চট্টগ্রামে বিজয়ের দিনেও সরকারি ডাকঘরে জাতীয় পতাকার অবমাননা

লাল-সবুজের আমাদের জাতীয় পতাকা মানেই শুধু এক টুকরা কাপড় নয়, এ পতাকা আমাদের রাষ্ট্রের পরিচয়, আমাদের জাতীয়তা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক।

তবে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের দিন ১৬ ডিসেম্বরেও অবমাননা হচ্ছে জাতীয় পতাকার। জাতীয় পতাকা কীভাবে ব্যবহৃত হবে, সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট আইন থাকা সত্ত্বেও তার লঙ্ঘন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সেই লাল-সবুজের পতাকার অবমাননা হচ্ছে তাও সরকারি দপ্তরে। ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির নাজিরহাট পৌরসভার সরকারি ডাকঘর অফিসে।

একদিকে বিজয়ের আগের দিন রাতেই উত্তোলন করা হয়েছে জাতীয় পতাকা এবং তাও অর্ধনমিত অবস্থায়। সূর্যোদয়ের সময় উত্তোলন ও সূর্যাস্তের সাথে সাথে নামানোর নিয়ম থাকলেও নাজিরহাট সরকারি ডাকঘরে পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে ১৫ ডিসেম্বর রাত ৮টা ২৫ মিনিটে।

ডাকঘরের এমন কর্মকান্ডকে সুস্পষ্ট জাতীয় পতাকার অবমাননা বলে উল্লেখ করেছেন মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদের সাবেক মহাসচিব মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাশেম। তবে এটাকে দুঃখজনক ও শাস্তিযোগ্য অপরাধও বলছে প্রশাসন।

গণমাধ্যমকর্মী জাহাঙ্গীর উদ্দিন মাহমুদ তাঁর ফেসবুক ওয়ালে একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন— ‘আগামীকাল ১৬ ডিসেম্বর সকালে ঘুম থেকে উঠা মুসকিল হবে, তাই রাতেই উত্তোলন করা হয়েছে জাতীয় পতাকা। এই তাহলে আমাদের দেশপ্রেম! দেখেন কেমন করে রেখেছে এই পতাকা। জাতীয় পতাকা রাখার জন্যও কি কোনো জায়গায় নেই? এটা আবার সরকারি একটা অফিস। আমরা মুখেই কেবল দেশপ্রেমের বুলি ছাড়ি। সত্যিই দুঃখজনক এবং লজ্জাকর। এ লজ্জা রাখার জায়গা কোথায়?’

এদিকে, জাতীয় পতাকা বিধিমালা-১৯৭২ (সংশোধিত ২০১০)-এ জাতীয় পতাকা ব্যবহারের বিভিন্ন বিধি-বিধান অনুযায়ী সব সরকারি ভবন, অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ভবনে সব কর্মদিবসে পতাকা উত্তোলনের বিধান রয়েছে।

এ ছাড়া কিছু অনুষ্ঠান উপলক্ষে যেমন: ঈদে মিলাদুন্নবী, স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবস এবং সরকার প্রজ্ঞাপিত অন্য যেকোনো দিবসে বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি ভবন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনের প্রাঙ্গণে ও কনস্যুলার কেন্দ্রগুলোয় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা বাধ্যতামূলক।

আইনের ৫ ধারায় বলা হয়েছে, জাতীয় পতাকার প্রতি অবমাননা প্রদর্শন করা বা জাতীয় পতাকার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন না করলে ওই ব্যক্তিকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। ২০১০ সালের জুলাই মাসে এই আইন সংশোধিত হয়। এই সংশোধনীতে সর্বোচ্চ ২ বছর পর্যন্ত শাস্তি এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়।

না জেনে, না বুঝে আর অতি উচ্ছ্বাসে যারা পতাকা ব্যবহারবিধি লঙ্ঘন করেন, তাদের অপরাধের মাত্রা বিবেচনা করে এই শাস্তির বিধান যথাযথ হতে পারে। তবে কোনো প্রতিষ্ঠান যদি বাণিজ্যিক কোনো প্রচারণায়, বিজ্ঞাপনে জাতীয় পতাকার ব্যবহার বিধিবহির্ভূতভাবে করে থাকে, তার জন্য ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ফটিকছড়ির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সায়েদুল আরেফিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটা সত্যিই দুঃখজনক। আমি এখনই খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, জাতীয় পতাকা শুধু কাপড় নয়, আমাদের সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রতীক। জাতীয় পতাকার অবমাননা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এসএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!