বিয়ের টাকা-ফার্নিচার পুড়ে ছাই সাতকানিয়ায়

মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে সব প্রস্তুতি সেরে রেখেছিলেন আবদুল খালেক। রোববার (১৩ মার্চ) তার মেয়ের বিয়ে। মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে ঘরে টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও নতুন আসবাবপত্র রাখা ছিল। কিন্তু কে জানতো মুহূর্তেই তার সব স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে যাবে আগুনে।

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার নলুয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড দক্ষিণ মরফলা ভরাদীঘির পূর্ব পাড়ে কামাল কোম্পানির বাড়ি এলাকায় শুক্রবার (১১ মার্চ) গভীররাত ১টায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

অগ্নিকাণ্ডে ১১টি বসতঘর ও ৬টি গোয়ালঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, আসবাবপত্রসহ প্রায় ৩৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার ১৫ ঘণ্টা অতিক্রম হলেও জনপ্রতিনিধি, উপজেলা প্রশাসন ও সমাজের বিত্তশালীরা কেউ এগিয়ে না আসায় বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্তরা খোলা আকাশের নিচে মানবেতর দিনযাপন করছেন।

আগুনে পুড়েছে দিদারুল আলম, আব্দুল মান্নান, এনামুল হক, জাগির হোসেন, নুরুল আলম, আব্দুল খালেক, সাইর আহমদ, আব্দুল হামিদ, শহিদুল ইসলাম, মঞ্জুর আলম, ও শামসুল ইসলামের বসতঘর।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার গভীর রাত ১টার দিকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। আগুনের লেলিহান শিখা ঘরগুলোতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে প্রায় ২ ঘণ্টা স্থায়ী আগুনে ১১টি বসতঘর ও ৬টি গোয়ালঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে নগদ ৫ লাখ টাকা, ১২ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, আসবাবপত্রসহ ৩৫ লাখ টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত আব্দুল খালেক বলেন, রোববার (১৩ মার্চ) আমার মেয়ের বিয়ে। বিয়ের খরচ বাবদ ঘরে ছিল নগদ দেড় লাখ টাকা। মেয়েকে দেয়ার জন্য ৩ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নতুন আসবাবপত্র এনে রেখেছিলাম। এছাড়া বর যাত্রীদের খাওয়ানোর জন্য ঠিক করা হয়েছে কমিউনিটি সেন্টারও। আগুনে আমার সব কেড়ে নিয়েছে। এখন আমি পথের ভিখারি। কীভাবে আমি মেয়েকে বিয়ে দেবো? আমি কৃষিকাজ করে সংসার চালায়। এখনো পর্যন্ত কেউ সহায়তায় করতে এগিয়ে আসেনি। সব মিলিয়ে আমার ৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

নলুয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক এলাকার লোকদের সঙ্গে নিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করি। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে প্রায় ৩৫ লাখ টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে জানান ক্ষতিগ্রস্তরা। স্থানীয়ভাবে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা এখনো ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেননি।

তবে নবনির্বাচিত নলুয়া ইউপি চেয়ারম্যান লেয়াকত আলী নিজ উদ্যোগে নতুন ঘর নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, রাতে আমি আগুন লাগার খবর পেয়েছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি সহায়তা দেবো। এছাড়া নতুন ঘর নির্মাণসহ তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতার চেষ্টা করব।

সাতকানিয়া ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা এসএম হুমায়ুন বলেন, বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি।

সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা-তুজ-জোহরা বলেন, বিষয়টি আমি অবগত আছি। আমি এখন ছুটিতে আছি। কাল (রোববার) অফিসে গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেবো। তবে নলুয়ার চেয়ারম্যান আমাকে এখনো কিছুই জানাননি এবং অফিসিয়াল ফোনও করেননি।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!