বিস্ফোরণে বাবা-ছেলের মৃত্যু কাপ্তাইয়ে, ২৪ ঘণ্টায়ও মেলেনি ক্লু
ঘরে ‘গ্রেনেডের পিন’ পাওয়ার দাবি পুলিশের
রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলায় ‘অজ্ঞাত বস্তু’ বিস্ফোরণে বাবা-ছেলের মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টা পার হলেও ক্লু উদ্ঘাটন হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, বিস্ফোরিত ঘরটিতে বেশকিছু ‘গ্রেনেডের’ পিন পাওয়া গিয়েছে।
বিস্ফোরণে নিহত ইসমাইল হোসেন বেশকিছু পরিত্যক্ত লোহার সামগ্রী বাসায় এনেছেন, যেগুলোতে বিস্ফোরিত সামগ্রী বা বোম সদৃশ্য কিছু ছিল বলে ধারণা পুলিশের।
এদিকে বিস্ফোরণে নিহত মো. ইসমাইল মিয়া ও তার ছেলে মো. রিফাতের (৭) ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে জানায় পুলিশ।
রোববার (৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ৪ নম্বর কাপ্তাই ইউনিয়নের বাদশামিয়া টিলা এলাকায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বাবা-ছেলে ঘটনাস্থলে নিহত হলেও ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী মোছা. সখিনা বেগম (৩৫) গুরুতর আহত হন। রোববার রাতেই তাকে কাপ্তাইয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তারর শারীরিক অবস্থা শঙ্কামুক্ত বলে জানা গেছে।
বিস্ফোরণের সময় পরিবারের চার সদস্যের তিনজন ঘরে উপস্থিত থাকলেও ইসমাইলের মেয়ে ইসরাত জাহান ফারিয়া (৭) ঘরের না থাকায় সে রক্ষা পায়।
সোমবার (৯ জানুয়ারি) সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বিস্ফোরণে নিহত ইসমাইল হোসেনের বাড়ির আসবাব ও অন্যান্য জিনিসপত্র ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে আছে। যে ঘরটিতে বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেখানে এখনও রক্তের ছাপ রয়ে গেছে।
ছেলে ও নাতিকে অকালে হারিয়ে যেন পাথর হয়ে আছেন ইসমাইলের বাবা আজহার উল্লাহ (৬৫)। তিনি বলেন, ‘আমি মাঠে গিয়েছিলাম গরু আনতে, এসে দেখি সব শেষ হয়ে গেছে।’
ইসমাইলের বোন পারভীন আক্তার ঘটনার বিবরণ দিয়ে জানান, আমরা বিকট শব্দ শোনার পর মনে করি, এখানে বিদ্যুৎ ট্রান্সফরমার বিস্ফোরিত হয়েছে। পরে এসে দেখি আমরা ভাইয়ের ঘর অন্ধকার, আর আমার ভাবি চিৎকার করছে। একপর্যায়ে ঘরের দরজা বন্ধ থাকায় আমরা দরজা ভেঙে ঢুকে দেখি আমার ভাই ও ভাইয়ের ছেলে বিস্ফোরণে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তারপর আমরা দ্রুত পানি ঢেলে দিয়ে তাদের হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করি।’
নিহত ইসমাইল হোসেনের প্রতিবেশী রোমানা আক্তার জানান, ইসমাইলের বউসহ আমি প্রতিদিন গরুর ঘাস আনতে জঙ্গলে যাই। ঘটনার দিন সকালেও আমরা একইসঙ্গে জীবতলী এলাকায় গরুর ঘাস সংগ্রহে যাই। সেখানে একটি ‘লাল বল জাতীয় বস্তু’ দেখতে পেয়েছি। যেটি ইসমাইলের বউ খেলার বস্তু ভেবে ছেলের জন্য নিয়ে আসেন।
এলাকাবাসীর ধারণা, ওই বস্তুটি বিস্ফোরিত হয়েছে। এ ঘটনার সকলে হতবাক হয়ে পড়েছেন।
রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কাপ্তাই সার্কেল) রওশন আরা রব বলেন, ‘বিস্ফোরণে নিহত বাবা-ছেলের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। যে ঘরের ভেতর বিস্ফোরণে হয়েছে, সেখানে বিস্ফোরণের পর ‘গ্রেনেডের পিন’ পাওয়া গিয়েছে। পরিবারের লোকজন কোথাও থেকে লোহজাতীয় জিনিস বাসায় এনেছে। যেগুলো সেনাবাহিনী কিংবা নৌবাহিনীর কোনো প্রশিক্ষণ স্থানের আশপাশ থেকেও নিয়ে আসতে পারেন। তবে আজকে বোম ডিসপোজাল ইউনিট ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছেন। তারা পরিদর্শন শেষে অফিসিয়ালি কোনো মন্তব্য করেননি। তাই আপাতত ঘটনার ক্লু বলা যাচ্ছে না।’
ডিজে