বিদ্যুৎ বড়ুয়াকে নিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দুই মামলার জালে দুই আওয়ামী লীগ নেতা

এক পোস্টের জের না যেতেই আরেক পোস্ট ফেসবুকে

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া এবং তার ছোট ভাই কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপকমিটির সদস্য বিদ্যুৎ বড়ুয়ার বিরুদ্ধে ফেসবুকে আপত্তিকর মন্তব্য করার অভিযোগে চট্টগ্রামের করোনা আইসোলেশন সেন্টারের প্রধান উদ্যোক্তা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক উপ কমিটির সদস্য মুহাম্মদ সাজ্জাত হোসেনসহ দুজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুটি মামলা হয়েছে।

তবে যাদের বিরুদ্ধে ফেসবুক পোস্ট, তাদের কেউই মামলাগুলোর বাদি নন। এর একটি মামলার বাদি পৌরসভার এক মেয়র এবং অন্যটি করেছেন ফটিকছড়ির এক বাসিন্দা।

মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থানায় মামলাটি করেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাতকানিয়ার পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ জোবায়ের। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একইদিন চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানায় আরও একটি মামলা দায়ের করেছেন শেখ মোহাম্মদ ফারুক চৌধুরী নামে সদ্যবিলুপ্ত চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের এক স্বেচ্ছাসেবক।

সাতকানিয়া থানায় দায়ের করা মামলার বাদি সাতকানিয়া পৌর মেয়র মোহাম্মদ জোবায়ের চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া দাদা এবং তার ছোট ভাই ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় এখানকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। পোস্টে অসম্মানজনক কথা আছে। বিশেষ করে কমেন্টে ফখরুদ্দিন নামে একজন খুব আপত্তিকর ভাষায় উনাদের বিরুদ্ধে লিখেছেন। এজন্য সংক্ষুব্ধ হয়ে আমি মামলাটা করেছি।’

সাতকানিয়া থানায় দায়ের করা মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে মো. ফখরুদ্দিন (৪৫) নামে একজনকে। সাতকানিয়ার কাঞ্চনার বাসিন্দা মোহাম্মদ ফখরুদ্দিন ১৯৮৫-৮৬ সালে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন বলে জানা গেছে।

মামলার অন্য আসামি মুহাম্মদ সাজ্জাত হোসেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক উপ-কমিটির সদস্য। তিনি বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার চট্টগ্রাম মহানগরের একাংশের সভাপতি এবং বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী।

মামলার বিষয়ে ফখরুদ্দিনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে মোহাম্মদ সাজ্জাত হোসেন সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘আমি বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। ছোটবেলা থেকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করে আসছি। বিএমডিসি স্বীকৃত ডিগ্রি না থাকার পরও নিজেকে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ দাবি করে আসছেন বিদ্যুৎ বড়ুয়া। তিনি ফিল্ড হাসপাতালের আয়-ব্যয়ের হিসাব দেবেন বলে ফেসবুকে জানালেও এখনও দেননি। নিয়ম না মেনে ৪৫ বছর বয়সে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরিচালক পদে চাকরি নিয়েছেন। এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করায় বড় ভাইয়ের ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমার বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ বড়ুয়া মামলা করিয়েছেন বলে শুনেছি। বছরখানেক আগে ফিল্ড হাসপাতালের ভেতর অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করায় একইভাবে এক ছেলের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন বিদ্যুত বড়ুয়া।’

পরে মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) দুপুরে সাজ্জাত হোসেন তার ফেসবুক টাইমলাইনে আরও পোস্ট দেন। কারও নাম উল্লেখ না করে সেখানে তিনি লিখেছেন— ‘মানবিকটি নারীপ্রীতিতেও মানবিক বটে! “মানবিকতার” নামে কোন হোটেলে,কোন বন্ধুর বাসায় বা রেস্ট হাউজে ‘বিশেষ’ সময় কাটান, কোন হোটেলে মাসাজের নামে নগ্ন উল্লাস মেতে ওঠেন ; অথবা বিশেষ মুহূর্তের ছবি প্রকাশের ভয়ে ছবি সংরক্ষণকারীকে জেলে পাঠান—সেইসব গল্প নিয়ে নির্মিত সিনেমা দেখতে অপেক্ষায় থাকুন… জয় হোক মানবিক বাবার!’

এদিকে আইনগতভাবে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো মোকাবেলা করবেন বলে জানান সাজ্জাত হোসেন।

সোমবার রাতে চট্টগ্রাম করোনা আইসোলেশন সেন্টারের প্রধান উদ্যোক্তা মুহাম্মদ সাজ্জাত হোসেনের এক ফেসবুক পোস্টে মোহাম্মদ ফখরুদ্দিন ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ও তার ভাই ডা. বিদ্যুত বড়ুয়াকে নিয়ে একটি আপত্তিকর মন্তব্য করে পরক্ষণে তা মুছে ফেলেন বলে জানা যায়। মুছে ফেলার কারণে মন্তব্যের ভাষা বা কথা কী ছিল তা জানা যায়নি।

বিদ্যুৎ বড়ুয়া ও বিপ্লব বড়ুয়ার মানহানির ঘটনায় তৃতীয় পক্ষ হয়ে মামলা দায়েরের বিষয়ে সাতকানিয়ার পৌর মেয়র জোবায়ের বলেন, ‘বিপ্লব বড়ুয়া দাদা কে কি রকম মানুষ সেটা আমরা জানি। তিনি সাতকানিয়াতে বড় হয়েছেন। আমরা উনাকে জানতাম। উনার প্রতি আমাদের ভালবাসা ও আস্থা রয়েছে। উনার বিষয়ে তার যে মন্তব্য ছিল সেটা খুব আক্রোশমূলক। এখানে শুধু বিপ্লব বড়ুয়াকে আঘাত করা হয়নি। মনে হয় জামাত শিবিরের প্রেতাত্মাই সরকারের বিরুদ্ধে আঘাত করার জন্য আওয়ামী লীগ রূপ ধারণ করেছে। স্বাভাবিকভাবে যেকোন বিষয়ে দ্বিমত থাকতে পারে তবে এটা তো আমাদের ইনহাউজ আলোচনার বিষয়।’

এক্ষেত্রে যে দুজনের বিরুদ্ধে তিনি মামলা করেছেন তারাও আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতা— এই প্রসঙ্গ তুলে এক্ষেত্রে তিনি কেন ইনহাউজ আলোচনা না করে মামলা দায়ের করেছেন এমন প্রশ্ন করা হলে মেয়র জোবায়ের বলেন, ‘এটা ফেসবুকের মত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে গেছে। সেজন্য এটা আর আলোচনার অবকাশ রাখে না।’

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!