সীতাকুণ্ড থেকে আসা ৬৫ বছর বয়সী মহিলাটি ভুগছিলেন জ্বর ও তীব্র শ্বাসকষ্টে। তীব্রতা বেড়ে গেলে তাকে ভর্তি করানো হয় চট্টগ্রাম নগরীর মেহেদিবাগের ন্যাশনাল হাসপাতালের আইসিইউতে (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট)। হঠাৎই ওই হাসপাতালের চিকিৎসকদের মনে হল ওই মহিলা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। মুহূর্তেই হাসপাতালটির পরিচালক এসে বৃদ্ধাকে বের করে দিলেন আইসিইউ থেকে। সাধারণ সিটে পড়ে থাকা ওই বৃদ্ধার কাছে ডাক্তার তো দূরের কথা, একটা নার্স-আয়া পর্যন্ত যাননি। তার স্বজনরা আকুতিমিনতি জানালেও মন গলেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। আইসিইউ ছাড়া হওয়ার মাত্র একঘন্টার মধ্যে ওই বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর দিন সীতাকুণ্ডের বিশেষায়িত হাসপাতাল ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) থেকে রিপোর্ট এলো ওই মহিলা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন না।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত করোনা সন্দেহ করে চিকিৎসা না করাটা উচিত হয়নি বলে মন্তব্য করে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেছিলেন, ‘এ ধরনের কিছু কিছু অভিযোগ পাচ্ছি। আমরা বারবার বলছি এমনটা যেন না হয়। বিএমএও বলছে কাউকে যেন চিকিৎসা বঞ্চিত করা না হয়।’
মাত্র দুই মাস আগের ঘটনা এটি। চট্টগ্রাম প্রতিদিনে এ নিয়ে তখন রিপোর্টও প্রকাশিত হয়েছিল। বৃদ্ধাকে করোনাসন্দেহে হাসপাতালের আইসিইউ থেকে বের করে দিয়েছিলেন যে পরিচালক, মাত্র দুই মাসের মাথায় সেই পরিচালকই সপরিবারে আক্রান্ত হলেন করোনাভাইরাসে। শুধু তাই নয়, নিজের হাসপাতালেই তিনি আইসিইউতে থাকতে পারলেন না। চট্টগ্রাম থেকে পরিবারসহ চলে যেতে হচ্ছে ঢাকায়।
সোমবার (১ জুন) চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রকাশিত করোনা টেস্টের ফলাফলে করোনা রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে ন্যাশনাল হাসপাতালের পরিচালক ডা. আবু নাছেরের। পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা এই চিকিৎসকের পরিবারে করোনা ধরা পড়েছে আরও দুজনের। এদের একজন ২৯ বছর বয়সী চিকিৎসক ও ১৫ বছর বয়সী এক কিশোর। তবে ডা. নাছেরের স্ত্রীর রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে।
জানা গেছে, ন্যাশনাল হাসপাতালে আইসিইউ খালি থাকলেও তা পরিচালনা করার মতো চিকিৎসক ও নার্স নেই। ডা. আবু নাছের সপরিবারে চট্টগ্রাম ছেড়ে ঢাকায় চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ডা. আবু নাছেরের হার্টে একাধিক রিং পড়ানো আছে। যে কোন সময় তার আইসিইউ সাপোর্ট দরকার হতে পারে বলে জানান তার ঘনিষ্ঠজনরা।
ডা. আবু নাছের ঈদের আগে করোনা আক্রান্ত চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমির জাফর সাদেকের চিকিৎসা তদারকি করেছিলেন ন্যাশনাল হাসপাতালে। জাফর সাদেকের অবস্থার অবনতি ঘটার পর তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হলেও আবু নাছেরের শরীরে করোনা লক্ষণ প্রকাশ পায়।
চট্টগ্রামে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনা রোগী দামপাড়ার মুজিবুল হকের চিকিৎসা দিয়ে ন্যাশনাল হাসপাতালের দুই ডজনেরও বেশি চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফ হোম কোয়ারেন্টাইনে গিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন চট্টগ্রামের শীর্ষ একজন গ্যাস্ট্রোলজিস্ট ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। করোনা উপসর্গ নিয়ে সম্প্রতি ন্যাশনাল হাসপাতালের একজন শীর্ষ কর্মকর্তাও মৃত্যুবরণ করেছেন বলে জানা গেছে।
এফএম/সিপি