বিবাদ মেটেনি ডিভোর্সেও, স্বামীকে ‘হত্যা’র অভিযোগ স্ত্রীর ঘাড়ে

মেয়ে বলছেন ‘বাবাই মাকে নির্যাতন করতেন’

প্রবাস থেকে ফেরার কয়েক বছর পর ‘পরকীয়া’র অভিযোগে স্ত্রী প্রিয়াকে তালাক দেন স্বামী সেলিম। ডিভোর্সের পরেও তাদের বিবাদ মেটেনি। ডিভোর্সের সাত মাস পার হলেও স্বামীর বাড়িতেই দুই সন্তান নিয়ে থাকতেন প্রিয়া। শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর) স্বামী সেলিমের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। এজন্য স্ত্রী প্রিয়াকেই দুষছে স্বামীর পরিবার ও এলাকাবাসী।

নিহতের পরিবার দাবি করছে, প্রিয়া লাঠি দিয়ে আঘাত করে সেলিমকে হত্যা করেছেন। অন্যদিকে প্রিয়ার পরিবারের দাবি, সেলিমের মৃত্যু শারীরিক অসুস্থতার কারণে হয়েছে। এদিকে এই ঘটনার জেরে রোববার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে পুলিশ সেলিমের স্ত্রী প্রিয়াকে আটক করেছে।

ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার নাঙ্গলমোড়া ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের হেদায়েত আলীর বাড়িতে।

জানা গেছে, রোববার (১৩ সেপ্টেম্বর) নিহতের পরিবার সকাল ১১টার দিকে লাশ দাফনের প্রস্তুতি নিলে এলাকাবাসী তাতে বাধা দেয়। তাদের কেউ কেউ জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নাম্বারে ফোন করে প্রশাসনকে জানায় এটি হত্যার ঘটনা। একই সময়ে অভিযুক্ত প্রিয়াও তাকে মারধর করা হচ্ছে জানিয়ে ৯৯৯ নাম্বারে ফোন করেন। পরে পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও লাশের সুরতহাল তৈরি করে লাশ চমেক মর্গে পাঠায় এবং ঘটনাস্থল থেকে সেলিমের স্ত্রীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

নিহত সেলিম এলাকার হাজী রাজা মিয়া সওদাগরের ছেলে। কয়েক বছর আগে মধ্যপ্রাচ্য থেকে দেশে ফেরেন তিনি। ৭ মাস আগে কথিত ‘পরকীয়া’র অভিযোগে স্ত্রী প্রিয়াকে তালাক দেন।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০০৭ সালের ২৭ আগস্ট চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদ ইউছুফের মেয়ে কুলসুমা সিদ্দিকা প্রিয়ার সাথে হাটহাজারী উপজেলার নাঙ্গলমোড়া ইউনিয়নের হেদায়েত আলী বাড়ির রাজা মিয়া সওদাগরের ছেলে মো. সেলিমের সামাজিকভাবে বিয়ে হয়। সেলিম বছরখানেক আগে দেশে ফেরেন। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা না হওয়ায় সেলিম আদালতের মাধ্যমে স্ত্রী প্রিয়াকে ডিভোর্স দেন। তবে ডিভোর্সের সাত মাস পার হলেও ঘর ছেড়ে যাননি স্ত্রী প্রিয়া। স্বামীর ঘরের পাশে দুই সন্তানকে নিয়ে বসবাস করতেন প্রিয়া। এর মধ্যে সপ্তাহখানেক আগে চট্টগ্রাম নগরীর জুবলি রোডে একটি হার্ডওয়ারের দোকানে চাকরি নেন সেলিম।

নিহতের ছোট বোন পারভিন আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, ‘শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১২টার দিকে আমার ভাই ফোন দিয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে জানায় আমাকে মেরে ফেলছে। পারলে আমাকে বাঁচা বোন। আমাকে খুব মারছে। আমি বাড়ির পাশে ইব্রাহীম মার্কেটের সামনে। কথাগুলো বলার সময় ভাবির (প্রিয়া) আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। ফোন কেটেই আমরা বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হই।’

পারভিন আক্তার বলেন, ‘রাত সোয়া একটার দিকে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌঁছে আমার ভাইকে দেখতে পাই। কিন্তু ততোক্ষণে আমার ভাই আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে গেছে।’

তবে নিহত সেলিমের বড় মেয়ে আলিফ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাবাকে আমার মা কিছুই করেনি। বরং আমার বাবাই মাকে নির্যাতন করতেন। শনিবার রাতে বাবার সাথে মায়ের কথা কাটাকাটি হয়েছে সেটা ঠিক। ওই সময় বাবা বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলেন। তাকে অসুস্থ মনে হচ্ছিল। তারপর এলাকার কয়েকজন বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।’

এ ব্যাপারে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ মাসুদ আলম বলেন, ওই ঘটনায় স্ত্রীকে আটক করা হয়েছে। নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চমেক মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই মো. শাহাবউদ্দিন থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!