বিএম ডিপোর বিস্ফোরণে নিহত শাহাদাতের মা ছেলে হারিয়ে পাগলপ্রায়

‘গত রোজার ঈদেও আমার ছেলের সাথে ঈদ করেছি। আমার জন্য নতুন শাড়ি নিয়ে এসেছে বাজার থেকে। রোজার ঈদেও ছেলে বলছে— এবার কোরবানি করবে, অথচ কোরবানির আগে আমার ছেলে নেই।’ কথাগুলো এভাবে বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত শাহাদাত হোসেনের (২৬) মা জাহানারা।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে মুসলমানদের ঘরে ঘরে ঈদের আমেজ শুরু হয়েছে। কিন্তু ঈদের এই আনন্দ বা আমেজ নেই নিহত শাহাদাতের পরিবারে। আর ছেলের স্মৃতি আঁকড়ে ধরে বারবার এদিক-সেদিক ঘুরে ঘুরে ছেলেকে খুঁজছেন মা, কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। পরিবারের উপার্জনকারী একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায়।

জানা গেছে, গত ৪ জুন রাতে সীতাকুণ্ড বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ঘটনার দিন কাভার্ডভ্যানের মাল আনলোড করতে বিএম ডিপোতে যায় শাহাদাত। এতে বিস্ফোরণে তিনি গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানে পরের দিন ৫ জুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

শাহাদাত হোসেন মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের মধ্যম সোনাপাহাড় এলাকার ননাই মিয়া মীর বাড়ির শাহ আলম ও জাহানারা দম্পত্তির দুই মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে সবার বড়। একবছর আগে শাহাদাতের বাবা শাহ আলম অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর সংসারের হাল ধরতে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে পেশা হিসেবে বেছে নেন কাভার্ডভ্যান চালানো।

নিহতের ছোট ভাই আমজাদ হোসেন বলেন, আমরা দুই ভাই বন্ধুর মত ছিলাম। অনেক কিছু শেয়ার করতাম। ভাইয়া আমার সবসময় খোঁজখবর নিতো। আজকে ভাইয়াকে হারিয়ে আমি একা হয়ে গেছি। আমার পড়াশোনার খরচ সব ভাইয়া দিতো। এখন ভাইয়া নেই। কে আমার দেখাশোনার খরচ দেবে?

চাচাতো ভাই আরিফ বলেন, ‘পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি ছিল শাহাদাত। এখন আমাদের পরিবারে কোনো ঈদের আনন্দ নেই। গত রমজানের ঈদেও একসাথে বন্ধুর মত সময় কাটিয়েছি। আর কখনও যে একসাথে আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়া কিংবা আড্ডা দেয়া হবে না এটা মানতে পারছি না।’

আরিফ আরও বলেন, ‘ঘটনার পর বিএম কন্টেইনার ডিপো কর্তপক্ষ ক্ষতিগ্রস্থদের সহযোগিতা করার কথা বললেও আমরা এখনো পযন্ত কোন সহযোগিতা পায়নি উল্টো বিভিন্ন কাগজপত্র নিয়ে আমাদের আরও হয়রানি করেছে তারা।’

যোগাযোগ করা হলে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘সীতাকুণ্ড বিএম কন্টেইনার ডিপোতে নিহত শাহাদাতের পরিবারকে শ্রম অধিদপ্তর থেকে দুই লাখ টাকা সহযোগিতা করা হয়েছে। তবে ডিপো কর্তৃপক্ষ থেকে যে টাকা দিবে বলেছে সেটা সম্পর্কে এখনও কোন কিছু আমি পায়নি। বিষয়টি নিয়ে আমি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সাথে যোগাযোগ করবো।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!