বিমানবন্দর সড়কে যানজটের কারণ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ

সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান

সাম্প্রতিক সময়ে বিমানবন্দর সড়কে তীব্র যানজটের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের চলমান কর্মকাণ্ডকে দুষলেন চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল জুলফিকার আজিজ। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কার্যক্রম চলমান থাকায় এবং বন্দরে ট্রাক, ট্রেইলার ও কাভার্ড ভ্যান প্রবেশের কোন বিকল্প রাস্তা না থাকায় চট্টগ্রাম বন্দরের বাইরে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান তিনি।

কোন অবস্থাতেই এই যানজট চট্টগ্রাম বন্দরের কারণে সৃষ্টি হয়নি বলে তিনি দাবি করেছেন। শনিবার (২০ জুলাই) দুপুরে বন্দর ভবনের সম্মেলন কক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন করে জুলফিকার আজিজ এ সব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘গত ১০-১২ দিন ধরে চট্টগ্রাম শহরে মুষলধারে টানা বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের বাইরে বিভিন্ন রাস্তায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে নগর ও বন্দর সংলগ্ন অঞ্চলে রাস্তাঘাট মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিভিন্ন রাস্তায় বড় বড় গর্ত সৃষ্টির ফলে যানবাহন চলাচল মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। ঘূর্ণিঝড় ফণী ও ঈদ পরবর্তী সময়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক কনটেইনার বন্দর থেকে ডেলিভারি হলেও বন্দরের বাইরে তীব্র যানজট দেখা যায়নি। অন্যদিকে এই সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি চার হাজার টিইইউএসের চেয়েও কম ছিল। তাই এই তীব্র যানজটের জন্য মূলত প্রাকৃতিক দূর্যোগ, বন্দরের যানবাহন ও গণপরিবহন একই রাস্তায় চলাচল এবং চট্টগ্রাম শহরের জন্য বিকল্প সড়ক তৈরি না হওয়াকে চিহ্নিত করা যায়।’

সংবাদ সম্মেলনে বন্দর চেয়ারম্যান দাবি করেন, সাম্প্রতিক প্রতিকূল আবহাওয়া (জলাবদ্ধতা), পোর্ট কানেকটিং রোড সংস্কার, বারিক বিল্ডিং থেকে ফরিকহাট পর্যন্ত চট্টগ্রাম ওয়াসার কার্যক্রম এবং সিমেন্ট ক্রসিং এলাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু হওয়ার কারণে মূল সড়ক সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় যানজটের পরিমাণ বেড়েছে।

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দর অপারেশনাল কার্যক্রম সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘন্টা চালু রাখা হয়েছে। সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার চার দিন আমদানিকারকরা বন্দর থেকে বেশি পরিমাণে পণ্য ডেলিভারি নিলেও শুক্র, শনি ও রোববার কম নেয়। আমদানিকারকরা সপ্তাহের সাত দিন চট্টগ্রাম থেকে স্বাভাবিক সময়ের পণ্য ও কার্গো ডেলিভারি নিলে বন্দর সংলগ্ন ও এর বাইরের এলাকার রাস্তায় যানবাহনের হার স্বাভাবিক থাকবে।’

সংবাদ সম্মেলনে জুলফিকার আজিজ বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের বাইরে তীব্র যানজট নিরসনে চট্টগ্রাম শহরের জন্য প্রস্তাবিত আগ্রাবাদ এক্সেস রোড-বড়পুল সড়ক-আনন্দবাজার-ইপিজেড সড়ক এবং জিইসি-সাগরিকা-বেড়িবাঁধ সড়ক বাস্তবায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে। বিকল্প সড়ক হিসেবে প্রস্তাবিত এই দুটি রিং রোড দ্রুত বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম শহরের লাইফলাইন খ্যাত এয়ারপোর্ট-আগ্রাবাদ-লালখান বাজার-বহদ্দারহাট সড়কের ওপর যানজটের তীব্রতা কমে আসবে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরসহ এই অঞ্চলে যানজট অনেকটা কমে যাবে। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব হবে। এই দুই সড়কের উন্নয়নের সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের উৎপাদনশীলতা ও চট্টগ্রাম শহরের যানজট নিরসন অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত।’

যানজটের সমাধান সম্পর্কিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, ‘সমন্বয়ই সমাধান। যে কটি সংস্থা রয়েছে, তাদের সমন্বয়কাজে সমন্বয় থাকতে হবে। সমন্বয়ের বিকল্প নেই।’

জুলফিকার আজিজ জানান, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে। বন্দরের পরামর্শ অনুযায়ী এ প্রকল্পে বারিক বিল্ডিং থেকে সল্টগোলা পর্যন্ত রাস্তা পিলার বসবে না।’

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই সপ্তাহেই কর্ণফুলীর নদীর অবৈধ উচ্ছেদ কার্যক্রম আবার শুরু হতে পারে। বে-টার্মিনালে ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ কাজ ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শুরু হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম, সদস্য (প্রকৌশল) কমোডর খন্দকার আক্তার হোসেন, সদস্য (হারবার ও মেরিন) ক্যাপ্টেন এম শফিউল বারী, পরিচালক (নিরাপত্তা) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর আহমদ জায়গীরদার, সচিব মো. ওমর ফারুক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এমএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!