বিশ্বের বৃহত্তম কার্বন বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে চট্টগ্রাম

বিশ্বের বৃহত্তম কার্বন বিপর্যয়ের অন্যতম ঝুঁকিতে রয়েছে চট্টগ্রাম। দেশে প্রস্তাবিত জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ চট্টগ্রাম বিভাগে থাকায় এই ঝুঁকিতে চট্টগ্রাম। এছাড়া কয়লা ও এলএনজিভিত্তিক মাতারবাড়ি-১ এবং মাতারবাড়ি-২ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থানীয় জলাশয়ের ব্যাপক ক্ষতিসাধনের সাথে ৬৭ হাজার মানুষের অকালমৃত্যু ডেকে আনবে বলে দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞরা। পরিবেশবিষয়ক দেশী ও আন্তর্জাতিক তিন সংগঠনের গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে গত ১৬ মে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (বাপা) ও মার্কেট ফোর্সেস, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ যৌথ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়া থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন মার্কেট ফোর্সেসের নির্বাহী পরিচালক জুলিয়ান ভিনসেন্ট। বক্তব্য রাখেন বাপার যুগ্ম সম্পাদক ও ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ। সঞ্চালনা করেন বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল।

‘চট্টগ্রাম অঞ্চলে জ্বালানি উৎপাদন পরিকল্পনা : সম্ভাব্য কার্বন বিপর্যয়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পের এই বিশাল সম্প্রসারণ প্রধানত জাপান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশী কোম্পানিগুলোর অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে।

প্রতিবেদনে চট্টগ্রামের প্রস্তাবিত ২০ গিগাওয়াট নতুন কয়লা ও গ্যাস বিদ্যুৎ ক্ষমতার বিরূপ প্রভাবের বিষয় তুলে ধরে বলা হয়, বিশাল নির্মাণ প্রকল্পগুলো স্থানীয় বাস্তুবিদ্যা এবং জলপথ, সম্প্রদায় এবং জীবিকা, স্বাস্থ্য, সে সাথে জলবায়ুর জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়লা ও এলএনজিভিত্তিক মাতারবাড়ি-১ এবং মাতারবাড়ি-২ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ইতোমধ্যে স্থানীয় জলাশয়ের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করছে। এই দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হলে তার দূষণে প্রায় ৬ হাজার সাতশ মানুষের অকালমৃত্যু হবে। হৃদরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হবে স্থানীয় জনগণ। এসব থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশেকে বায়ু ও সৌরবিদ্যুতের মতো নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন জরুরি বলে মত দেয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়া থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন মার্কেট ফোর্সেসের নির্বাহী পরিচালক জুলিয়ান ভিনসেন্ট। তিনি তার গবেষণাপত্রের কথা উল্লেখ করে বলেন, কয়লাভিত্তিক মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রেগুলোতে অর্থায়ন করছে জাপানি কোম্পানি। অথচ ২০২১ সালে জাপান জি-সেভেন সম্মেলনে কয়লাভিত্তিক প্রকল্পে অর্থায়ন না করার অঙ্গীকার করেছিল। অর্থাৎ মাতারবাড়ি-১ বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে অর্থায়ন করে দেশটি নিজেদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। এই প্রকল্পের কারণে স্থানীয়রা জীবিকা হারিয়েছে।

জুলিয়ান ভিনসেন্ট বলেন, জলবায়ুর ওপর চট্টগ্রামের প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্রেগুলোর প্রভাব হবে ভয়ঙ্কর। প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে প্রায় ১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড সমপরিমাণ গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরিত হবে। প্রকল্পগুলোর ধ্বাংসাত্মক প্রভাব এতটাই ব্যাপক হবে যে, তা বাংলাদেশের পাঁচ বছরের বেশি জাতীয় নির্গমনের সমান।

গবেষণাপত্রে বলা হয়, ২০৩০ সালে নাগাদ এলএনজি আমদানি করতে বাংলাদেশের বার্ষিক খরচ প্রায় ৮ দশমিক ৪ বিলিয়নে গিয়ে দাঁড়াবে। এলএনজি থেকে প্রতি গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণে খরচ হবে গড়ে ৯৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ফলে, দেশের অর্থনীতি বেশি দামে আমদানি করা জ্বালানিনির্ভর হয়ে পড়বে। আপাতত বিদেশী কোম্পানিগুলো এসব খরচ করলেও পরিশেষে দেশের সাধারণ জনগণকে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। জাপান, চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশী কোম্পানি মিৎসুবিশি করপোরেশন, জেরা ও জেনারেল ইলেকট্র্রিকের মতো কোম্পানিগুলো নিজেদের স্বার্থে দূষিত বিদ্যুৎ প্রকল্পের ফাঁদে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে জিম্মি করে রেখেছে বলেও দাবি করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির গবেষণা বিভাগের প্রধান ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, এলএনজি এবং কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর কারণে বাংলাদেশে আর্থিক ঝুঁকি নেমে আসবে। তিনি আরো বলেন, গত অর্থবছরে এলএনজি ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির জন্য ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। কিন্তু ২৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছে। আগামী অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!