বুমরার বুম বুম বোলিংয়ে উড়ে গেলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ

পাহাড় ডিঙাতে গিয়ে পাহাড়ের পাদদেশেই বুমরার বোলিং তোপে মুখ থুবড়ে পড়ার অবস্থা হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজে। ৪১৯ রানের বিশাল লক্ষ্য সামনে দাঁড়ানোর পরই বোঝা হয়ে গিয়েছিল, এই টেস্টে আর জয় পাওয়া হচ্ছে না ওয়েস্ট ইন্ডিজের। বরং, সবারই চিন্তা ছিল, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যবধান কতটা কমিয়ে আনতে পারে। কিন্তু সেই ব্যবধানটাও খুব বেশি কমাতে পারলো না ক্যারিবীয়রা। জসপ্রিত বুমরাহ’র তোপের মুখে স্বাগতিকরা দ্বিতীয় ইনিংসে ২৬.৫ ওভারেই অলআউট হয়ে গেলো মাত্র ১০০ রানে। ফলে ৩১৮ রানের বিশাল ব্যবধানে প্রথম টেস্ট জয় করে নিলো বিরাট কোহলির দল।

অ্যান্টিগা টেস্টের পুরো একটি দিন বাকিই থেকে গেলো। প্রথম ইনিংসে ৮১ এবং পরের ইনিংসে ১০২ রান করার সুবাধে ম্যাচ সেরার পুরস্কার উঠলো আজিঙ্কা রাহানের হাতে।

ক্যারিবীয়দের প্রথম ইনিংসে ঝড় তুলেছিলেন ইশান্ত শর্মা। দ্বিতীয় ইনিংসেও তিনি উইকেট পেলেন। কিন্তু জেসন হোল্ডারের দলের ওপর মূলতঃ আঘাতটা হানলেন জসপ্রিত বুমরাহ’ই। মাত্র ৮ ওভার বল করে ৪ মেডেন এবং ৭ রান দিয়ে তিনি নেন ৫ উইকেট। তার এই বিধ্বংসী বোলিংয়েই কোমর ভেঙে যায় ক্যারিবীয়দের। ৯.৫ ওভার বল করে ৩১ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন ইশান্ত শর্মা। মোহাম্মদ শামি নেন ২ উইকেট।

পুরো ম্যাচের প্রথম সেশন বাদ দিলে, ভারতের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর কখনোই ম্যাচে ছিল না। দ্বিতীয় ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ঘাড়ে ৪১৯ রানের বড় বোঝা চাপিয়ে দেওয়ায় কোহলিদের জয়ের সম্ভাবনা প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল; কিন্তু তবে জয়টা যে চতুর্থ দিনেই তুলে নেবে কোহলিরা, সেটা ভাবতে পারেনি খোত ভারতীয়রাও।

প্রথম ইনিংসে ৮১ এবং পরের ইনিংসে ১০২ রান করার সুবাধে ম্যাচ সেরার পুরস্কার উঠে আজিঙ্কা রাহানের হাতে
প্রথম ইনিংসে ৮১ এবং পরের ইনিংসে ১০২ রান করার সুবাধে ম্যাচ সেরার পুরস্কার উঠলো আজিঙ্কা রাহানের হাতে

শুধু জয়ই নয়, রীতিমত রেকর্ড গড়ে ফেলেছে ভারত। কারণ, দেশের বাইরে এটাই টিম ইন্ডিয়ার সবচেয়ে বড় ব্যবধানে টেস্ট জয়। এর আগে গলে শ্রীলঙ্কার মাটিতে তাদেরকে ৩০৪ রানে হারিয়েছিল ভারত। এতদিন সেটাই ছিল ভারতের রেকর্ড জয়। অ্যান্টিগায় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩১৮ রানে পরাস্ত করে কোহলিরা শ্রীলঙ্কাকে লজ্জা থেকে মুক্তি দিয়ে দিলো।

ভারতের ২৯৭ রানের জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংসে অলআউট হয়ে যায় ২২২ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে তৃতীয় দিনের শেষে ভারত ৩ উইকেটে ১৮৫ রান তুলেছিল। এরপর চতুর্থ দিন খেলতে নেমে ভারত ৭ উইকেট হারিয়ে ৩৪৩ রানে ইনিংস ঘোষণা করে। প্রথম ইনিংসের ৭৫ রানের লিড মিলিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে ৪১৮ রানে এগিয়ে থাকে ভারত।

দ্বিতীয় ইনিংসে জয়ের জন্য ৪১৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ শুরু থেকেই একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে। এতটাই খারাপ অবস্থা যে, একসময় দেখা গেলো ১৫ রানে নেই তাদের ৫ উইকেট। এ সময় তো ক্যারিবীয়রা টেস্ট ইতিহাসে সর্বনিম্ন রানের লজ্জার রেকর্ড গড়ে বসে কি না সে চিন্তাতেই ঘুরপাক খাচ্ছিল।

১৫ রানে ৫ উইকেট থেকে ৯ উইকেটে ৫০ রান হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের। এ সময় ক্যারিয়াদের মান-সম্মান কিছুটা হলেও বাঁচাতে লড়াকু ভুমিকা পালন করেন দুই বোলার কেমার রোচ আর মিগুয়েল কামিন্স। ডিআরএসের সৌজন্যে ৫০ রানের মাথায় বেঁচে গিয়েছিলেন রোচ। না হয়, ওই ৫০ রানেই শেষ হয়ে যেতো ক্যারিবীয়রা। শেষ পর্যন্ত রোচ এবং কামিন্স মিলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান গিয়ে ঠেকান ১০০-তে। সর্বোচ্চ ৩৮ রান করেন কেমরা রোচ আর মিগুয়েল কামিন্স অপরাজিত থেকে যান ১৯ রানে।

ভারতকে জিতিয়ে ম্যাচ শেষে বুমরাহ বলেন, ‘প্রথম ইনিংসে বল ভিজে যাওয়ায় সে রকম সুইং পাইনি। দ্বিতীয় ইনিংসে বৃষ্টি না হওয়ায় সেই অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়নি। এর আগেও ইংল্যান্ডে ডিউকস বল হাতে সাফল্য পেয়েছিলাম। এখানেও সেই ডিউকস বল সামলাতে তাই অসুবিধা হয়নি। ধারাবাহিকভাবে টেস্ট খেলে যাওয়ায় একটা আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়ে গিয়েছিল। যা কাজে লাগিয়েই এই সাফল্য পেলাম।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!