বিমানে ৪ মাসেই চট্টগ্রামে ঢুকেছে ৩০০০ কেজি সোনা

৪ জায়গায় হাতবদল হয়ে স্বর্ণ চলে যায় ভারতে

চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে গত চার মাসে দেশে ঢুকেছে প্রায় তিন হাজার কেজি স্বর্ণ। যা এক বছরে আসা মোট স্বর্ণের পরিমাণের চেয়েও বেশি। এ সময় যাত্রীরা ঘোষণা দিয়ে এনেছেন ২২ হাজার ৮৮১টি স্বর্ণের বার, আর ঘোষণা ছাড়া এনেছেন আরও ৩৪৫টি। সবমিলিয়ে স্বর্ণের বার এসেছে মোট ২৩ হাজার ২২৬টি— যার ওজন ২৭১৭ কেজি।

বৈধ ও অবৈধ পথে আসা এতো স্বর্ণ যাচ্ছে কোথায় সে সম্পর্কে কিছুই জানেন না খোদ কাস্টমস কর্মকর্তারাও। তবে স্বর্ণব্যবসায়ীরা বলছেন, চট্টগ্রাম নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার, খাতুনগঞ্জ, আগ্রাবাদ, হালিশহরের পাচারকারীদের হাতবদল হয়ে এসব স্বর্ণ চলে যাচ্ছে ভারতে।

এর আগে সরকার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিদেশ থেকে দুটি স্বর্ণের বার নিয়ে আসা যাবে বলে ঘোষণা দিয়েছিল। এই সুযোগে চার মাসে দেশে এসেছে প্রায় তিন টন সোনা। তবে এ বৈধতার মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের কাস্টমস ৬৭ কোটি ১১ লাখষ ৭৭ হাজার ৬৩৮ টাকা রাজস্ব আয় করেছে।

জানা গেছে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ফ্লাইট চালুর পর থেকে চার মাসে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে ২৬৭৫ কেজি ঘোষণা দিয়ে আনা হয়েছে। আর ৪১ কেজি স্বর্ণ ডিটেকশন মেমো (ডিএম) এর মাধ্যমে আনা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিমানবন্দর কাস্টমসের মতে, গত সেপ্টেম্বরে ৩০ পিস, অক্টোবরে ২২২৪ পিস, নভেম্বরে ৯৩৬৭ পিস, ডিসেম্বরে ১১২৬০ পিস স্বর্ণের বার যাত্রীরা এনেছেন ঘোষণা দিয়ে। অন্যদিকে ৩৪৫টি স্বর্ণের বার ছিল ঘোষণা বহির্ভুত— যা কাস্টমস কর্মকর্তারা তল্লাশি করে যাত্রীদের কাছ থেকে উদ্ধার করেছেন। সেগুলোও রাজস্ব দিয়ে ছাড়িয়ে (ডিটেকশন মেমো) নিয়েছেন যাত্রীরা।

চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে কর্মরত কাস্টমসের সহকারী কমিশনার মুছা খান জানান, প্রবাস থেকে আসা যেকোনো যাত্রী সরকারের রাজস্ব জমাদানের মাধ্যমে দুটি স্বর্ণের বার আনতে পারেন। ফলে এ খাত থেকে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস বিপুল পরিমাণ টাকা রাজস্ব আয় করেছে।

জানা গেছে, স্বর্ণ পাচারের ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এ বন্দর দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে অবাধে স্বর্ণ পাচার হয়ে আসছিল একসময়। কিন্তু সম্প্রতি সরকার স্বর্ণের দুটি বার আনার সুবিধা দেওয়ায় এখন বৈধ পথেই নিয়ে আসা হচ্ছে স্বর্ণগুলো।

দেশের ভেতরে এতো স্বর্ণ ঢুকলেও শেষপর্যন্ত সেগুলো আর দেশে থাকছে না বলে জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন স্বর্ণব্যবসায়ী। তারা বলছেন, চট্টগ্রাম নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার, খাতুনগঞ্জ, আগ্রাবাদ, হালিশহরের পাচারকারীদের হাতবদল হয়ে এসব স্বর্ণ চলে যাচ্ছে ভারতে।

কাস্টমস সূত্রমতে, চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে এসেছে ৮২৯০ গ্রাম স্বর্ণ, ফেব্রুয়ারি মাসে এসেছে ৬৬৭ গ্রাম, মার্চে ৭২৪ গ্রাম। এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ থাকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। পরে ফ্লাইট পুনরায় চালুর সাথে সাথে অনেকটা ঝড়ের বেগে স্বর্ণ ঢুকতে শুরু করে বাংলাদেশে।

এর আগে ২০১৯ সালে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে মাত্র ১৯৩ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার হয়, যা পাচার করা স্বর্ণের তুলনায় অতি নগণ্য।

কাস্টমস কর্মকর্তাদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ দুবাই, সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন, ওমান থেকেই মূলত স্বর্ণ আসে বাংলাদেশে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‌‘যাত্রীদের আনা স্বর্ণ কিভাবে ব্যবহার হচ্ছে আমাদের জানা নেই। তবে এখান থেকে অন্য পথে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচারের খবরও আমরা মাঝে মাঝে পত্রপত্রিকায় দেখি।’

তিনি বলেন, ‘সরকার দুটি স্বর্ণের বার নিয়ে আসার বৈধতা দেওয়ায় সরকার ভালই রাজস্ব পাচ্ছে। এর আগে যেসব স্বর্ণ অবৈধভাবে যাত্রীরা আনতেন, সেটি এখন বৈধভাবে আনছেন।’

কেএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!