিকিনি হয়। প্রতিদিন গড়ে হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয় এ বাজারে। কিন্তু চাক্তাই-রাজাখালী খাল কার্যত ভরাট হয়ে যাওয়ায় জোয়ারের পানিতেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। জলাবদ্ধতায় ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকার পণ্য নষ্ট হচ্ছে। লোকসানের মুখে পড়ে ব্যাংকের দেনা শোধ করতে পারছেন না অনেক ব্যবসায়ী। এতে কেউ কেউ দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে সিডিএ স্লুইচ গেট নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। কিন্তু যে গতিতে কাজ হওয়ার কথা তা হয়নি। তবে আমাদের দাবি হচ্ছে স্লুইচ গেট নির্মাণের পাশাপাশি কর্ণফুলী নদীর ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে পানির ধারণ ক্ষমতা বাড়াতে হবে।

এদিকে নগরবিদরাও কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে পানির ধারণক্ষমতা বাড়ানোর ওপর বারবার গুরুত্বারোপ করছেন। তবে কর্ণফুলী তলদেশে প্লাস্টিক বর্জ্যের আস্তরণের কারণে ড্রেজিং কাজও ব্যাহত হচ্ছে। তাই চাক্তাই খাতুনগঞ্জসহ পুরো নগরীতে জোয়ারের পানির প্রবেশ রোধ এবং জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিতে খাল খনন, পরিস্কার, স্লুইচগেট নির্মাণ এবং কর্ণফুলীর ড্রেজিং সমস্যা সমাধান করে চলমান প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে বর্ষা চলে গেলেও শরতের আকাশে মেঘ ভর করে গতকাল থেকে কয়েক দফা বৃষ্টির ঘনঘটা দেখা গিয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় প্রায় ৩০ মিনিটে ৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে সেই বৃষ্টিতে তেমন ক্ষতি না হলেও প্রায় প্রতিদিনই জোয়ারের পানিতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় ব্যবসায়ীদের। প্রায় ঘণ্টাখানেক জোয়ারে পানিতে তলিয়ে যায় পুরো এলাকা। দেখে মনে হতে পারে ছোটখাটো কোনো ময়লা ডোবা খাল। ব্যবসায়ীদের বৃষ্টি এলেও জ্বালা আবার জোয়ারেও জ্বালা। উভয় পরীক্ষায় ভাসা লাগে পানিতে। নিস্তার মিলবে কবে জানা নেই কারোরই!

এসআর/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!