বিবাদে জড়িয়েই পুলিশের জালে সরওয়ার, দেশে ফিরেছে ম্যাক্সন-একরামও

একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিতে শুরু করেছে কাতার থেকে দেশে ফেরার পর আটক হওয়া চট্টগ্রামের ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী মো. সরওয়ার। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার সহযোগী এবং অস্ত্রভান্ডার সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে সরওয়ার। এরই মধ্যে তথ্য মিলেছে দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের সহযোগী শিবির ক্যাডার ম্যাক্সন ও যুবলীগের একরামও সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ফিরেছে। তবে তাদের হদিস এখনও অজানা।

সরওয়ারের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) ভোরে চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার খোন্দকারাবাদ কালু মুন্সি পাড়ায় তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মজুদ করা একটি আমেরিকায় তৈরি একে-২২ রাইফেল ও ৩০ রাউণ্ড গুলি এবং ২টি এলজি ও ৪ রাউণ্ড কার্তুজ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকার জানান, উদ্ধার হওয়া অস্ত্র ছাড়াও তার কাছে আরও অস্ত্র থাকার তথ্য আছে পুলিশের কাছে।

এদিকে সরওয়ারের ‘হঠাৎ’ দেশে ফেরা নিয়ে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (বায়েজিদ বোস্তামি জোন) পরিত্রাণ তালুকদার জানান, প্রায় তিন বছর কাতারে পালিয়ে ছিলেন সরওয়ার। সেখানে মারামারির এক ঘটনায় পুলিশ তাকে আটক করে এক মাসের সাজা দেয়। সাজা শেষে সরওয়ারকে তারা দেশে পাঠিয়ে দিলে ঢাকা বিমানবন্দরে পুলিশ তাকে আটক করে। পরে রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানা পুলিশ সরওয়ারের পরিচয় নিশ্চিত করে রোববার তাকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসে।

পুলিশ জানায়, ইসলামী ছাত্রশিবিরের ‘ক্যাডার’ হিসেবে কুখ্যাতি অর্জন করা সরওয়ারের নাম চট্টগ্রাম পুলিশের করা ‘শীর্ষ সন্ত্রাসীর’ তালিকাতেও রয়েছে। চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছাড়াও বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত ১৬টি মামলা রয়েছে সরওয়ারের বিরুদ্ধে।

চট্টগ্রামে বিভিন্ন অপরাধ কার্যক্রমে প্রায় দেড় দশক আগে আলোচনায় আসে সরওয়ার ও তার বন্ধু ম্যাক্সন। সে সময় তারা পরিচিত ছিলেন শিবির ‘ক্যাডার’ সাজ্জাদ হোসেন খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে, যিনি চট্টগ্রামের আট খুনের মামলায় মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে বর্তমানে ভারতের কারাগারে বন্দি।

২০১১ সালের জুলাই মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিঙ্গারবিল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন ম্যাক্সন। তার দেওয়া তথ্যে চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকা থেকে সরওয়ারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে সে সময় উদ্ধার করা হয় একটি একে-৪৭ রাইফেল, দুটি পিস্তল, একটি এলজি, একে-৪৭ রাইফেলের দুটি ম্যাগজিন এবং গুলি।

জানা গেছে, এর মধ্যে সাজ্জাদের সঙ্গে সরওয়ার ও ম্যাক্সনের সম্পর্কের অবনতি হয়। কারাগারে তাদের সখ্য গড়ে ওঠে শিবিরের আরেক সন্ত্রাসী নাছিরের সঙ্গে। এ কারণে ২০১৩ সালে নাছিরকে চট্টগ্রাম থেকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠিয়ে সরওয়ার ও ম্যাক্সনকে চট্টগ্রাম কারাগারের আলাদা ওয়ার্ডে রাখা হয় বলে পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্য।

স্থানীয়রা বলছেন, প্রায় ছয় বছর কারাগারে থাকার সময়ও সরওয়ার ও ম্যাক্সন তাদের অনুসারীদের দিয়ে বায়েজিদ এলাকায় চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাদের হয়ে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণের কাজ করতেন কথিত যুবলীগ নেতা ইমতিয়াজ সুলতান ওরফে একরাম। তিনি চট্টগ্রামে স্কুলছাত্রী তাসফিয়া হত্যামামলার পলাতক আসামি। এলাকায় তিনি পরিচয় দিতেন যুবলীগ নেতা হিসেবে।

বায়েজিদ থানার ওসি প্রিটন সরকার জানান, ২০১৭ সালে কারাগার থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে কাতারে চলে গিয়েছিলেন সরওয়ার ও ম্যাক্সন। আর তাসফিয়া হত্যা মামলায় আসামি হওয়ার পর একরামও কাতারে পাড়ি জমান।

এদিকে রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দেড়টায় উপ পুলিশ কমিশনার (উত্তর) এর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার শ্যামল কুমার নাথ এবং উপ পুলিশ কমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক জানান, সরওয়ার এবং তার গ্রুপের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যহত আছে নগর পুলিশের। এছাড়াও চিহ্নিত সন্ত্রাসী এবং চাঁদাবাজদের ধরতে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করছে নগর পুলিশ।

এএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!