বিপদ বাড়াচ্ছে রেলের শতবর্ষী ৮৯৩ ঝুঁকিপূর্ণ সেতু, নতুন করে তৈরির সিদ্ধান্ত

সাড়ে ১১ টনের লোড ক্যাপাসিটি বেড়ে হচ্ছে ৩২ টন

বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের (ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ) নয়টি রুটে সেতু রয়েছে এক হাজার ২৫১টি। তার মধ্যে ছোট, বড় ও মাঝারি ৮৯৩টি সেতুই মেয়াদোত্তীর্ণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণ সেতু ভেঙ্গে ২০১৯ সালে ২৯ এপ্রিল চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে তেলবাহী ওয়াগন খালে পড়ে। একই বছর ২৩ জুন মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ায় যাত্রীবাহী ট্রেনের তিনটি বগি খালে পড়ে ৬ জন যাত্রী নিহত হন। এছাড়াও শতবর্ষী বা তার চেয়েও পুরাতন এসব সেতু মাত্র ১১ দশমিক ৬ টন এক্সেল লোড ক্ষমতাসম্পন্ন। সরকার পদ্মা সেতুর এক্সেল লোড মান ধরেছে ৩২ টন ক্ষমতাসম্পন্ন। দেশে ছোট বড় যে কোন আকারের রেল সেতু নির্মাণ ও সংস্কার করা হলে একই মানে তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। এরই অংশ হিসেবে পূর্বাঞ্চলের ৮৯৩টি সেতু নতুনভাবে তৈরির প্রকল্পের কাজ চলছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশে রেলের দুই অঞ্চলের (পূর্ব ও পশ্চিম) ১১ দশমিক ৬ টন এক্সেল লোড ক্ষমতার মেয়াদোত্তীর্ণ প্রায় দেড় হাজার সেতুর স্থলে ২৫ টন এক্সেল লোড ক্ষমতাসম্পন্ন সেতু নির্মাণের প্রকল্প প্রস্তুত হয়েছিল। পৃথক দুই প্রকল্পে সেতুগুলো পুনর্নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ছয় হাজার ৮১৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। তবে প্রধানমন্ত্রী দপ্তর পদ্মা সেতুর সমান ক্ষমতা সম্পন্ন ৩২ টন এক্সেল লোডের সেতু তৈরির নির্দেশনা প্রদান করলে ২৫ টন এক্সেল লোড ক্ষমতার প্রকল্পটি বাড়িয়ে ৩২ টন এক্সেল লোড করার কাজ চলছে। বিষয়টি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একাধিক প্রকৌশল কর্মকর্তা।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের এক প্রকৌশল কর্মকর্তা বলেন, আমাদের অঞ্চলে মোট সেতু সংখ্যা এক হাজার ২৫১টি। তার মধ্যে বড় ৮টি, মাঝারি ৮২টি এবং ছোট ৮০৩টি সেতু মেয়াদোত্তীর্ণ। এই ৮৯৩টি সেতুর লোড ক্যাপাসিটি ৩২ টন এক্সেল লোড করে প্রকল্প তৈরির কাজ চলছে। দুই অঞ্চলের প্রকল্প দুটি চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর যাবে পরিকল্পনা কমিশনে। তারপর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য যাবে একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি)। একনেকে পাস হলে বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন শেষে সেতুগুলোর নির্মাণ কাজ শুরু হবে। এরপর পাঁচ থেকে সাত বছরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হবে।

তিনি আরও জানান, সারা দেশে প্রায় ৩ হাজার ৬৫০টির বেশি রেল সেতু রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় দেড় হাজারের বেশি সেতুর আয়ুষ্কাল পেরিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। কিছু কিছু সেতুর ইটের গাঁথুনিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় এসব সেতুতে ট্রেন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ফলে ট্রেন চলাচলে সময়ানুবর্তিতা হ্রাস পাওয়াসহ নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়। এছাড়া যাত্রী সাধারণের মনে নিরাপত্তা জনিত ভীতিও তৈরি হয়। চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে ইতোমধ্যে বেশকিছু রেল সেতু পুননির্মাণ করা হয়েছে এবং আরো কিছু সেতুর নির্মাণ কাজ চলছে।

জানা গেছে, পূর্বাঞ্চলে মেয়াদোত্তীর্ণ সেতুগুলোর মধ্যে চট্টগ্রামের ষোলশহর-নাজিরহাট সেকশনের সেতুগুলো নির্মাণ করা হয় ১৯২৭ থেকে ১৯৩০ সালের মধ্যে। এ সেকশনের সেতুগুলো ৯০ বছরের বেশি পুরোনো। লাকসাম-নোয়াখালী সেকশনের সেতুগুলো নির্মাণ করা হয়েছে ১৯০০ থেকে ১৯০৩ সালে। লাকসাম-চাঁদপুর সেকশনের সেতুগুলো নির্মাণ করা হয়েছে ১৮৯২ থেকে ১৮৯৫ সালে। সে হিসেবে এই দুই সেকশনের সেতুগুলো শতবর্ষ পার করেছে আরো আগেই।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, রেলের মেয়াদোত্তীর্ণ সেতুগুলো পুনর্নির্মাণ করা হলে দুর্ঘটনার হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি সময়ানুবর্তিতা রক্ষা হবে। সেতুগুলোর লোড ক্যাপাসিটির কারণে রেলেপণ্য পরিবহণে নতুন কোন পরিকল্পনা নেওয়া যাচ্ছিলনা দীর্ঘদিন। সেতুগুলোর লোড ক্যাপাসিটি বাড়ার সাথে সাথে দেশের পণ্য পরিবহন ব্যবস্থায়ও আমূল পরিবর্তন ঘটবে।

এফএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!