বিসিবির চুক্তিতে ‘ভুলে’ বাদ পড়া সৌম্য মাসে পাবেন চার লক্ষ টাকা

তামিম পাবেন ৬ লাখ, অন্যরা কে কত?

প্রথমবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) বেতনভুক্ত খেলোয়াড়দের যে নামের তালিকা প্রকাশ করে সেখানে ছিল না সীমিত ওভারের খেলায় গত বছর দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করা সৌম্য সরকারের নাম। তালিকার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ার পরের দিন প্রথম টি-টোয়েন্টিতে সৌম্য সরকার খেলেন ম্যাচ জয়ী ধ্রুপদী ইনিংস, করেন ম্যাচ সর্বোচ্চ ৬২ রান। ৩২ বলের সেই ক্যামিও ইনিংসে ছিল চারটি চার ও পাঁচটি ছয়ের মার। অবশ্য সৌম্য মাঠে থাকতেই বিসিবির প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু জানান, টাইপিং ভুলের কারণে সৌম্য সরকারের নাম বাদ যায়। অবশেষে বিসিবি মঙ্গলবার (১০ মার্চ) নতুনভাবে যে তালিকা প্রকাশ করে সেখানে সৌম্যকে রাখা হয় সাদা বলের (সীমিত ওভার) ক্রিকেটের সর্বো্চ্চ স্তর ‘এ প্লাস’ ক্যাটাগরিতে। যার অর্থ প্রথমে চুক্তিতে বাদ পড়া সৌম্য সরকার এখন মাসে পাবেন চার লক্ষ টাকা করে।

সৌম্যসহ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড যে ১৭ জন ক্রিকেটারকে কেন্দ্রীয় চুক্তির অন্তর্ভূক্ত করেছে, যেখানে সর্বোচ্চ বেতনের স্তরে থাকছেন মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং সৌম্য সরকার। মুশফিকুর রহিম ও তামিম ইকবাল এ প্লাস ক্যাটাগরিতে ‘লাল বল’ ও ‘সাদা বল’ এই দুই চুক্তিতেই আছেন। সর্বোচ্চ বেতন স্তরে থাকার কারণে এই চারজন ক্রিকেটারই মাসে বেতন পাবেন চার লক্ষ টাকা করে।এর পরের স্তর অর্থাৎ ‘এ’ ক্যাটাগরিতে আছেন শুধু মমিনুল হক সৌরভ। তিনি মাসে পাবেন ৩ লক্ষ টাকা।

বি ক্যাটাগরিতে রয়েছেন লিটন কুমার দাস, মেহেদী হাসান মিরাজ, মুস্তাফিজুর রহমান এবং তাইজুল ইসলাম। তবে তাইজুল সাদা বলের চুক্তিতে আছেন ডি ক্যাটাগরিতে। এই চারজন ক্রিকেটারের প্রতিজন প্রতি মাসে পাবেন দুই লক্ষ টাকা। সি ক্যাটাগরির ক্রিকেটারেরা পাবেন দেড় লক্ষ টাকা করে প্রতি মাসে। সি ক্যাটাগরিতে আছেন, সাদা বলের চুক্তিতে মোহাম্মদ মিথুন ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।

এক নজরে নতুন কেন্দ্রীয় চুক্তি যেমন হলো-
বাদ পড়েছেন: মাশরাফি মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, ইমরুল কায়েস, আবু হায়দার, খালেদ আহমেদ, রুবেল হোসেন ও সাদমান ইসলাম।
নতুন চুক্তি: নাজমুল হোসেন শান্ত, মোহাম্মদ মিঠুন, ইবাদত হোসেন, আফিফ হোসেন ও মোহাম্মদ নাঈম।
ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির কেন্দ্রীয় চুক্তি: তামিম ইকবাল, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন, মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিঠুন, তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ, মাহমুদউল্লাহ, সাইফউদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমান, আফিফ হোসেন, সৌম্য সরকার ও মোহাম্মদ নাঈম।
টেস্টের কেন্দ্রীয় চুক্তি: তামিম ইকবাল, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন, মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিঠুন, তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ, মুমিনুল হক, নাঈম হাসান, আবু জায়েদ ও ইবাদত হোসেন।

