বিয়ে, বিচ্ছেদ, যৌন হয়রানি— রাঙামাটির এক নারী পুলিশের তিন অস্ত্র!

হ্যামি প্রু মারমা (৩৯)। নামটি সারল্যে ভরা পাহাড়ি নারীর নাম হলেও কর্মকাণ্ড সেভাবে সরল নয় পুলিশের এই নারী এসআইয়ের। ধর্ম ও নাম পরিবর্তন করে তিনি বারবার বিয়ে করেন। আবার সব স্বামীর বিরুদ্ধেই মারধর ও নির্যাতনের অভিযোগ এনে তাদের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটান। অভিযোগ উঠেছে, প্রাক্তন সব স্বামীর কাছ থেকেই তিনি অর্থ আত্মসাত করেছেন তিনি। সর্বশেষ তিনি চতুর্থ স্বামী থুই হলা প্রু মারমাকে ডিভোর্স দিয়েছেন। অন্যদিকে নিজ অফিসেও উর্ধ্বতন বিভিন্ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মিথ্যা অভিযোগ এনে তাদের নাজেহাল করেন তিনি।

এমনই সব গুরুতর অভিযোগের তথ্য পাওয়ার পর তার সাথে যোগাযোগ করতেই ওই নারী ও তার সহযোগী কনস্টেবল অশ্রাব্য ভাষায় হুমকিও দেন এ প্রতিবেদককে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ২০১৯ সালে সদর কোর্ট রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পুলিশ পরিদর্শকের বিরুদ্ধে কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ আনেন রাঙ্গামাটি সদর কোর্টে কর্মরত এসআই হ্যামি প্রু মারমা। ওই অভিযোগ এখনো বিভাগীয় তদন্তের অধীনে। অভিযুক্ত কারা পরিদর্শকের ভাষ্যমতে, ‘ছুটির বিষয়কে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিরোধে কুপ্রস্তাব দিয়েছেন দাবি করে এমন অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। হ্যামি প্রু মারমা পুলিশ কনস্টেবল লুগু চাকমার সাথে যোগসাজশে এসব মিথ্যা অভিযোগ এনে আমাকে হয়রানি করছেন।’

সদর কোর্ট রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পুলিশ পরিদর্শক মো. জামির হোসেন জিয়া বলেন, ‘হ্যাপি আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনেছে সেগুলো মিথ্যা। বাকিটা তদন্তে প্রমাণিত হবে।’

এদিকে প্রথম স্বামী কমল মারমার লিখিত অভিযোগ (নম্বর ১৩/১১৫৪০) থেকে জানা যায়, হ্যাপি কখনও সামিয়া হোসেন কখনওবা হ্যামি হোসেন। আবার বিয়ের কাজ শেষে চাকরির প্রয়োজনে ফের হ্যামি প্রু মারমা বনে যান। বিয়ের প্রয়োজনে তিনি একাধিকবার মুসলিম, আবার মুসলিম থেকে বৌদ্ধ ধর্মেও ধর্মান্তরিত হন।

প্রথম স্বামী কমল তার অভিযোগে আরও জানান, মিথ্যা যৌন হয়রানির অভিযোগ আনা হ্যাপির স্বভাব। ১৯৯৯ সালে সারদা কনস্টেবল হিসেবে প্রশিক্ষণরত ভাইস প্রিন্সিপাল আবদুস সামাদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন তিনি। সেটিও মিথ্যা প্রমাণিত হয়। হ্যাপির বাবা হাবিলদার উসানু মারমা বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে ৬ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি বলে জানান কমল।

রাঙ্গামাটি সদর কোর্ট কর্মরত এসআই হ্যামি প্রু মারমার সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগই মিথ্যা। আমার আগের বাঙ্গালি স্বামী আমাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসাচ্ছে।’

প্রতিবেদকের সাথে আলাপচারিতার কিছুক্ষণ পরই কুরুচিপূর্ণভাবে আক্রমণাত্মক কথা বলেন। এরপরেই অন্য একটি নম্বর থেকে ফোন করে তার সাথে থাকা কনস্টেবল প্রতিবেদকের সাথে অশালীন ভাষায় কথা বলেন।

সদর সার্কেল রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাপস রঞ্জন ঘোষ বলেন, ‘এটা আসলে বিভাগীয় অভিযোগের বিষয়। আমরা এটা নিয়ে তদন্ত করছি। তদন্তে বের হয়ে আসবে আসল সত্য।’

জানতে চাইলে ডিআইজি চট্টগ্রাম খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’

এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!