বিশ্ব পোলিও দিবস পালিত

১৯৮৮ সালের ২৪ অক্টোবর থেকে বিশ্ব পোলিও দিবস পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশেও দিবসটি দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মাধ্যমে পালিত হয়েছে। রোটারী অন্তর্জাতিকের পক্ষ থেকে পোলিও নির্মূলকরণে র‌্যালি বের করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামের সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। র‌্যালিতে স্লোগান ছিল ‘End polio now’।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি ‘ভ্যাকসিন হিরো’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। গত সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘের সদর দফতরে এ পুরস্কার গ্রহণ করেন তিনি। ১২৫ দেশে তিন লাখ ৫০ হাজার শিশু যখন মারণব্যাধি পোলিও ভাইরাসে আক্রান্ত, ঠিক তখন বাংলাদেশ পোলিওমুক্ত হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করে। রোটারি আন্তর্জাতিকের শ্রম, ঘাম, মেধা, বুদ্ধি আর অর্থ জোগানের প্রতিশ্রুতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিশ্চিন্তে নির্ভয়ে শুরু করে এ রোগ নির্মূল কর্মসূচি।

বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থান, ভৌগোলিক পরিবেশ বিবেচনা করে খাওয়ানোর টিকাকেই নির্ভরযোগ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। ১৯৩৬ সালে নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের মরিস ব্রুডি থেকে শুরু করে অনেক বিজ্ঞানী, ভাইরোলজিস্ট, ইমিউনোলজিস্ট যুক্তরাষ্ট্র, আলজেরিয়া ও নাইজেরিয়াসহ অনেক দেশে পোলিও আক্রমণের মহামারী ঠেকাতে টিকা, ওষুধ আবিষ্কারে নিরন্তর নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। হাজার লাখ ডলার বিনিয়োগের এই গবেষণায় প্রথম সফলতা আসে জোনাস সল্কের হাত ধরে। সফল এই বিজ্ঞানীর জন্মদিন ২৪ অক্টোবরকে স্মরণীয়-বরণীয় করার জন্য রোটারি আন্তর্জাতিকের দীর্ঘমেয়াদি সফল প্রয়াস এ দিবস।

পোলিও ভাইরাস দ্বারা সারা পৃথিবীর শিশুরা যখন আক্রান্ত, তখন জোনাস এডওয়ার্ড সল্ক ১৯৫২ সালে পোলিওর বিরুদ্ধে কার্যকর টিকা উদ্ভাবনের ঘোষণা দেন। এ টিকার কার্যোপযোগিতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলে আরো দুই বছর। অবশেষে ১৯৫৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের আর্সেনাল ইলিমেন্টারি স্কুল দ্য ওয়াটসন হোম ফর চিলড্র্রেন, পিটার্সবার্গ পেনসেলভেনিয়াতে পরীক্ষামূলকভাবে মানব শিশুর শরীরে এই টিকা প্রয়োগ করা হয়। পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪টি অঙ্গরাজ্যের ১৮ লাখ শিশুকে এই টিকার আওতায় আনা হয়। ১৯৫৭ সালে আলবার্ট সাবিন দুর্বল পোলিও ভাইরাস নির্মূলে দ্বিতীয় প্রকার টিকা, যেটি বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় খাওয়ার টিকা হিসেবে ব্যাপক ব্যবহৃত হয়, আবিষ্কার করেন। দুই ধরনের টিকাই সারা পৃথিবীতে সার্বজনীনভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

২০০০ সালের মধ্যে চীন ও অস্ট্রেলিয়াসহ মোট ৩৬টি পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পোলিও বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। ২০০২ সালে ইউরোপ পোলিওমুক্ত হয়। ভারত ২০১২ সালে পোলিও আক্রান্ত দেশের তালিকা থেকে বাদ যায়।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পোলিওমুক্তির সাফল্য অনেক বেশি গর্বের। ১৯৭৯ সাল থেকে টিকা কার্যক্রম শুরু করে সচেতন বাংলাদেশ। তবে পোলিও নির্মূলের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে আন্তর্জাতিক, জাতীয়, আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক টিকা দিবস ধারাবাহিকভাবে পালন শুরু করে ১৯৯৫ সাল থেকে। সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে রোটারি ক্লাবের স্বেচ্ছাসেবী কর্মকাণ্ড, নানা শ্রেণী ও সংগঠনের সম্পৃক্ততা, সাধারণ জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ পোলিওমুক্তির সফলতায় বাংলাদেশ খুব দ্রুত এগিয়ে যায়। নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচি জোরদারকরণ ধারাবাহিকতায় ২৭ মার্চ ২০১৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক পোলিওমুক্ত ঘোষণার মধ্য দিয়ে সফলতার বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি অর্জন করে বাংলাদেশ।

পোলিও রোগ ভাইরাস-ঘটিত সংক্রামক রোগ। সাধারণত পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে থাকে। এ ভাইরাস আক্রান্ত হলে আরোগ্যলাভের সুযোগ নেই। আক্রান্ত হওয়ার অনেক লক্ষণের মধ্যে গুরুতর লক্ষণ হলো জ্বর, শ্বাসকষ্ট শেষে পক্ষাঘাত বা পঙ্গুত্ব। বিপজ্জনক এই ভাইরাস ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণত খাদ্যের মাধ্যমে মুখগহ্বর দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে। মলের মাধ্যমে ছড়াতে পারে, শরীরে প্রবেশ করে। এই ভাইরাসের সংস্পর্শে স্নায়ুরজ্জু, স্নায়ুকোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাংসপেশী নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ুকোষকে আক্রান্ত করে বলে শরীর অবশ হয়ে যায়। নিম্নাঙ্গকে বেশি আক্রান্ত করে। তবে আক্রান্তের হার বেশি হলে নানা প্রত্যঙ্গে জটিলতা সৃষ্টি হয়। মস্তিষ্কে আঘাত হানে। শেষে মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

এসবি/এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!