বিজয় দিবসের ভুল ব্যানারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যেরও ফটোসেশন

বিজয় দিবসের আলোচনা সভার ব্যানারে স্মৃতিসৌধের বদলে ছাপা হল শহীদ মিনারের ছবি। আর এ ব্যানার ধরে ফটোসেশন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, তার পিএসসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সংশ্লিষ্টরা। এমন ঘটনা ঘটেছে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি)। বিষয়টিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ‘লোকদেখানো’ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলছেন শিক্ষার্থীরা।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যানারটির দায় দিল উপাচার্যের পিএস ডেপুটি রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীর আলমের উপর।

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মাতৃভাষা দিবসে একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর রেওয়াজ আছে চবিতে। দেশজুড়েও একই রেওয়াজ। আবার একুশে ফেব্রুয়ারির আয়োজনে ব্যবহৃত ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ডসহ সকল ধরণের প্রকাশনায় শোভা পায় শহীদ মিনারের ছবি।

কিন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের ব্যানারে এই রেওয়াজ ভেঙে দেওয়া হল। এতে ছাপানো হল শহীদ মিনারের ছবি। বিজয় দিবস পালনের রেওয়াজ অনুযায়ী জাতীয় স্মৃতিসৌধ, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা স্মৃতি ম্যুরাল, জাতীয় পতাকার ছবি দেওয়া হয়ে থাকে এ ব্যানারে।

অবাক করা বিষয় হল, এ ব্যানারটি ধরে ফটোসেশন করেছেন স্বয়ং বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ড. শিরীণ আখতারও। এ ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায়ও এ ব্যানার ব্যবহার করা হয়।

এই নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে চলছে সমালোচনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে এমন ব্যানারে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকে।

জানা গেছে, বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা স্মৃতি ম্যুরালে বিজয় দিবসের আলোচনা সভার আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার।

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘বিজয় দিবসের পটভূমি আর ভাষা দিবসের পটভূমি আলাদা। দুইটার মহাত্ত্ব দুই ধরনের। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরা কতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন হলে এ ধরনের ব্যানার হয়।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘শহীদ মিনারের ছবি বিজয় দিবসের ব্যানারে দেয়ার যৌক্তিকতা তো নেই। এটি আসলে ভুল নয়। এটি হল দায়িত্বজ্ঞানহীনতা বহিঃপ্রকাশ। বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস আর মাতৃভাষা দিবসের পার্থক্য না বুঝাকে ভুল বলা যায় না, এটি দায়িত্বহীনতাই বটে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজয় দিবসের ব্যানারে অতীতে জাতীয় স্মৃতিসৌধ, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা স্মৃতি ম্যুরাল, জাতীয় পতাকার ছবি দেওয়া হতো।

এদিকে ব্যানারের এই ভুলের সমালোচনা করে শিক্ষার্থীরা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ইমাম ইমু নামের এক শিক্ষার্থী লিখেন, ‘বিজয় দিবসের ব্যানারে শহীদ মিনারের ছবি। এটা অসঙ্গতিপূর্ণ।’ আব্দুল হান্নান নামের একজন বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক একটি পেজের কমেন্ট বক্সে লিখেন, ‘পোস্টারিং করার জন্য মুক্তিযুদ্ধের একটি ছবি পায়নি? অন্তত সাভারের স্মৃতিসৌধের ছবি দিতে পারতো।’ ইকবাল হোসেন নামের আরেকজন লিখেন, ‘বাহ্, বাহ্ দারুণ তো! বিশ্ববিদ্যালয় কি বিজয় দিবস আর ভাষা দিবসের তফাৎটুকু বুঝে না?’

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন চবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক আশরাফী নিতু চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিজয় দিবসের ব্যানারে শহীদ মিনারের ছবিযুক্ত ব্যানারের পেছনে দেখা যাচ্ছে মাননীয় উপাচার্য মহোদয়কে। এটিকে শুধু ছোটো ভুল হিসেবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। এটা আসলে বর্তমানে লোকদেখানো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একটি বাস্তব চিত্র। মুখে মুখে শুধু মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে চেতনাকে ধারণ না করলে এরকম দৃশ্যেরই অবতারণা হওয়াটা স্বাভাবিক।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. আতিকুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটি একটি অনিচ্ছাকৃত ভুল। ব্যানারটি উপাচার্য মহোদয়ের পিএস ডেপুটি রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীর সাহেব তৈরি করেছেন। ওনি সবসময় এটার দ্বায়িত্বে থাকেন। ওনি আসলে বুঝতে পারেননি, পার্থক্যটা করতে পারেননি।’

এ বিষয়ে জানতে চবি উপাচার্যের পিএস জাহাঙ্গীর আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এমআইটি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!