বিদেশ মাতাচ্ছে দেশি চা, স্বাদে সেরা চট্টগ্রাম, ৬ মাসে রপ্তানি ১৫ লাখ কেজি

বাংলাদেশি চায়ের বেশ কদর এখন বিশ্বজুড়ে। পাকিস্তান, সৌদি আরব, দুবাই, ওমানসহ ইউরোপ-আমেরিকায়ও রয়েছে বাংলাদেশি চায়ের চাহিদা। দেশের ১৬৭টি বাগানে উৎপাদিত চা দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। এর মধ্যে গুণগত মানের বিবেচনায় চট্টগ্রামের বাগানগুলোতে উৎপাদিত চা শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। চট্টগ্রামে রয়েছে ২১টি চা বাগান। যা থেকে উৎপাদিত চা জাতীয় চাহিদার ১০ শতাংশ পূরণ করে।

জানা গেছে, করোনাভাইরাসে উদ্ভূত নজিরবিহীন পরিস্থিতিতেও বেড়েছে চা রপ্তানির পরিমাণ। গত দুই বছরে বাংলাদেশ যে পরিমাণ চা রপ্তানি করেছে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে রপ্তানি করেছে তার দ্বিগুণেরও বেশি। এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি বছরেই গত ১০ বছরের চা রপ্তানির পরিসংখ্যান ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন চা শিল্প সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ চা বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানায়, বাংলাদেশ থেকে ব্ল্যাক এবং গ্রিন এই দুই ধরনের চা রপ্তানি হয়। এর মধ্যে ব্ল্যাক চা রপ্তানি হয় বেশি।

চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত চা রপ্তানি করে ১.৫১ মিলিয়ন বা ১৫ লাখ ১০ হাজার কেজি। এর রপ্তানি মূল্য দাঁড়ায় ২১০ দশমিক ৩২ মিলিয়ন টাকা। এর আগে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ৬ লাখ কেজি চা রপ্তানি করে। যার রপ্তানি মূল্য ১৯৪ দশমিক ২৬ মিলিয়ন টাকা।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে হালদা ভ্যালি চা বাগান
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে হালদা ভ্যালি চা বাগান

এছাড়া ২০১৮ সালের ২০৩ দশমিক ৯৩ মিলিয়ন টাকার ৬ লাখ ৫০ হাজার কেজি, ২০১৭ সালে ৩৭৭ দশমিক ২৯ মিলিয়ন টাকার ২৫ লাখ ৬০ হাজার কেজি, ২০১৬ সালে ১৪০ দশমিক ৫৬ মিলিয়ন টাকার ৬ লাখ ২০ হাজার কেজি এবং ২০১৫ সালে ১০৫ দশমিক ১৩ মিলিয়ন টাকার ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকার চা রপ্তানি করে।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের সচিব কুলপ্রদীপ চাকমা বলেন, ২০১৯ সালে বাংলাদেশে রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন হয়। ওই বছরে অভ্যন্তরীণ চায়ের চাহিদা ৯৫ দশমিক ২০ মিলিয়ন কেজি। উৎপাদন হয় ৯৬ দশমিক ০৭ মিলিয়ন কেজি চা। ফলে ২০২০ সালে বিগত বছরগুলোর তুলনায় চা রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে।

চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী চা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে— এমএম ইস্পাহানী, আবুল খায়ের কনজ্যুমার প্রোডাক্টস, কাজী এন্ড কাজী টি এস্টেট, হালদা ভ্যালি টি এস্টেট লিমিটেড, হাজী আহমদ ব্রাদার্স, শ ওয়ালেস বাংলাদেশ, মনির শাহ এন্ড সন্স, মেঘনা টি কোম্পানি, দ্য কনসোলিডেটেড টি এন্ড ল্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ।

চা রপ্তানিকারক ইস্পাহানী টি’র ডেপুটি ম্যানেজার তাসবির হাকিম বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠান মূলত পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রে চা রাপ্তানি করে। এছাড়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য, নিউজিল্যান্ডে চা রপ্তানি করে থাকে ।

পূর্ব বাংলা ব্রোকার্সের পরিচালক আরিফুর রহমান বলেন, একসময় বাংলাদেশে চায়ের স্থানীয় চাহিদা পূরণের জন্য চা আমদানি করতে হতো। বর্তমানে বাংলাদেশ প্রচুর চা উৎপাদন হচ্ছে। দেশীয় চাহিদা পূরণ করে পাকিস্তানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। চায়ের উৎপাদন আরও বাড়ানো গেলে রপ্তানির পরিমাণও বাড়বে।

চা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, দেশে চা উৎপাদন বাড়াতে সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। ক্ষুদ্র চাষীদের চা উৎপাদনে উৎসাহী করছে চা বোর্ড। বর্তমানে ১৬৭টি চা বাগানের পাশাপাশি ৫ হাজার ক্ষুদ্র চাষী চা উৎপাদনের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে। এর সুফলও পেয়েছে চা শিল্প। ২০১৯ সালে চা শিল্পের ইতিহাসে রেকর্ড পরিমাণ ৯৬ দশমিক ০৭ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে চা রপ্তানিতেও।

হালদা ভ্যালী চা বাগানের ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাংলাদেশি চায়ের চাহিদা বাড়ছে বিশ্ব বাজারে। আমাদের চা বাগানের উৎপাদিত চাও রপ্তানি হচ্ছে বিভিন্ন দেশে। চা বাগান কর্তৃপক্ষ যদি দেশীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রপ্তানির বিষয়টি চিন্তা করে উৎপাদন বাড়ায়, তাহলে দেশের রপ্তানি খাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে চা শিল্প।

এএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!