বিজয় র‍্যালির টিশার্ট ছিনিয়ে নিয়ে ছাত্রলীগ নেতার বাহাদুরি, বাধা দিতে গিয়ে শিক্ষক লাঞ্ছিত (ভিডিও)

প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা র‍্যালিই বের করতে দেয়নি

চট্টগ্রাম সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে বিজয় র‍্যালির জন্য করা টিশার্ট ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে কলেজ ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে। বিজয় র‍্যালির জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে তৈরি করা টিশার্ট বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) রাতে কলেজে নেওয়ার পথে একজন শিক্ষককে কলেজ গেইটে আটকে রাখা হয়। এরপর ওই শিক্ষকের কাছে থেকে ১৫০টি টিশার্ট ছিনিয়ে নিয়ে যান ওই দুই ছাত্রলীগ নেতা। এ সময় তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করায় তাদের দুর্ব্যবহারের শিকারও হন নজরুল ইসলাম নামের সেই শিক্ষক।

এদিকে ছাত্রলীগ নেতার এই কাণ্ডের কথা জানতে পেরে সকালে বিজয় দিবসের কার্যক্রমে অংশ নিতে আসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এর ফলে নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে শহীদ মিনারে ফুল দিতে হয় কলেজ কর্তৃপক্ষকে। দিনব্যাপী সকল কার্যক্রমেই এর প্রভাব পড়ে।

ছাত্রলীগের দুই নেতার এই নজিরবিহীন ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শেষ পর্যন্ত বিজয় দিবসের র‍্যালিই বের করতে দেয়নি।

যে দুই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তারা হলেন কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কাজী নাঈম ও যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান। একাধিক সূত্রে এই অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেলেও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই দুই ছাত্রনেতা।

ছাত্রলীগের দুই নেতার এই নজিরবিহীন ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শেষ পর্যন্ত বিজয় দিবসের র‍্যালিই বের করতে দেয়নি।
ছাত্রলীগের দুই নেতার এই নজিরবিহীন ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শেষ পর্যন্ত বিজয় দিবসের র‍্যালিই বের করতে দেয়নি।

তবে মহসিন কলেজের অধ্যক্ষ কামরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে নিয়ে ‘সবাইকে নিয়ে বসে এই বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া’র কথা জানিয়েছেন।

জানা গেছে, এবারের বিজয় দিবসে চট্টগ্রাম সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে বিজয় দিবসের দিনব্যাপি কর্মসূচির মধ্যে বিজয় র‍্যালির কর্মসূচিও ছিল। র‍্যালিতে অংশগ্রহণকারীদের জন্য ৫০০টি শার্ট তৈরি করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। সিদ্ধান্ত ছিল সকাল ৯টায় ক্যাম্পাসে উপস্থিত হওয়া শিক্ষার্থীদের মাঝে এসব টিশার্ট বিতরণ করা হবে।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিজয় দিবসের আগের দিন (১৫ ডিসেম্বর) রাত ৯ টার দিকে এসব টিশার্ট কলেজে পৌছে দিতে যাচ্ছিলেন কলেজের শিক্ষক নজরুল ইসলাম। এ সময় লিটন নামে একজন পিয়নও তার সাথে ছিলেন। সিএনজিচালিত ট্যাক্সিতে করে এসব টিশার্ট নিয়ে কলেজ গেইটে পৌঁছাতেই তাদের থামিয়ে সেখান থেকে ১৫০টি টিশার্ট নিয়ে নেন কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কাজী নাঈম ও যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান। এ সময় তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে নজরুল ইসলামের সাথে দুর্ব্যবহার করেন এই দুই ছাত্রনেতা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহসীন কলেজের বিজয় দিবস উদযাপন কমিটিতে থাকা একজন অধ্যাপক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কলেজ ছাত্রলীগ সূত্রেও এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে। কলেজ ছাত্রলীগের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক জয়জিৎ চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এই ঘটনা আমরা শুনেছি। স্যাররা বলেছেন। তবে আমরা দেখিনি। শুনে আমরা সাথে সাথে কলেজে গেছি। তাদের আর পাইনি। তবে এই ঘটনা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা খুবই লজ্জিত। এসবের সাথে সংগঠনের কোনো সম্পর্ক নেই। ছাত্রলীগ এসবের দায়দায়িত্ব নেবে না।’

তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কাজী নাঈম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এমন কোন ঘটনা তো ঘটেনি।’ কলেজের প্রিন্সিপাল এই ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানানো হলে কাজী নাঈম বলেন, ‘না না আমরা জানি না এমন কিছু হয়েছে। যদি হয়ে থাকে তাহলে প্রিন্সিপাল স্যারের সম্মতিক্রমে হয়েছে।’

এই বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের অধ্যক্ষ কামরুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কলেজে বিজয় দিবসের জন্য টিশার্ট আনছিলতো। সেখান থেকে জোর করে কিছু টিশার্ট নাকি নিয়ে গেছে। এটা নিয়ে সকালে আবার সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এসব কারণে সকালে বিজয় দিবসের শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়াতে দেরি হয়েছে।

অধ্যক্ষ বলেন, ‘এটা নিয়ে আমরা শিক্ষকরা সকালবেলায় বসেছি কিভাবে সমাধান করা যায়। বিকেলে আমরা আবার বসবো। বসে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো।’

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!