বিশ্বকাপে সেরার লড়াইয়ে এগিয়ে সাকিব

বিশ্বকাপ শুরুর আগে সাকিবের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার খেতাব নিয়ে অনেকের নাক ছিটকানি থাকলেও এখন সূর পাল্টে ক্রিকেটের রথী, মহারথীরাও বলছেন এই বিশ্বকাপ সাকিবের বিশ্বকাপ। সেমিফাইনালের আগেই সাকিবের দলকে বিশ্বকাপ শেষ করতে হয়েছে। কিন্তু, ব্যাট আর বল হাতে এই বিশ্বকাপে আলো ছড়িয়েছেন সাকিব। ব্যাট হাতে আট ইনিংসের সাতটিতেই ফিফটি প্লাস ইনিংস খেলেছেন। আর বল হাতে নিয়েছেন ১১টি উইকেট।

দ্বাদশ বিশ্বকাপ সাকিবকে দিয়েছে দুহাত ভরে। ৮৬.৫৭ গড়ে ৮ ইনিংসে সর্বোচ্চ ৬০৬ রান করেছেন সাকিব, বাঁহাতি স্পিনে নিয়েছেন ১১টি উইকেট। এক আসরে ১০ উইকেট আর ৬০০ প্লাস রান দেখেনি অন্য কোনো বিশ্বকাপ।

৬৩১ বলে ৬০৬ রান আর ১১ উইকেট নিয়ে সাকিব টুর্নামেন্ট সেরা ক্রিকেটার হওয়ার লড়াইয়ে দারুণভাবেই এগিয়ে আছেন। ওয়ানডে বিশ্বকাপ ১৯৭৫ সালে শুরু হলেও প্রথম চারটি বিশ্বকাপে ম্যান অব দ্য সিরিজ দেওয়া হয়নি। ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট পুরস্কার দেওয়া হয়। সেবার সেমি ফাইনাল খেলেছিল নিউজিল্যান্ড-পাকিস্তান আর ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা। ফাইনাল হয়েছিল পাকিস্তান-ইংল্যান্ডের। সেমি থেকে বিদায় নিলেও ৪৫৬ রান করে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের মার্টিন ক্রো।

বিশ্বকাপে সেরার লড়াইয়ে এগিয়ে সাকিব 1
বিশ্বকাপে এবারের আসরের প্রথম ৬০০ রানের মাইলফলকে নাম লিখেয়েছেন সাকিব আল হাসান

১৯৯৬ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা। সেবার ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন শিরোপা জয়ী লঙ্কান তারকা সনাথ জয়সুরিয়া। ব্যাট হাতে ২২১ রান আর বল হাতে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন মাতারা হ্যারিকেন। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে সেমি ফাইনালে খেলেছিল নিউজিল্যান্ড-পাকিস্তান এবং অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা। ফাইনালে উঠেছিল পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া। সেই বিশ্বকাপে সেমি থেকে বিদায় নিলেও প্রোটিয়া তারকা ল্যান্স ক্লুজনার ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট নির্বাচিত হন। সেবার তার পারফরম্যান্স ছিল ২৮১ রান আর ১৭ উইকেট। ২০০৩ বিশ্বকাপে সেমি ফাইনালে খেলেছিল অস্ট্রেলিয়া-শ্রীলঙ্কা আর ভারত-কেনিয়া। ফাইনালে উঠেছিল ভারত-অস্ট্রেলিয়া। সেবার ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হয়েছিলেন ভারতের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকার। সেই বিশ্বকাপে শচীন ব্যাট হাতে ৬৭৩ রানের পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছিলেন ২ উইকেট।

ব্যাট হাতে যেভাবে সাকিব দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়েছেন, বল হাতে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে যেভাবে নিজের কাজটা করেছেন কিংবা ফিল্ডিংয়ে সাকিব যেমন ক্ষিপ্রতা দেখিয়েছেন- তাতে এবারের বিশ্বকাপের টুর্নামেন্ট সেরার পুরুস্কারটা তার হাতেই উঠতো নিঃসন্দেহে। কিন্তু তিনি আটকে গেছেন একটি জায়গাতেই, দল!

বিশ্বকাপে সাকিবের দল অর্থাৎ বাংলাদেশ আটকে গেছে প্রথম পর্বেই। সেখানেও আছে অষ্টম স্থানে। তবুও ফাইনালের আগে প্রশ্ন জাগছে সাকিবই কি এবারের আসরে সেরা খেলোয়াড় হয়ে যাবেন? এ প্রশ্ন আসাটা সাকিব ছাড়া অন্য যে কারো ক্ষেত্রেই অস্বাভাবিক মনে হতো দলের এমন হতশ্রী পারফর্ম্যান্সের পর। কিন্তু চলতি বিশ্বকাপে ব্যাটে বলে সাকিব যেমন অবিশ্বাস্য খেলেছেন তাতে তার নাম না আসাটাই বরং অস্বাভাবিক হতো।

বিশ্বকাপে সেরার লড়াইয়ে এগিয়ে সাকিব 2
সাকিবের হাত থেকে বের হচ্ছে আরেকটি গোলা। এভাবে একে একে বিশ্বকাপে ১১টি উইকেট শিকার করেন তিনি।

ব্যাটে বলে এমন অবিশ্বাস্য সাকিবের টুর্নামেন্ট সেরার পথে বাঁধা হবেন যারা, তারা প্রায় সবাই হয় ব্যাটিং নয়ত বোলিংয়ে ভালো করেছেন। কেউই দুই বিভাগেই সমান পারদর্শীতা দেখাননি। সাকিবের চেয়ে বেশি রান করা দুই ব্যাটসম্যানই বিদায় বলেছেন এবারের বিশ্বকাপকে। ৯ ম্যাচ খেলে সাকিবের চেয়ে ৪২ রান বেশি করা রোহিত শর্মার সংগ্রহ ৬৪৮ আর ওয়ার্নার ১০ ম্যাচ খেলে করেছেন রোহিতের চেয়ে এক রান কম অর্থাৎ ৬৪৭।

তবে এই দুইজনের কারো নেই কোনো উইকেট। যেখানে সাকিবের উইকেট আছে ১১টি। সেই হিসাবে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার তাদের চেয়ে এগিয়ে আছেন অনেক বড় ব্যবধানে। সাকিবের আরেক প্রতিদ্বন্দী অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক ১০ ম্যাচ খেলে ২৭ উইকেট পেলেও ৮ ইনিংসে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে করেছেন মাত্র ৬৮ রান।

স্টার্কও তাই হিসেবের খাতায় নেই। উপরের তিনজনই ব্যর্থ হয়েছেন দলকে ফাইনালে তুলতে। কিন্তু টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার জিততে সাকিবের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দী এখন জো রুট ও জেসন রয়। তাদের দল ইতিমধ্যেই পৌঁছেছে ফাইনালেও।

৭ ম্যাচে ৬ ইনিংসে ৭১.০০ গড়ে ৪২৬ রান করার পাশাপাশি জো রুট পেয়েছেন ২ উইকেটও। অন্যদিকে রয় ৬৮.৬২ গড়ে ৫৪৯ রান করলেও তার ঝুলিতে নেই কোনো উইকেট। এই দুইজন তালিকায় আছেন তাদের দল ফাইনালে উঠেছে বলেই।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!