বায়েজিদের ত্রাস শিবিরের মুন্না আবারও বেপরোয়া, থেমে নেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড—অস্ত্রের মহড়া

চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকায় হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন মামলার আসামি বেলাল উদ্দিন মুন্নার সন্ত্রাসী কার্যকলাপে অতীষ্ঠ হয়ে ওঠেছে সেখানকারন জনগণ। জামায়াত-শিবিরের এই ক্যাডার প্রকাশ্যে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যকলাপে নেতৃত্ব দিলেও রহস্যজনক কারণে পুলিশ তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

১৯৯৯ সালের ২ জুন পাঁচলাইশের চালিতাতলী এলাকায় জামায়াত-শিবিরের হাতে খুন হন আওয়ামী লীগ নেতা, তৎকালীন কমিশনার লিয়াকত আলী খান। এ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি বেলাল উদ্দিন মুন্না। শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের সহযোগী মুন্নার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের শিকার লোকজন অভিযোগ করেছেন, শিবির ক্যাডার মুন্নার রয়েছে পালিত ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী বাহিনী। সেই বাহিনী দিয়ে নিরীহ মানুষের উপর চালানো হয় তাণ্ডব। এলাকার নিরীহ মানুষের জমি দখল, মোটা অংকের চাঁদাবাজি, ছিনতাই, অপহরণ, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধের মূল হোতা এ সন্ত্রাসী বাহিনি। চাঁদা না দিলে মারধর, হত্যার হুমকিসহ চালানো হয় অস্ত্রের মহড়া। তাদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ কিংবা মুখ খুলতে পারে না।

জানা যায়, শিবির ক্যাডার বেলাল উদ্দিন মুন্না আওয়ামী লীগ নেতা লিয়াকত আলী খান হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ছিলো। সে সময় লিয়াকত হত্যাকাণ্ডের পর গা ঢাকা দিতে নাম পাল্টে পাসপোর্ট তৈরি করে পালিয়ে যায় সৌদি আরবে। সেখান থেকে আবার দীর্ঘদিন আরব আমিরাতে পালিয়ে ছিলো। পরে আওয়ামী লীগ নেতা লিয়াকত হত্যা মামলা নিষ্পত্তি হলে দেশে ফিরে আসে।

আরও জানা যায়, দেশে ফিরে প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিয়ে পরিবারের অমতে আরেকজনকে বিয়ে করে। বিয়ের পর নিজের বাবার কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা দাবি করে এবং বাবার সম্পত্তি নিজের নামে লিখে দিতে বাবার উপর চালানো হয় ব্যাপক নির্যাতন। এতে আহত হন তার মাও। এসময় বাবা মাকে অস্ত্র ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দেয়।

ঘটনার পর তার বাবা ছেলে মুন্না, তার স্ত্রী জেসমিন ও তার বন্ধু সুমনকে আসামি করে তিনজনের নামে বায়েজিদ থানায় মামলা দায়ের করেন। বাবার করা ওই মামলায় গ্রেপ্তার হন বেলাল উদ্দিন মুন্না। এই মামলায় দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলো এ সন্ত্রাসী। সে সময় পুলিশ জানায়, মুন্না হত্যা মামলার আসামি। অপরাধ কর্মকাণ্ড থেকে কিছুতেই তাকে থামানো যাচ্ছে না। চাঁদার দাবিতে হত্যার উদ্দেশ্যে বাবার ওপরও হামলা করেছে সে। তাই নিরুপায় হয়ে তার বাবা মামলা করলে সেই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ থানার ওয়াজেদিয়া এলাকার বাসিন্দা ভুক্তভোগী তাওসিফ আহম্মেদ অভিযোগ করে বলেন, গত ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনের দিন চাইল্ড হেভেন গ্রামার স্কুলের ভোট কেন্দ্রে নৌকার পক্ষে কাজ করছিলাম। এসময় হঠাৎ তার ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা অস্ত্র নিয়ে ভোট কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করে। তখন আমাদের নৌকার এজেন্ট নুরুল ইসলামকে বেধড়ক মারধর করা হয়। এ বিষয়ে তাদের সাথে আমার তর্কাতর্কি হয়। একপর্যায়ে তারা পালিয়ে যায়। ওই দিনের ঘটনার জের ধরে গত রোববার (১৪ মার্চ) সকালে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। পরে কিল, ঘুষি, লাথি মেরে ফেলে দেয়। আমি মাটি থেকে উঠতে চাইলে তার পকেট থেকে ছুরি বের করে আমাকে আঘাত করে চলে যায়। এসময় আমি চোখে মারাত্মকভাবে আহত হয়। তখন সাথে সাথে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিই।

তিনি আরও বলেন, আমাকে হুমকি দিয়ে তিনি বলেন। আমি রাস্তায় বের হতে পারবো না। যদি বের হয় প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এছাড়া আমি যদি এই বিষয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করি বা থানা পুলিশকে অবহিত করি তাহলে আমার পরিবারের সদস্যদেরও প্রাণে মারার হুমকি দেয়।

পুলিশ সুত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর রাত ১টার দিকে মুন্নার নেতৃত্বে বায়েজিদ থানার শেরশাহ ওয়াশ লাইন লিমিটেড গেইট সংলগ্ন সেন্ট্রাল কমান্ডো গ্যারেজের সামনে রাস্তার উপর বোমা ও আগুন জ্বালিয়ে তান্ডব চালানো হয়। এসময় বায়েজিদ থানা পুলিশ তাদের ধাওয়া করে ছালে আহম্মদ জিয়া প্রকাশ S.H জিয়া ও মো. আলমগীর হোসেন নামে দুইজনকে আটক করে। পরে তারা ব্যাপক জিঙ্গাসাবাদে স্বীকার করে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের নেতা কর্মীরা এই তাণ্ডব চালায়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বেলাল উদ্দিন মুন্নাসহ ৪৩ জনের নামে মামলা দায়ের করেন বায়েজিদ থানার এএসআই মো. আনছারুল করিম।

হাটহাজারী থানার দক্ষিণ মার্দাশা থানার বাসিন্দা মোহাম্মদ ফোরকান। ১৯৯৯ সালে তিনি জমি কিনে চারপাশে বাউন্ডারি করে ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দেন। এছাড়া বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্ল্যান পাস করানো হয়। বিদেশ থেকে এসে মুন্না ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ৩ তারিখ আমার নিজ নামে ক্রয়কৃত সম্পত্তি জবর দখল করার চেষ্টা করে। ওই দিন রাতে বেলাল উদ্দিন মুন্নার নেতৃত্বে তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে অস্ত্র মহড়া করে জায়গা দখল করতে আসে। তাদের বাধা প্রদান করলে ঘরের ভাড়াটিয়া ও কেয়ারটেকার উপর চড়াও হয়ে হুমকি ধামকি দিতে থাকে। একসপ্তাহর মধ্যে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। ঘটনা শুনে মোহাম্মদ ফোরকান বিদেশ থেকে দেশে ফিরে আসি। বেলাল উদ্দিন মুন্না আমাকে ফোনে কল করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৫০ লাখ টাকা দিতে বলে। না হলে আমার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলাসহ হত্যার হুমকিও দিয়েছিলো।

এবিষয়ে বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘গত সিটি নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে সহিংসতার জের ধরে তাওসীফ আহমেদ নামে একজনকে গুরুতর আহত করেন বেলাল উদ্দিন মুন্না। তার নামে আমাদের কাছে অভিযোগ করেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এএন/কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!