বিকল্প ছায়া মন্ত্রিসভা গঠন করবে সিপিবি

চট্টগ্রামের বিভাগীয় সমাবেশে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম

‘গণতন্ত্রহীনতা ও লুটপাট রুখো: দেশ বাঁচাও’— এ স্লোগানকে সামনে রেখে দেশরক্ষা অভিযাত্রা কর্মসূচি শুরু করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর লালদিঘী মাঠে প্রথমবারের মত বিভাগীয় সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, এখন ক্ষমতাসীনরা একত্রিত হয়েছে লুটপাটে। বঙ্গবন্ধুর নাম ভাঙ্গিয়ে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। ক্ষমতাসীনরা মুক্তিযুদ্ধকে সামনে এনে সমানতালে লুটপাট করে যাচ্ছে। এদের রুখতে তাই মুক্তিযুদ্ধের সব শক্তিকে একত্রিত হতে হবে। সবাইকে এক কাতারে আসতে হবে।

উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের শিল্পীদের জাতীয় ও গণসঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় জনসভা। সিপিবি চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়ক কমরেড মৃণাল কান্তি চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিভাগীয় এই সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এবং সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম। সভা পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহা।

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে স্বৈরাচারের হাত থেকে রক্ষায় আন্দোলনে অবতীর্ণ হচ্ছি। তাই কর্মসূচি নিয়ে জনগণের সামনে এসেছি। আমরা আপনাদের কাছ থেকে জানতে চাই পাকিস্তান সরকারের হাত থেকে দেশ রক্ষা করতে আপনারা আন্দোলনে নেমেছিলেন। জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে আমরা পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলাম, দেশ মুক্ত করেছি। কিন্তু আজকের দেশ কি ১৬ কোটি মানুষের জন্য মুক্ত?’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন বাংলার সম্পদ বিদেশে পাচার হয়ে যায়। তখন দেশকে বাঁচাতে সবাই যুদ্ধ করেছিলাম। কিন্তু গত দশ বছরে ৯ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। দেশের সম্পদ রক্ষায় যদি ১৯৭১ সালে সংগ্রাম হয়ে থাকে, এখন হবে না কেন?’

সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বলেন, ‘আমাদের দলের ভেতরে, বামপন্থীদের ভেতরে যথেষ্ট দক্ষ, অভিজ্ঞ ও পরীক্ষিত লোক আছে। তাদের দিয়ে বিকল্প ছায়া মন্ত্রিসভা গঠনের কাজও আমরা শুরু করেছি। একইসঙ্গে গ্রামে-গ্রামে, সারা দেশে স্থানীয় ও জাতীয় দাবিতে আন্দোলন জোরদার করব।’

কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড শাহ আলম বলেন, ‘সামনে সুবর্ণ জয়ন্তী, মুজিববর্ষ— তা আমরা জানি। কিন্তু দেশের মানুষ জানতে চায় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি কেন? পেয়াঁজ ২০০ টাকা ছাড়িয়েছে, রসুনের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। জনতা খাবার পায় না, অথচ উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে। বলা হয় উন্নয়ন চান নাকি গণতন্ত্র চান? আমরা বলি দুটোই চাই। কিন্তু কার উন্নয়ন হয়েছে? চাকরি নাই, চাকরি হচ্ছে না। এই বাংলাদেশ আমরা চাইনি। আজকে বৈষম্যের উন্নয়ন হয়েছে। শোষণের উন্নয়ন চলছে। এই লুটপাটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলতে হবে। দেশের শেয়ারবাজার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক যেই বিনিয়োগ করছে লুটপাট হয়ে যাচ্ছে। আজ লুটপাটের উন্নয়ন চলছে। এমন উন্নয়ন আমরা চাই না।’

তিনি বলেন, ‘যে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিল, যে আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর, যে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করেছিল— সেই আওয়ামী লীগই আজ দেশের মানুষকে ভয় পায়, ভোটকে ভয় পায়। এই লুটপাটের বিরুদ্ধে লড়াই গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষার লড়াই, স্বাস্থ্যের লড়াই, বৈষম্যের লড়াই— আসুন আমরা সবাই মিলে লড়াই গড়ে তুলি।’

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য লক্ষ্মী চক্রবর্তী ও আবদুল্লাহ আল কাফী রতন, নোয়াখালী জেলার সভাপতি শহীদুল্লাহ বাবুল, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার সভাপতি সাজেদুল ইসলাম, ফেনী জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুহিবুল হক রাসেল, রাঙামাটি জেলার সাধারণ সম্পাদক অনুপম বড়ুয়া শঙ্কর, চাঁদপুর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন মিয়াজী, কুমিল্লা জেলার সাধারণ সম্পাদক পরেশ কর, কক্সবাজার জেলার সাধারণ সম্পাদক নাসিরউদ্দিন আহমেদ, লক্ষীপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক সুদেব রঞ্জন শর্মা প্রমুখ।

এএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!