বিয়ের আসরে বরের মৃত্যু, কে দেবে কাকে সান্ত্বনা?

সাজানো যে গেইট দিয়ে নতুন বউয়ের ঘরে প্রবেশ করার কথা ছিল, সেই একই গেইট দিয়ে লাশের কফিনে কবরস্থানে যেতে হলো নতুন বরকে। মৃত্যু অনিবার্য। সবাইকেই মৃত্যুবরণ করতে হবে। কিন্তু এই দিন, এই ভাবে! কে দেবে কাকে সান্ত্বনা? হৃদয়বিদারক এই অভাবনীয় ঘটনাটি ঘটেছে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার হোছনাবাদ ইউনিয়নের মোগলের হাট নলুয়ারপাড়া এলাকায়।

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বিয়ের আসরেই মৃত্যু হয় ওই এলাকার মোহাম্মদ জাফর আহমদের বিদেশফেরত ছেলে মোহাম্মদ সোলাইমানের (৩০)। বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) তার মেহেদী রাত ছিল এবং বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) ছিল তার বিয়ের অনুষ্ঠান। কিন্তু মেহেদীর দিনই মারা যান তিনি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মির্জা সেকান্দর হোসেন।

মেহেদী রঙ্গে রাঙ্গাতে প্রস্তুত ছিল বাড়ির সবাই। দুই সপ্তাহ আগে থেকেই দাওয়াতনামা ছেপে অতিথি নিমন্ত্রণ থেকে শুরু করে কয়েকদিন ধরে ঘর সাজানো, বিয়ের প্যান্ডেল, গেইট, লাইটিংসহ যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছিল। অপেক্ষা শুধু নতুন বউ ঘরে তোলার।

ইউপি চেয়ারম্যান মির্জা সেকান্দর হোসেন বলেন, বিয়ের পাত্রীর সঙ্গে তার ১০ দিন আগে সামাজিকভাবে আক্দ হয়। বুধবার মেহেদী অনুষ্ঠান ও বৃহস্পতিবার বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। এজন্য বিয়ের ক্লাব, ঘর সাজানো, মেহমান আসাসহ যাবতীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিল। আগের দিন রাত থেকেই তার শরীর খারাপ লাগার বিষয়টি বাড়ির লোকদের জানিয়েছিল। সকালেও নতুন বউয়ের সাথে তার ফোনে কথা হচ্ছিল। কিন্তু কথা বলতে বলতেই ‘খারাপ লাগতেছে’ বলে মাটিতে পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে সে। স্থানীয়রা তার চোখেমুখে পানি দেওয়ার পরও তার জ্ঞান ফিরছিল না। পরে তাকে চন্দ্রঘোনা মিশন হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

চিকিৎসক জানান, হৃদরোগেই মৃত্যু হয়েছে ওই যুবকের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিয়ে বাড়ির সব আয়োজন শেষ। অপেক্ষা শুধু নতুন বউ ঘরে তোলার। সব ঠিক থাকলেও বরের নিথর দেহ পড়ে আছে বাড়ির উঠানে খাটের ওপর। সাজানো প্যান্ডেলে বাড়িভর্তি মেহমানসহ পরিবারের স্বজনদের যেখানে আনন্দ-উৎসব করার কথা ছিল, সেখানে লাশের কফিনকে ঘিরে কান্নায় ভেঙে পড়েছে। কে দেবে কাকে সান্ত্বনা! বিয়ে বাড়ির শোকের মাতম ছড়িয়ে পড়েছে পুরো উপজেলায়।

পরিবারের স্বজনরা জানান, নিহত সোলাইমান পরিবারের সবার বড় সন্তান। দীর্ঘ সময় প্রবাসে ছিলেন তিনি। সম্প্রতি দেশে ফিরলে স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নের শান্তিনিকেতন এলাকা থেকে তার বিয়ের পাত্রী ঠিক হয়। গত ১০ দিন আগে তার আকদও সম্পন্ন হয়। কিন্তু যেদিন তার মেহেদী রাত ছিল, সেদিন বিয়ের আসরেই সকাল ৯টার দিকে হঠাৎ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যায় মোহাম্মদ সোলাইমান। একই দিন বাদে আসর জানাজা নামাজ শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।

আরিফুল হাসনাত, রাঙ্গুনিয়া

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!