বিবাহিত নেতার মেলা চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগে, এক-তৃতীয়াংশই বাচ্চার বাবা

মেয়াদছাড়া কমিটি চলছেই বছরের পর বছর

চট্টগ্রামের নগর ছাত্রলীগ এখনও বিবাহিত নেতাদের দখলে। ২৯১ সদস্যের কমিটি হলেও বাস্তবে তা আরও বেশি। কিন্তু এই কমিটির প্রায় এক তৃতীয়াংশ নেতা এখন দাম্পত্য জীবন উপভোগ করছেন। এরপরও তারা ছাড়তে পারছেন না ছাত্রলীগের মায়া। অথচ গঠনতন্ত্রে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, বিবাহিত ও অছাত্ররা ছাত্রলীগ করতে পারবে না। সেই গঠনতন্ত্রকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিভিন্ন চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের প্রতিটি অনুষ্ঠানে হাজির হচ্ছেন বিবাহিত নেতারা। বউ-বাচ্চা নিয়ে সংসার করার পাশাপাশি তারা কেক কাটছেন ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর।

বিবাহিত নেতার মেলা চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগে, এক-তৃতীয়াংশই বাচ্চার বাবা 1

বুধবার (৪ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এমন চিত্র দেখা গেছে চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে।

নগরীর দারুল ফজল মার্কেটে নিজেদের সাংগঠনিক অফিসে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে কেক কাটেন নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পদধারী ১৪ নেতা। তাদের মধ্যে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছাড়া বাকিরা সবাই বিবাহিত। কিন্তু বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাদের ছাত্রনেতা হিসেবেই দেখানো হয়েছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা গেছে, অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি তালেব আলী, নাইম রনি, একরামুল হক রাসেল; যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুজন বর্মন, সাংগঠনিক সম্পাদক খোরশেদ আলম মানিক, খোরশেদ আলম; সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হাসানুল আলম সবুজ, আবু তারেক রনি, হাসান শাহরিয়ার, শফিকুল ইসলাম পারভেজ, মোহাম্মদ বিন ফয়সাল, এমএ হালিম শিকদার মিতু, আব্দুল আল আহাদ ও নুরুল ইসলাম সুমন।

উপস্থিত ১৬ জনের ১৪ জনই বিবাহিত বলে নিশ্চিত করেছেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত নগর ছাত্রলীগেরই এক নেতা।

নগর ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সুজন বর্মন। বিয়ে করেছেন অর্ধযুগ আগে ২০১৭ সালে। বাচ্চাও আছে তার। তিনি এখন ব্যবসায়ী। এতকিছুর পরও তিনি বর্তমান নগর ছাত্রলীগের পদ নিয়ে ঘুরেন। তবে একবারের জন্যও বিয়ে করার কথা অস্বীকার করেননি তিনি। নিজ মুখেই জানান ২০১৭ সালে সামাজিকভাবেই বিয়ে করেছেন তিনি।

সুজনের এক বছর আগে থেকে সংসার ধর্ম পালন করছেন নগর ছাত্রলীগের গণ যোগাযোগ ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক হাসান শাহরিয়ার। ২০১৬ সালে ধুমধাম করেই বিয়ে করেন ছাত্রলীগের এই নেতা। বাচ্চাও আছে ওনার।

বৌ-বাচ্চা থাকার পরও কিভাবে ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে থাকা যায়—এমন প্রশ্নের উত্তরে সুজন ও হাসান বলেন, ‘সংগঠনকে ভালোবেসে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম আমরা।’

সংবাদমাধ্যমে কিভাবে বর্তমান ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে সুজন বর্মন বলেন, ‘ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই বিবাহিত, শুধুমাত্র সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছাড়া। আর পত্রিকাতে নাম আসছে ভুলে।’

বিয়ের পর অব্যাহতিপত্র দিয়েছেন কি-না, এমন প্রশ্নের উত্তরে সুজন বলেন, ‘না, তবে মৌখিকভাবে জানিয়েছিলাম।’

নগর ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দেওয়ার জন্য একাধিকবার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কমিটি ভাঙেননি বলে জানান হাসান ও সুজন।

ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে বিবাহিত নেতাদের বিষয়ে জানতে নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরকে ফোন করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।

২০১৩ সালের ৩০ অক্টোবর কাউন্সিলের আয়োজন ছাড়াই সিলেকশনের মাধ্যমে ইমরান আহমেদ ইমুকে সভাপতি ও নূরুল আজিম রনিকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৪ জনের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এর কিছুদিন পর ২৯১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষিত হয়। এক বছরের জন্য গঠন করা হয়েছিল চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি। কিন্তু সেই কমিটির বয়স এখন পুরো এক দশকের দুয়ারে। কমিটির অনেকেই বিয়ে করে পেতেছেন সংসার, অনেকে ব্যস্ত চাকরি-ব্যবসা নিয়ে। কিন্তু কমিটি চলছে তো চলছেই, বছরের পর বছর ধরে।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!