বিপিএলের নতুন রাজা রাসেলের রাজশাহী রয়্যালস

ফাইনাল ও টুর্নামেন্ট সেরা আন্দ্রে রাসেল

বঙ্গবন্ধু বিপিএলে নতুন চ্যাম্পিয়ন দেখা যাবে সেটি জানা হয়ে গেছে আগেই। শুধু অপেক্ষার পালা ছিল খুলনার হয়ে মুশফিক নাকি রাজশাহীর রাসেল কে উঁচু করে ধরবেন ট্রফি। শেষ পর্যন্ত পদ্মাপাড়ের রাজশাহীর ঢেউয়ের কাছে কুল-কিনারা পায়নি রূপসাপাড়ের খুলনা। রাজার মতোই বিপিএলে রাজশাহীর রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত করলেন আন্দ্রে রাসেল।

শেষ ১৪ বলে চাই ৩৭ রান। খুলনা টাইগার্সের জন্য কাজটা ক্রমশ কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে পড়ছে। কিন্তু মুশফিক রহিম তখনো উইকেটে ছিলেন। তাতেই টিকেছিল খুলনার শেষ আশা। কিন্তু আন্দ্রে রাসেলের পারফেক্ট ইয়র্কারে মুশফিক বোল্ড হতেই যেন ফাইনালের ফলও জানা হয়ে গেল। রান-বলের ব্যবধান আর কমাতে পারেনি খুলনা। থেমে যায় তাদের ইনিংস ১৪৯ রানে। রাজশাহী রয়্যালস ২১ রানে ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দে তখন আত্মহারা।

মুশফিক বোল্ড হয়ে ফিরলেন ১৫ বলে ২১ রান করে। আর রোবি ফ্রাইলিঙ্ক আসল ম্যাচে এসে বুঝিয়ে দিলেন ‘বয়স’ ক্রিকেটে অনেক বড় ফ্যাক্টর! ১৫ বলে ফ্রাইলিঙ্ক করলেন মাত্র ১২ রান।

আগের ম্যাচেও দলের বিপর্যয়ে হাল ধরেছিলেন। এবার দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ের সঙ্গে টি-টোয়েন্টির বিনোদনটাও দিলেন চট্টগ্রামের তরুণ তারকা ইরফান শুক্কুর। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের ঝড়ো হাফসেঞ্চুরিতে ভর করেই খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে ৪ উইকেটে ১৭০ রানের চ্যালেঞ্জিং পুঁজি দাঁড় করিয়েছে রাজশাহী রয়্যালস।

দাপুটে ব্যাটিংয়ের পর রাজশাহী রয়্যালস বোলিংয়েও রাজকীয়তা বজায় রাখে। আন্দ্রে রাসেল ব্যাটে-বলে বঙ্গবন্ধু বিপিএলের ফাইনালকে সত্যিকার অর্থে নিজের করে নিলেন। ৩ ছক্কায় ১৬ বলে অপরাজিত ২৭ রানের সঙ্গে ৩২ রানে ২ উইকেট নিয়ে ফাইনালে দলের সেরা পারফর্মার।

শেষ ছয় বলে ম্যাচ জেতার জন্য খুলনার প্রয়োজন দাড়ায় ৩০ রান। শেষ বলে এসে হিসেবটা দাড়ায় ২৬ রানের। টুর্নামেন্টের শেষ বলটা করতে আসার আগে আন্দ্রে রাসেল গ্যালারির দিকে তাকিয়ে দু’হাত তুলে উল্লাস করার আহবান জানান। ম্যাচ যে ততক্ষণে জেতা হয়ে গেছে রাজশাহীর! শেষ বলে সান্ত্বনার একটা বাউন্ডারি পায় খুলনা।

এর আগে ১১ রানে দুই উইকেট হারানো খুলনাকে রাইলি রুশো ও শামসুর রহমানের জুটি উদ্ধার করে। দলীয় ৮৫ রানে রুশো যখন ফিরেন তখন ম্যাচ জিততে শেষ ৫৫ বলে খুলনার প্রয়োজন দাড়ায় ৮৬ রানের। হাতে উইকেট জমা ৭টি। টুর্নামেন্টে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মুশফিক এলেন উইকেটে। অন্যপ্রান্তে শামসুর রহমান তখন হাফসেঞ্চুরির কাছাকাছি।

বিপিএলের নতুন রাজা রাসেলের রাজশাহী রয়্যালস 1
বিপিএল ফাইনালে রাজশাহী রয়্যালসের হয়ে ওয়ান ডাউনে ব্যাট করতে নেমে ঝড়ো ফিফটি হাঁকান চট্টগ্রামের তরুণ তারকা ইরফান শুক্কুর।

