বিধিনিষেধের ধার ধারে না গ্রামের লোকজন

করোনা ‘লকডাউনে’র প্রভাব নেই গ্রামে

ফটিকছড়ির বিবিরহাট বাজার বসে প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার। মানুষের ঢল বাজারের অলিগলিতে। বিবিরহাটের খানিকটা ভেতরে কাঁচাবাজার সেখানেও মানুষের ভিড়।

করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে দেশে অঘোষিত লকডাউন চলছে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া সরকারিভাবে বারণ থাকলেও গ্রামে লোকজনের চলাচল প্রায় আগের মতোই স্বাভাবিক রয়েছে। ফলে শহরের তুলনায় গ্রামে সংক্রমণের ভয়াবহতা বেশি বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সকাল, বিকেল, দুপুর ও রাত সবসময় গ্রামীণ হাট-বাজার ও বিভিন্ন সড়কের মোড়ের দোকানে এখনও মানুষের ভিড় দেখা যাচ্ছে। শহরের লোকজন সাবধান হলেও সচেতনতার লেশমাত্র নেই গ্রামীণ জনপদে। প্রশাসনের লোকজন এলে দৌঁড়ে সাময়িক ছত্রভঙ্গ হলেও পরক্ষণেই আড্ডায় মেতে উঠছে লোকজন। প্রায় প্রতিদিন হাট-বাজারগুলোতে প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে কিছু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হলেও কার্যত বিধিনিষেধের খুব একটা তোয়াক্কা করছেন গ্রামের সাধারণ লোকজন।

দিনমজুর শ্রমজীবী ও ছিন্নমুল লোকজনের জন্য সরকারিভাবে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হলেও মানুষকে ঘরে আটকানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সরকারের সব পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে বসেছে চট্টগ্রাম জেলার প্রত্যেকটি উপজেলায়। উপজেলা সদরে কিছুটা নিয়ম মানার প্রবণতা দেখা গেলেও গ্রামগুলোতে আইনকানুন মানার বালাই নেই।

জেলার বিভিন্ন উপজেলার গ্রামীণ জনপদ ঘুরে দেখা গেছে, আগের মতই ঘরের বাইরে লোকজনের ঘোরাফেরা অব্যাহত রয়েছে। গ্রামের মাঠ-ঘাট, হাট-বাজার, সড়কের মোড়ে মোড়ে চলছে জমজমাট গল্প-আড্ডা। এসব আড্ডায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে আলোচনা সমালোচনা চললেও নেই তাদের মধ্যে সচেতনতা। গ্রাম থেকে গ্রাম বা এক পাড়া থেকে আরেক পাড়ায় অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন নারী-পুরুষ। ভিক্ষাবৃত্তিও বন্ধ হয়নি। যদিও ভিক্ষুকদের বাড়ি বাড়ি ১০ দিনের খাবার পৌঁছে দেওয়ার দাবি করছে প্রশাসন। গ্রামের মাঠে ঘাটে স্কুল পড়ুয়া শিশু-কিশোরদের খেলাধুলা চলছে।

ফটিকছড়ি সদর দলিল লেখক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আবদুল মাবুদ মুন্সি বলেন, ছুটি পেয়ে গ্রামে চলে আসা ঢাকা বা চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলাফেরৎ লোকজন মানছেন না হোম কোয়ারেন্টাইন কিংবা সামাজিক দূরত্ব। ফলে গ্রামের পরিবেশ ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।

চিকিৎসকরা দাবি করছেন, সামাজিক দূরত্ব তৈরি করতে ব্যর্থ হলে করোনাভাইরাস সংক্রমণে ভয়াবহতা দেখা দিতে পারে। এখনও সময় আছে মানুষকে সচেতন করে স্বাস্থ্যবার্তা মানতে বাধ্য করতে হবে।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিকল্প নেই। বিদেশফেরতদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা গেলেও শহর থেকে গ্রামে যাওয়া মানুষগুলো মানছেন না সামাজিক দূরত্ব।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াছ হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, গ্রামের লোকজন একটু হুজুগে টাইপের, ভয়ভীতি কম। তবে প্রশাসন ধীরে ধীরে কঠোর হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালেও সেনাবাহিনীর সাথে সভা করেছি। সেনাবাহিনীও মাঠে কঠোর অবস্থানে থাকবে। শহর গ্রাম সব স্থানেই সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে সবাইকে।

এএস/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!