বিটকয়েনের লেনদেন অপরাধ নয়, পুলিশকে জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক

বাজারে ১ বিটকয়েনের মূল্য এখন সাড়ে ৩২ লাখ টাকা

গত জানুয়ারিতে গাজীপুর থেকে রায়হান হোসেন ওরফে রায়হান নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১। র‌্যাব তখন দাবি করে, বাংলাদেশে বিটকয়েন প্রতারণা চক্রের মূল হোতা রায়হান এক মাসেই লেনদেন করেছেন ৩৫ হাজার মার্কিন ডলার। ১ কোটি ৭ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছেন বিলাসবহুল অডি গাড়ি। পাকিস্তানি নাগরিক সাইদের সহায়তায় বিটকয়েনের মাধ্যমে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়েছেন রায়হান— র‌্যাবের অভিযোগ ছিল এই। গত মে মাসে ইসমাইল হোসেন ওরফে সুমন নামের আরও একজনকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করার পর তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বিটকয়েন লেনদেনের অভিযোগ তোলা হয়। এক বছরে তিনি অবৈধভাবে ১২ থেকে ১৫ লাখ ডলার লেনদেন করেন— এমন তথ্যও উঠে আসে র‌্যাবের অনুসন্ধানে।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ—সিআইডি দেশে সম্পূর্ণ নতুন এই ভার্চুয়াল মুদ্রা নিয়ে সংঘটিত ‘অপরাধের’ তদন্তে নেমে মতামত জানতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংকে। ফিরতি চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক লিখিতভাবে জানালো, ক্রিপ্টোকারেন্সির মালিকানা ও লেনদেন অপরাধ নয়। গত ১৮ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের সহকারী পরিচালক শফিউল আজম ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে ব্যাংকের অবস্থান জানিয়েছেন সিআইডিকে।

ক্রিপ্টোকারেন্সি একধরনের ভার্চুয়াল মুদ্রা। ইন্টারনেটের মাধ্যমেই এই মুদ্রার লেনদেন হয়ে থাকে। বর্তমান বিশ্বে ভার্চুয়াল মুদ্রার বাজার দুই ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিভিন্ন ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ভার্চুয়াল মুদ্রাটি হচ্ছে বিটকয়েন। বিটকয়েনকে অনেকেই ভবিষ্যতের মুদ্রা বলে মনে করেন। জাপান, সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক দেশেই এখন বিটকয়েনের আইনি স্বীকৃতি আছে। এ প্রতিবেদনটি যখন প্রকাশিত (২৭ জুলাই সন্ধ্যা ৬টা) হচ্ছে, তখন মাত্র একটি বিটকয়েনের বাংলাদেশের টাকায় মূল্য দাঁড়িয়েছে ৩২ লাখ ৪৮ হাজার ৯০০ টাকা। ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকায় বাংলাদেশের সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি এর আকর্ষণীয় সুযোগের বাইরে থেকে যাচ্ছে। যদিও বাংলাদেশে যারা আউটসোর্সিং করছেন, অবৈধ হলেও তাদের কেউ কেউ বিটকয়েন কেনাবেচা করে থাকেন।

ভারতের বেঙ্গালুরুতে বিটকয়েনের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সির এটিএম বুথ
ভারতের বেঙ্গালুরুতে বিটকয়েনের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সির এটিএম বুথ

ইন্টারনেট ব্যবহার করে দুজন ব্যবহারকারীর মধ্যে নিজেদের পরিচয় প্রকাশ না করেও এটা সরাসরি আদান-প্রদান (পিয়ার-টু-পিয়ার) করা হয়। এই লেনদেনের তথ্য ব্লকচেইন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকে, কিন্তু এই মুদ্রার লেনদেন তদারকির জন্য কোন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতো কর্তৃপক্ষ থাকে না। এই মাইনারের মাধ্যমে নতুন বিটকয়েন তৈরি হয়। বিটকয়েন তৈরি বা কেনার পর তা গ্রাহকের হিসাবে জমা থাকে। পরবর্তীতে তিনি সেগুলো ব্যবহার করে পণ্য কিনতে পারেন বা বিক্রি করে দিতে পারেন। বিক্রি করলে বিটকয়েনের পরিবর্তে প্রচলিত অর্থে তা গ্রহণ করা যায়। বিভিন্ন কম্পিউটার ব্যবহার করে লেনদেন করা হলেও সেসব তথ্য কেন্দ্রীয় সার্ভারে হালনাগাদ করা হয়ে থাকে।

সিআইডিকে দেওয়া মতামতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে লেখা হয়, ‘ক্রিপ্টোকারেন্সির মালিকানা, সংরক্ষণ বা লেনদেন স্বীকৃত না হলেও এটিকে অপরাধ বলার সুযোগ নেই মর্মে প্রতীয়মান হয়।’

ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগের উদ্যোগে বাংলাদেশ ব্যাংক বিগত ২৪/১২/২০১৭ ইং তারিখে বাংলাদেশ ভাংকের ওয়েবসাইটে কৃত্রিম মুদ্রায় (যেমনঃ বিট কয়েন) লেনদেন হতে বিরত থাকার বিষয়ে সতর্কীকরণ বিজ্ঞান্তি প্রকাশ করে। বিষয়টি সমসাময়িক কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এবং যা বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে এখনও প্রচার করা হচ্ছে। বস্তুত, এরূপ ভার্চুয়াল মুদ্রায় লেনদেনের মাধ্যমে আর্থিক এবং আইনগত ঝুঁকি রয়েছে বিধায় বাংলাদেশ ব্যাংক জনস্বার্থে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘নামবিহীন বা ছদ্মনামে প্রতিসঙ্গীর সঙ্গে অনলাইনে ভার্চুয়াল মুদ্রায় লেনদেনের দ্বারা মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ সম্পর্কিত আইনের লঙ্ঘন হতে পারে।’

ক্রিপ্টোকারেন্সির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এখনও কোনো নীতিমালা প্রণয়ন করেনি উল্লেখ করে চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘বিদ্যমান ব্যবস্থাদি পর্যালোচনায় ক্রিপ্টোকারেন্সি এর মালিকানা, সংরক্ষণ বা লেনদেন স্বীকৃত না হলেও এটিকে অপরাধ বলার সুযোগ নেই মর্মে প্রতীয়মান হয়। তবে এসব ভার্চুয়াল মুদ্রায় লেনদেনের ফলাফল হিসেবে দ্বিতীয় পর্যায়ে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৪৭; সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর আওতায় অপরাধ সংঘটিত হতে পারে, যা বাংলাদেশ পুলিশ প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অধিকতর অনুসন্ধান করে দেখতে পারে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!