বিদেশ যেতে মানা হুইপ সামশুর, সঙ্গে আরও ২১

চট্টগ্রামের পটিয়ার সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরীসহ ২২ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার (২৩ অক্টোবর) এ সংক্রান্ত চিঠি পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) বিশেষ পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) বরাবর পাঠানো হয়েছে। বিশ্বস্ত সূত্রে দুদক জেনেছে, এরা দেশ ছেড়ে অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তাই এ চিঠি পাঠান দুদকের এ সংক্রান্ত অনুসন্ধান দলের প্রধান ও সংস্থাটির পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন।

বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা পাওয়া ২২ জনের মধ্যে সংসদ সদস্য রয়েছেন দুজন। সামশুল হক চৌধুরী ছাড়া অপরজন হলেন ভোলা ৩ আসনের সাংসদ নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন। দুদকের এই নিষেধাজ্ঞায় সাম্প্রতিক সময়ে গ্রেপ্তার হওয়া কয়েকজনের পাশাপাশি অনুসন্ধান চলমান থাকা ব্যক্তিদের নামও রয়েছে।

দুদকের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দেশে মানিলন্ডারিংসহ বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ আছে। এ বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধানে বিষয়টির প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। বিশ্বস্ত সূত্রে দুদক জেনেছে, অভিযোগসংশ্লিষ্টরা দেশ ছেড়ে অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তাই তারা যাতে দেশ ছেড়ে যেতে না পারেন সে বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

গ্রেপ্তার যারা নিষেধাজ্ঞার আওতায়
বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া কথিত যুবলীগ নেতা এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম, মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা খালেদ মাহমুদ ভূইয়া, মোহামেডান ক্লাবের ডাইরেক্টর ইনচার্জ মো. লোকমান হোসেন ভূইয়া, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, সম্রাটের সহযোগী এনামুল হক আরমান, কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি মোহাম্মদ শফিকুল আলম (ফিরোজ), অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমানের (মিজান) বিরুদ্ধে।

নিষেধাজ্ঞায় আরও যারা
দুদকের নিষেধাজ্ঞায় নাম রয়েছে ঢাকার গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক এনু ও তার ভাই গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রুপন ভূইয়া, কেন্দ্রীয় যুবলীগের বহিষ্কৃত দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিছুর রহমান ও তার স্ত্রী সুমি রহমান, লোকমান হোসেন ভূইয়ার স্ত্রী নাবিলা লোকমান, গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল হাই, ঢাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর একেএম মমিনুল হক সাঈদ এবং এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারের।

এছাড়া বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের কর্মচারী আবুল কালাম আজাদ (আজাদ রহমান), ঢাকার কাকরাইলের জাকির এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. জাকির হোসেন ও সেগুনবাগিচার শফিক এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, অনুসন্ধানে যাদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যাবে তাদের সবারই বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। আগামী কয়েক দিনে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবেন আরও অনেকে।

চট্টগ্রামে আবাহনী ক্লাবসহ কয়েকটি ক্লাবে র‌্যাব ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চালানোর পর তার তীব্র সমালোচনা করেছিলেন সামশুল হক চৌধুরী। তিনি চট্টগ্রাম আবাহনীর মহাসচিব। জুয়া ও চলমান অভিযানে বিরুদ্ধে পিতার অবস্থান, মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতাকে মারার হুমকির অডিও নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর ছেলে নাজমুল করিম চৌধুরী শারুনও।

জুয়ার নামে ক্লাবগুলোতে অভিযান মানা যায় না’ উল্লেখ করে গত ২২ সেপ্টেম্বর সামশুল হক চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রাম ক্লাব, সিনিয়র্স ক্লাব, অফিসার্স ক্লাব সেখানেও তো তাস খেলা হয়। সেখানে তো অভিযান চালানো হয় না।’

ক্রীড়া ক্লাবগুলোর আয়ের উৎস হিসেবে তাস খেলাকে উল্লেখ করে সামশুল হক চৌধুরী ওই সময় আরও বলেন, ‘তাস খেললে বোর্ড মানি দেয় ক্লাবকে। এসব পয়সা ক্লাবের কাজে ব্যবহার হয়। ফুটবল ফেডারেশন বা অন্য কোনো সংস্থা তো ক্লাবকে টাকা দেয় না। এইভাবে যদি অভিযান চালানো হয়, তাহলে লোকজন খেলাধুলা ছেড়ে চলে যাবে।’

একই সময়ে চট্টগ্রাম আবাহনীর সভাপতি চট্টগ্রামের পতেঙ্গা আসনের সংসদ সদস্য এমএ লতিফ বলেন, ‘আমাদের ক্লাবে কে জুয়ার আসর বসাতো তার সঠিক তথ্যপ্রমাণ থাকলে পুলিশ বা আপনারা এতোদিন চুপ ছিলেন? কেউ একটা কথা বললেই তথ্যপ্রমাণ ছাড়া দায়ী করা যায় না। আমি তো মনে করি ক্লাব নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ক্লাবের নাম দিয়ে জুয়া মাদক এসব পরিচালিত হোক আমিও চাই না।’

আবাহনী ক্লাবের এই দুই শীর্ষ কর্তার ধারণা, জুয়াবিরোধী অভিযানের নামে ঐতিহ্যবাহী এই ক্লাবটিসহ চট্টগ্রামের ক্লাবগুলোর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। না বুঝে প্রভাবিত হয়ে ক্লাবের সুনামহানি করতেই এসব অপপ্রচার করা হচ্ছে।

ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িতদের সম্পদের অনুসন্ধানে ৩০ সেপ্টেম্বর কাজ শুরু করে দুদক। বিভিন্ন সংস্থা থেকে এরই মধ্যে দুদক সংশ্লিষ্ট অনেকের নাম পেয়েছে। অবৈধ সম্পদের মালিক এসব ব্যক্তি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছেন দুদক কর্মকর্তারা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে আয়কর সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!