৩৮ বলে ২ ছক্কা ও ৪ বাউন্ডারিতে টুর্নামেন্টে নিজের দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি পুরো করার পর শামসুর রহমান বেশিক্ষণ আর টিকতে পারেননি। ৪৩ বলে ৫২ রানে শেষ হয় তার ফাইনালের লড়াকু ইনিংস। ৩৭ রান করে রুশো এবং ৫২ রান করা শামসুরের আউটের পর খুলনার ইনিংসে শুরুর মতো দ্বিতীয় দফা ধসের শুরু। দলের আফগান ব্যাটসম্যান নাজিবুল্লাহ জাদরানের ইনিংস শেষ মাত্র একটি বাউন্ডারিতেই।

রোবি ফ্রাইলিঙ্ককে সঙ্গে নিয়ে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম নামলেন ফাইনাল জেতার লড়াইয়ে। ট্রফি জিততে শেষ ৩৬ বলে চাই ৬৫ রান। খুব বেশি রান কি? বিপিএলের ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ফাইনালে খেললেন মুশফিক। কিন্তু ফাইনাল জিততে পারলেন না। ব্যাটিংয়ের বাজে শুরুর মতো শেষটা হলো খুলনার ভীষণ মামুলি।

ম্যাচের এই দুই অংশে এত দুর্বল আর মামুলি ব্যাটিং দিয়ে আর যাই হোক-ফাইনাল জেতা যায় না!

১৭০ রান তাড়ায় নামা খুলনা টাইগার্সের ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত আউট, শূন্য রানে। পরের ওভারে আরেক ওপেনার মেহেদি হাসান মিরাজও ডাগআউটে ফিরলেন। ইনিংসের প্রথম ১১ বলে ১১ রানে দুই ওপেনারকে হারায় খুলনা টাইগার্স। ফাইনাল জয়ের ১৭১ রানকে তাদের তখন অনেক অনেক দুরের পথ মনে হচ্ছিল!

সেই সঙ্কট থেকে দলকে প্রাথমিক উদ্ধারের কাজটা সারলেন শামসুর রহমান ও রাইলি রুশো। রক্ষনের সঙ্গে আক্রমণের মিশেলে এই জুটির ব্যাটিং খুলনাকে ট্রফির জয়ের পথে রাখে।

দুজনেই অবশ্য এই ফাইনালে ভাগ্যকে সঙ্গী করে নেমেছিলেন। ১৮ রানে শোয়েব মালিকের বলে পয়েন্টে রুশোর ক্যাচ ছাড়েন আবু জায়েদ রাহী। সেই রুশো ২৬ বলে শেষ পর্যন্ত খেললেন ৩৭ রানের ইনিংস। আর ওয়ানডাউনে নামা শামসুর রহমান ২ ছক্কা ও ৪ বাউন্ডারিতে ৪৩ বলে করলেন ৫২ রান। ৩০ রানে একবার নিশ্চিত রান আউটের কবল থেকে রক্ষা পান শামসুর। রুশো ও শামসুর রহমান তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৯ ওভারে যোগ করেন ৭৪ রান।

ব্যাটিংয়ে দলকে অপরাজিত ৪১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস উপহার দেয়া মোহাম্মদ নওয়াজ তার তৃতীয় ওভারে রাইলি রুশোর প্রাইজ উইকেট তুলে নেন। নওয়াজের বলে ফ্ল্যাট ছক্কা হাঁকানোর চেষ্টা করেছিলেন রুশো। কিন্তু বাউন্ডারি লাইনে দাড়ানো আন্দ্রে রাসেল একটু বাঁদিকে সরে এসে ক্যাচটা নিলেন।

ব্যাটিংয়ে ১৬ বলে অপরাজিত ২৭। ফিল্ডিংয়ে চমৎকার একটি ক্যাচ। এবং ৪ ওভারে ৩২ রানে দুই উইকেট। এর মধ্যে মুশফিকের প্রাইজ উইকেটও আছে। আগের ম্যাচের ২২ বলে অপরাজিত ৫৪ রান করে রাজশাহীকে একক কৃতিত্বে ফাইনালে তুলে আনলেন। আর ফাইনালে ব্যাটে-বলে ট্রফি জয়ে সবচেয়ে বড় ভুমিকাও তার। বঙ্গবন্ধু বিপিএলের এই আসর যে শুধুই আন্দ্রে রাসেলের!

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!