বিকাশে প্রতারিত হয়ে অপমান ভয়ে তরুণীর আত্মহনন

মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের অর্থ নিয়ে প্রতারণার ঘটনা ঘটছে হরহামেশাই। এবার প্রতারণার শিকার হয়ে আত্মহনন করলেন শারমিন আক্তার তানিয়া নামের এক তরুণী।

জানা গেছে, স্থানীয়দের দেওয়া সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার (২৫ মে) রাত আটটায় চট্টগ্রামের সিটি গেট এলাকার বিশ্বব্যাংক কলোনির এল ব্লকের আফসার উদ্দিনের বাড়ির নিচতলা থেকে তানিয়ার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে আকবরশাহ থানা পুলিশ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থী তানিয়া লেনদেনের জন্য নিজের মুঠোফোনে বিকাশ ব্যবহার করতেন। তার কাছে একজন ফোন করে জানান তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ পুরস্কার জিতেছেন। তবে এ অর্থ পেতে হলে তাকে নিজের নম্বরে ১৪ হাজার ৫০০ টাকা ‘ক্যাশ ইন’ করতে হবে। এ সময় ফোন কলে থাকা ব্যক্তি তানিয়ার বিকাশের প্রয়োজনীয় তথ্যও নিয়ে নেন। তানিয়া ভেবেছিলেন নিজের মোবাইলেই টাকা পাঠাচ্ছেন সুতরাং এতে ঝুঁকির কিছু নেই। তানিয়া দোকানিকে টাকা পরিশোধ না করেই নিজের মোবাইল নম্বরে অর্থ ক্যাশ ইন করেন। অর্থ পরিশোধ করতে না পারায় দোকানি তাকে দোকানেই বসিয়ে রাখেন। এ সময় তাকে বিভিন্নভাবে অপমান করা হয়।

রোববার (২৬ মে) দুপুরে সরেজমিন গেলে বিকাশ এজেন্ট মেসার্স মায়ের দোয়া ইলেকট্রিকে গিয়ে দোকানটি বন্ধ পাওয়া যায়। যে ব্যক্তির মধ্যস্থতায় তানিয়া দোকানের আটকাবস্থা থেকে মুক্ত হয়েছিলেন সেই শরীফুল আলম জানান, ‘শনিবার (২৫ মে) সকাল ১১টার দিকে তানিয়া ওই দোকানে গিয়ে নিজের বিকাশ একাউন্টে সাড়ে ১৪ হাজার টাকা ট্রান্সফার করেন। দোকানদার টাকা না নিয়েই টাকা ট্রান্সফার দিয়েছিলেন। তানিয়া টাকা দিতে না পারায় দোকানের কর্মীরা তাকে চেয়ারে বসিয়ে রাখেন। আমাকে খবর দেওয়ার পর আমি স্থানীয় সওদাগর নাসিরকে সঙ্গে নিয়ে আসি। নাসির বলল তানিয়াদের পরিবার আমার দোকানের নিয়মিত কাস্টমার। এই বলে তিনি তানিয়ার পিতার সাথে ফোনে কথা বলেন। তার পিতা জানান উনি গ্রামে আছেন। সন্ধ্যায় শহরে পৌঁছালে টাকা পরিশোধ করবেন। তখন তানিয়ার দুটি মোবাইল ফোন দোকানদারের জিম্মায় দিয়ে তার টাকার জিম্মা আমি নিলাম। এরপরই তাকে বাসায় পাঠিয়ে দিলাম। সন্ধ্যায় শুনি মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে।’

রোববার (২৬ মে)রাত আটটায় তানিয়ার পিতা হারুন চৌধুরী জানান, ‘তারাবির নামাজের পর তার লাশ দাফন করা হবে। তিনি শহরে ফিরলে মামলা করবেন বলেও জানান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে।’

দোকানে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কামরুল ইসলাম জানান, তানিয়াকে যখন টাকার জন্য দোকানে বসিয়ে রাখা হয়েছিল তখন এলাকার অনেক নারী পুরুষ জটলা পাকিয়ে ছিল। তাদের মাঝে কেউ কেউ অশোভন মন্তব্য করেছিলেন। তবে এ বিষয়টি আরেক প্রত্যক্ষদর্শী মিজানুর রহমান অস্বীকার করেন।

তানিয়ার প্রতিবেশী চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া তানভীর আফসার জানান, যা শুনেছি তাতে মনে হয়েছে মেয়েটি হয়তো অপমান আর পিতার শাস্তির ভয়ে আত্মহত্যা করতে পারে।

এফএম/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!