ডি ক্যাটাগরিতে আছেন সাদা বলের চুক্তিতে থাকা নাইম শেখ, আফিফ হোসেন ধ্রুব ও নাজমুল হোসেন শান্ত এবং লাল বলের চুক্তিতে থাকা নাইম হাসান, এবাদত হোসেন চৌধুরী, আবু জায়েদ রাহী ও মোহাম্মদ মিথুন। এর মধ্যে লাল ও সাদা বল উভয় ক্ষেত্রেই ডি ক্যাটাগরিতে আছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ডি ক্যাটাগরির সবাই এক লাখ টাকা করে বেতন পাবেন। চুক্তি থেকে বাদ পড়েছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা, যিনি নিজেই বিসিবির কাছে অনুরোধ করেছেন এবারের চুক্তিতে নাম না রাখার জন্য। আরও বাদ পড়েছেন সাকিব আল হাসান, যিনি সব ধরণের ক্রিকেটে বর্তমানে নিষিদ্ধ রয়েছেন।

চুক্তিতে জায়গা করে নিয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত, মোহাম্মদ মিথুন, এবাদত হোসেন চৌধুরী, আফিফ হোসেন ধ্রুব এবং নাইম শেখ। এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি বাড়ানো হয়। টেস্ট সংস্করণে প্রতি ম্যাচে একজন ক্রিকেটার এখন থেকে পাবেন ছয় লাখ টাকা। এর আগে যা ছিল তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা। বেড়েছে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের ম্যাচ ফি।

ওয়ানডেতে এর আগে ম্যাচ ফি ছিল দুই লাখ টাকা, তবে এখন থেকে ক্রিকেটারেরা পাবেন তিন লাখ টাকা করে। টি-টোয়েন্টিতে ২০১৭ সাল থেকে ক্রিকেটাররা পেতেন এক লাখ ২৫ হাজার টাকা করে, এখন থেকে পাবেন দুই লাখ টাকা। তবে এই অর্থ গ্রেড অনুযায়ী পাবেন ক্রিকেটাররা। আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশ ক্রিকেটে যে পয়েন্ট সিস্টেম, তার ভিত্তিতে ক্রিকেটারদের বেতন বাড়তে পারে।

কোনো ক্রিকেটার দুই চুক্তিতে থাকা মানে কিন্তু এই নয় যে তিনি দুই চুক্তিরই পুরো টাকা পাবেন। এ ক্ষেত্রে বিসিবির নিয়ম, ওই ক্রিকেটার দুই চুক্তির যেটিতে অপেক্ষাকৃত ওপরের শ্রেণিতে আছেন, সেটির পুরো বেতন এবং নিচের শ্রেণির অর্ধেক বেতন পাবেন। দুই চুক্তিতে একই শ্রেণিতে থাকলেও বেতন হবে এক চুক্তির পুরো এবং অন্য চুক্তির অর্ধেক পরিমান।

ওয়ানডের নতুন অধিনায়ক তামিম ও মুশফিক যেমন লাল ও সাদা বল দুই চুক্তিতেই আছেন ‘এ+’ শ্রেণিতে। বিসিবির বেতন কাঠামো অনুযায়ী তাদের বেতন দাঁড়াচ্ছে এক চুক্তির পুরো ৪ লাখ টাকা ও অন্য চুক্তির অর্ধেক ২ লাখ, মোট ৬ লাখ টাকা করে। সাথে অধিনায়ক ভাতা হিসাবে তামিমের অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসে বাড়তি যোগ হবে ৩০ হাজার টাকা। বেশি ম্যাচ খেলার সুবাদে মুশফিক বাড়তি পাবেন ২০ হাজার টাকা।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!